তারেক রহমান যেদিন পা দেবেন, সেদিন যেন দেশ কেঁপে ওঠে: মির্জা ফখরুল

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। আজ বৃহস্পতিবার সকালে রাজধানীর ফার্মগেটের কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশ (কেআইবি) মিলনায়তনেছবি: প্রথম আলো

আগামী নির্বাচনে বিএনপিকে পুরোপুরিভাবে জয়লাভ করতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

তারেক রহমান খুব শিগগির দেশে আসবেন বলে উল্লেখ করেন মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, তারেক রহমান যেদিন বাংলাদেশে পা দেবেন, সেদিন যেন সারা বাংলাদেশ কেঁপে ওঠে। সেদিন গোটা বাংলাদেশের চেহারা বদলে দিতে চায় বিএনপি।

আজ বৃহস্পতিবার সকালে রাজধানীর ফার্মগেটের কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশ (কেআইবি) মিলনায়তনে বিএনপি আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে মির্জা ফখরুল এ কথা বলেন। বিজয়ের মাস উপলক্ষে ‘দেশ গড়ার পরিকল্পনা’ শীর্ষক এই অনুষ্ঠানে বিএনপির বিভাগীয় সাংগঠনিক ইউনিটগুলোর হাজারের বেশি নেতা অংশ নিচ্ছেন।

মির্জা ফখরুল বলেন, অনেক বাধা–বিপত্তি আসবে। বিএনপির বিরুদ্ধে প্রচারণা চলছে, সেটি চলতে থাকবে। সবকিছু কাটিয়ে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে হবে। বিএনপি কোনো দিনই পরাজিত হয়নি, পরাজিত হবে না। বিএনপি এ দেশের জনগণের দল, মুক্তিযুদ্ধের দল। বিএনপিকে সাফল্য দেবে ইস্পাতদৃঢ় ঐক্য ও জাতীয়তাবাদী দর্শন, অন্য কিছু সফলতা দেবে না।

অনুষ্ঠানে মির্জা ফখরুল বলেন, আজ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হবে। এই নির্বাচনের মধ্য দিয়ে নতুন বাংলাদেশে নতুন নেতৃত্ব সৃষ্টির সুযোগ এসেছে। জনগণকে সঙ্গে নিয়ে প্রতিনিধিত্বশীল সংসদ গঠনের সুযোগ এসেছে, যা বাংলাদেশকে নতুন দিগন্তের দিকে নিয়ে যাবে। এর নেতৃত্বে থাকবেন তারেক রহমান।

দেশকে পেছনে টেনে নিয়ে যাওয়ার শক্তির বিরুদ্ধে বিএনপি নেতা-কর্মীদের লড়াই করতে হবে বলে মন্তব্য করেন মির্জা ফখরুল। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বিএনপির নেতা-কর্মীদের সামনে এগিয়ে যাওয়ার শক্তিকে জয়যুক্ত করতে হবে। এই লড়াইয়ে বিএনপির নেতা-কর্মীদের শক্তিশালী মনোভাব নিয়ে এগোতে হবে।

বিএনপির মহাসচিব বলেন, আগামী নির্বাচন আওয়ামী লীগ আমলের নির্বাচন নয়। এই নির্বাচন সত্যিকার অর্থে নিরপেক্ষ নির্বাচন হতে হবে। এই নির্বাচনে বিজয়ী হতে হলে জনগণের ভালোবাসা আদায় করতে হবে। মানুষের মন জয় করে তাদের ভোটকেন্দ্রে আনতে হবে, বিএনপির পক্ষে ভোট দেওয়াতে হবে।

আগামী নির্বাচনের জন্য কে বিএনপির মনোনয়ন পেলেন, আর কে পেলেন না, তা নিয়ে এখন চিন্তার দরকার নেই বলে মন্তব্য করেন মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, জনগণকে বিএনপি কী দেবে, সেটি সামনে নিয়ে আসতে হবে।

মির্জা ফখরুল বলেন, তরুণদের নেতৃত্বে গঠিত নতুন একটি দল বলেছে, বিএনপি সংস্কার নিয়ে কাজ করে না; কিন্তু এই বিএনপিই সংস্কারের জন্ম দিয়েছে।

এ প্রসঙ্গে জিয়াউর রহমানের বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা, পঁচাত্তর-পরবর্তী সময়ে মুক্ত গণমাধ্যম সৃষ্টি, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা, খালেদা জিয়ার সময়ে নারীদের শিক্ষা, যুবকদের কর্মসংস্থান, অর্থনীতির আধুনিকায়নসহ বেশ কিছু বিষয় তুলে ধরেন বিএনপির মহাসচিব।

বিএনপির গত সাড়ে ১৫ বছরের লড়াই এখন শেষ দিকে বলে উল্লেখ করেন দলটির মহাসচিব। তিনি বলেন, এই লড়াইয়ের মধ্য দিয়ে বিএনপিকে সরকার গঠন করাতে হবে। বিএনপি এই জাতিকে নেতৃত্ব দেবে, সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান তেমনই কিছু পরিকল্পনা সামনে নিয়ে এসেছেন। জনগণের কাছে এসব পরিকল্পনা পৌঁছে দিলে তাঁরা নিশ্চিতভাবে ধানের শীষে ভোট দেবেন।

মির্জা ফখরুল বলেন, পেছন থেকে অন্ধকারের মধ্য দিয়ে একটা কালো থাবা বেরিয়ে আসছে কি না, আরেকটা ফ্যাসিবাদ দেশের ওপর চেপে বসতে চাচ্ছে কি না, ধর্মকে ব্যবহার করে মানুষকে বিভ্রান্ত করতে চাচ্ছে কি না—এগুলো খেয়াল রাখতে হবে। সেই শক্তির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে। বিএনপির নতুন লড়াই বাংলাদেশকে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিকভাবে দৃঢ় অবস্থানে নেওয়ার, অপশক্তিকে রুখে দেওয়ার।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করছেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। সঞ্চালনা করছেন আরেক যুগ্ম মহাসচিব হাবিব উন নবী খান সোহেল।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত আছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা মাহদী আমিন, ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমিনুল হক, বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান প্রমুখ।

বিএনপি ক্ষমতায় গেলে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, ক্রীড়া, ফ্যামিলি কার্ড, কৃষক কার্ড, কর্মসংস্থানসহ আটটি বিষয়ে কীভাবে কাজ করবে—এ নিয়ে অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলোর জন্য ধারাবাহিক কর্মশালা বা অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। এই অনুষ্ঠান শুক্রবার ছাড়া ১৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত চলবে। এতে যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, ওলামা দলসহ অন্য সহযোগী সংগঠন অংশ নেবে। এরপর বুদ্ধিজীবী দিবস ও বিজয় দিবসের বাইরে অন্য কোনো একটি দিনে হবে সমাপনী অনুষ্ঠান।