কমপক্ষে ৪০ আসন নিয়ে বিরোধী দল হতে চায় জাপা
জি এম কাদেরের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টি (জাপা) এবার ৪০ থেকে ৫০টি আসন নিয়ে সংসদে প্রধান বিরোধী দলের ভূমিকা পালন করতে চায়। এ লক্ষ্যে দলটির নীতিনির্ধারণী নেতারা ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের সঙ্গে আসন সমঝোতার জন্য দেনদরবার অব্যাহত রেখেছেন। আজ শুক্রবার বিকেলে দুই পক্ষের বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে।
তবে গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল একজন নেতা প্রথম আলোকে জানিয়েছেন, তাঁরা একটি নির্দিষ্টসংখ্যক আসনে সমঝোতার কথা ইতিমধ্যে জাপার নেতাদের জানিয়ে দিয়েছেন।
আজ দুই পক্ষের বৈঠকে আসন সমঝোতা চূড়ান্ত হতে পারে। এর আগে দুই দফা বৈঠকে আওয়ামী লীগ ও জাপার নেতারা নির্বাচনের কৌশল, আওয়ামী লীগ-দলীয় স্বতন্ত্র প্রার্থীদের প্রত্যাহার করাসহ আসন বণ্টন নিয়ে ঐকমত্যে পৌঁছাতে পারেননি। যদিও কোনো পক্ষই প্রকাশ্যে সমঝোতার কথা স্বীকার করে না।
নির্বাচন সুষ্ঠু করার জন্য আমরা দুটো দলই সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে আমরা একটা দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে চাই। যেহেতু আওয়ামী লীগ রাজনৈতিকভাবে বড় দল এবং তারা নির্বাচন করছে, আমরাও নির্বাচন করছি। এই দুটি দলের মূলত প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে। সে জন্য আমরা একটা রিলেশন ডেভেলপ (সম্পর্ক উন্নয়ন) করছি।জাপার মহাসচিব মুজিবুল হক (চুন্নু)
জাপার নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা জানান, বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট বিবেচনায় তাঁরা গতবারের চেয়ে এবার আরও বেশিসংখ্যক আসন নিয়ে সংসদে যেতে চাইছেন। তাঁদের দাবি ৪০ থেকে ৫০টি আসন। বিগত একাদশ জাতীয় সংসদে দলটির আসন ছিল ২২টি।
যদিও গত তিনটি সংসদ নির্বাচনের ফলাফল বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ভোটের মাঠে জাপার সে রকম জনসমর্থন নেই। গত তিনটি নির্বাচনে যেসব আসনে জাপা জয় পেয়েছিল তার প্রায় কোনোটিতেই আওয়ামী লীগের প্রার্থী ছিল না। আওয়ামী লীগের সঙ্গে সমঝোতা ছাড়া যেসব আসনে জাপা নির্বাচনে লড়েছে সেখানে তাদের প্রায় ৮৬ শতাংশ প্রার্থী জামানত হারিয়েছেন। শেষ তিনটি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টির ভোটের হারও ক্রমে কমতে দেখা যাচ্ছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা বলছেন, এখন জাতীয় পার্টির অবস্থা আগের তুলনায় খারাপ। সমঝোতা ছাড়া এককভাবে নির্বাচন করে ভালো ফল করার মতো সামর্থ্য তাদের নেই। তাই নৌকা প্রতীকের প্রার্থী তুলে নিয়ে ‘একতরফা’ ভোট করা ছাড়া দলটির কারও জেতার সম্ভাবনা কম।
দলটির নেতারা মনে করেন, সংসদে বিরোধী দলগুলোর আসনসংখ্যা ৭০ থেকে ৭৫ হলে সেটি গণতান্ত্রিক বিশ্বের দৃষ্টি কাড়বে।
