দুই দল সংঘাতে, মানুষ আতঙ্কিত

২৮ অক্টোবর ঢাকায় দুই দলের পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি ঘিরে উত্তেজনা ছড়াচ্ছে। দুই পক্ষের শক্তি প্রদর্শনের চেষ্টায় রাজনীতি কোন দিকে এগোচ্ছে—এ বিষয়ে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও মানবাধিকারকর্মী সুলতানা কামালের অভিমত নিয়েছে প্রথম আলো।

সুলতানা কামাল
ফাইল ছবি

২৮ অক্টোবর দেশের বড় দুই দলের কর্মসূচি নিয়ে যেসব আলাপ–আলোচনা চলছে এবং গণমাধ্যমে যে ভঙ্গিতে খবরাখবর আসছে, তাতে বোঝাই যাচ্ছে, জনসাধারণের মনে এ নিয়ে খুবই উদ্বেগ–উৎকণ্ঠা দেখা দিয়েছে। আতঙ্ক–শঙ্কাও বলা যেতে পারে। কারণ, দুই দল সংঘাতের মধ্যেই আছে। সংঘাত বলতে সব সময় তো মারামারির পর্যায়ে যেতে হয় না। আলাপ–আলোচনা, একে অপরের প্রতি বক্তব্য, বাক্যবাণ ছোড়াছুড়িতেও সংঘাতপূর্ণ একটা ইঙ্গিত রয়ে গেছে। সে কারণেই ২৮ তারিখের কর্মসূচি নিয়ে মানুষের মনে এত শঙ্কা ও উদ্বেগ।

আমরা ছোটবেলা থেকে রাজনৈতিক যে কর্মসূচি, রাজনৈতিক যে আন্দোলনপ্রক্রিয়া, তার মধ্য দিয়েই বড় হয়েছি। কখনো রাজনৈতিক দলগুলো সভা–সমাবেশ ডাকলে আমরা আতঙ্কিত হইনি। যারা কোনো দলীয় রাজনীতি করতাম না, তারা নিজেদের পছন্দমতো সভা–সমাবেশে যোগ দিয়েছি। এখন দেখা যাচ্ছে, এগুলো একেবারেই দলীয় ব্যাপার। দুই দলের সমর্থকেরা বা সদস্যরা এটা নিয়ে উত্তেজিত থাকেন। একে অপরের প্রতি সংঘাতমূলক বাক্যবিনিময় করেন। সাধারণ মানুষ দূর থেকে আতঙ্ক নিয়ে পরিস্থিতি দেখতে থাকে।

এমন পরিস্থিতির ব্যাপারে একটা বিশ্লেষণ হচ্ছে, রাজনীতি জনবিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। তাদের রাজনীতি এত স্বার্থকেন্দ্রিক হয়ে গেছে, দলও ব্যক্তিকেন্দ্রিক হয়ে গেছে যে যেখানে জনগণ তাদের কোনো অবস্থান দেখতে পায় না; বরং অত্যন্ত ভয়ংকর একটা বিষয় হিসেবে দেখে থাকে।

এটা আমাদের গণতন্ত্রের জন্য দুঃখজনক। রাজনৈতিক দলগুলো যদি এখনো এ ধরনের অবস্থা থেকে ফিরে না আসে, সংলাপে না বসে, এখনো যদি অহিংসভাবে নিজেদের সমস্যা মেটানোর চেষ্টা না করে, তাহলে সামনে বিপদ আছে।

বর্তমান পরিস্থিতিতে ক্ষমতাসীন দল বলছে, নির্বাচন হবে এবং নির্বাচনের মধ্য দিয়েই সবকিছুর সমাধান হবে। এখন অন্য দল দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের মধ্যে কোনো সমাধান দেখতে পাচ্ছে না। তাদের এমন বিপরীতমুখী অবস্থানের কারণে সংলাপ হচ্ছে না এবং মাঠ পর্যন্ত এটা গড়িয়েছে।

তবে আমার মনে হয় না, ক্ষমতাসীন দল মাঠেই এর সমাধান খুঁজছে। কারণ, তারা তো তাদের পরিকল্পনা অনুযায়ী নির্বাচন করার জন্য যা যা ব্যবস্থা, তা করছে। আমরা দেখছি, তারা নিরাপত্তার বিষয়টি খুব বড় করে মাথায় নিয়েছে। ক্ষমতাসীন দল নির্বাচন দিয়েই সমস্যার সমাধানের চেষ্টা করছে। অপরপক্ষ এখন পর্যন্ত নির্বাচনমুখী নয়। কাজেই এখানে একটা পার্থক্য রয়েই যাচ্ছে।

  • সুলতানা কামাল সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও মানবাধিকারকর্মী