গত নির্বাচনে সমঝোতার মাধ্যমে রাজধানী ঢাকায় দুটি আসনে জাপার দুজন নেতা সংসদ সদস্য হন। এবারও সমঝোতার তালিকায় জাপার পক্ষ থেকে সে দুটি আসন রয়েছে। দুটিতেই আওয়ামী লীগের মনোনীত এবং দলটির একাধিক স্বতন্ত্র প্রার্থী রয়েছেন। এর মধ্যে একটি আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী পবিত্র ওমরাহ হজ পালনে সৌদি আরব গেছেন। কিন্তু ১৭ ডিসেম্বর মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের আগমুহূর্তে দেশে তাঁর অনুপস্থিতির ঘটনায় অস্থির হয়ে পড়েছেন সে আসনে জাপার প্রার্থী। কারণ, আওয়ামী লীগের সঙ্গে সমঝোতা হলে তিনি কখন দেশে পৌঁছাবেন, কখন প্রার্থিতা প্রত্যাহার করবেন—সে উৎকণ্ঠায় রয়েছেন জাপার প্রার্থী। ইতিমধ্যে তিনি তাঁর একাধিক ঘনিষ্ঠজনের কাছে আশঙ্কার কথা জানিয়ে উৎকণ্ঠা প্রকাশ করেছেন।
এ রকম একটা পরিস্থিতিতে জাপা কেন এত আসন চাইছে, জানতে চাইলে দলটির উচ্চপর্যায়ের একজন নেতা প্রথম আলোকে বলেন, এই নির্বাচন (দ্বাদশ সংসদ) এমনিতেই বিতর্কিত। যদিও এ নির্বাচনে সাংবিধানিক এবং প্রক্রিয়াগত কোনো ত্রুটি নেই। তবু এবারও আওয়ামী লীগ যদি ২৮০টি আসন নেয়, আর বিরোধী দলের সবাইকে ২০টি আসন দেয়, সেটি আরও বিতর্কিত হবে।
জাপার নীতিনির্ধারণী নেতাদের ব্যাখ্যা হচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্রসহ গণতান্ত্রিক বিশ্বের চাহিদা অনুযায়ী অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হচ্ছে না। ফলে আগামী নির্বাচনে সবার নজর থাকবে চারটি বিষয়ের দিকে। সেগুলো হলো নির্বাচনের দিন সহিংসতা, ভোটে কারচুপি, কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি এবং সংসদের গঠনটা কেমন হয়, সেদিকে। অর্থাৎ সংসদে বিরোধীদের অবস্থান কী দাঁড়ায়, সেটি।
দলটির নেতারা মনে করেন, সংসদে বিরোধী দলগুলোর আসনসংখ্যা ৭০ থেকে ৭৫ হলে সেটি গণতান্ত্রিক বিশ্বের দৃষ্টি কাড়বে। বিশেষ করে বিরোধীদলীয় সংসদ সদস্যরা সংসদের প্রথম অধিবেশনেই স্পর্শকাতর কিছু বিষয়ের অবতারণা করে নিজেদের কার্যকর বিরোধী দল হিসেবে প্রকাশ করতে পারেন। এটি করা গেলে অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন প্রশ্নে জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক বিশ্বের কঠোর অবস্থানে কিছুটা হলেও নমনীয়তা আসতে পারে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জাপার উচ্চপর্যায়ের একজন নেতা গত রাতে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা বিষয়টি আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল নেতাদের বুঝিয়েছি, তাঁরা বুঝেছেন। যাঁরা আমাদের নির্বাচন নিয়ে মাথা ঘামান, তাঁরাও এমনটি চান। এখন আওয়ামী লীগের নেতারা প্রধানমন্ত্রীর কাছে যাবেন। তিনি চাইলে হবে, না চাইলে হবে না।’
তবে সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানিয়েছে, ২৫ থেকে ৩০টি আসনে জাপার সঙ্গে সমঝোতা হতে পারে।
গতকাল জাপার বনানীর কার্যালয়ে দলটির মহাসচিব মুজিবুল হক (চুন্নু) এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘নির্বাচন সুষ্ঠু করার জন্য আমরা দুটো দলই সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে আমরা একটা দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে চাই। যেহেতু আওয়ামী লীগ রাজনৈতিকভাবে বড় দল এবং তারা নির্বাচন করছে, আমরাও নির্বাচন করছি। এই দুটি দলের মূলত প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে। সে জন্য আমরা একটা রিলেশন ডেভেলপ (সম্পর্ক উন্নয়ন) করছি।’