রওশনদের তৎপরতায় চিন্তিত নয় কাদেরের জাপা

রওশন এরশাদ ও জি এম কাদের
প্রথম আলো ফাইল ছবি

রওশন এরশাদ ও তাঁর অনুসারীদের তৎপরতাকে খুব একটা গুরুত্ব দিচ্ছে না জি এম কাদেরের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টি (জাপা)। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, দলটির শীর্ষ নেতৃত্ব মনে করছে, বয়স ও শারীরিক নানা সমস্যার কারণে রওশন এরশাদ এখন অনেকটাই জীবনসায়াহ্নে। ফলে তাঁকে সামনে রেখে যারা দলে বিভক্তির চেষ্টা চালাচ্ছে, তারা বেশি দূর যেতে পারবে না।

যদিও ৯ মার্চ রওশন এরশাদ জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় সম্মেলন ডেকেছেন। এর মধ্য দিয়ে দলে আরেক দফা ভাঙনের আশঙ্কা করছেন নেতা-কর্মীদের অনেকে।

আরও পড়ুন

তবে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, রওশনদের এই তৎপরতার পাল্টা ব্যবস্থা হিসেবে দলকে সংগঠিত করার উদ্যোগ নিয়েছেন জি এম কাদের। এ লক্ষ্যে গতকাল বুধবার বনানীতে দলের প্রেসিডিয়াম ও সংসদ সদস্যদের যৌথ সভা হয়। সভায় আগামী ১২ অক্টোবর জাপার কেন্দ্রীয় সম্মেলন অনুষ্ঠানের সম্ভাব্য তারিখ নির্ধারণ করা হয়। তার আগে রোজায় ইফতার অনুষ্ঠান, এপ্রিল মাসে কেন্দ্রীয় বর্ধিত সভা এবং বিভাগীয় পর্যায়ে সমাবেশ এবং সাংগঠনিক সফর শেষে আগস্টের মধ্যে সব জেলায় সম্মেলন করার সিদ্ধান্ত হয়।

জাতীয় পার্টি কোনো বিশেষ দলকে বাঁচাতে রাজনীতি করবে না। আমরা আমাদের নিজস্ব রাজনীতি নিয়ে এগিয়ে যাব।
জি এম কাদের

কার্যত রওশন এরশাদপন্থীদের তৎপরতা ঠেকাতে দলের প্রেসিডিয়াম ও সংসদ সদস্যদের যৌথ সভা ডেকে এ সিদ্ধান্তগুলো নেওয়া হয় বলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান। তাঁরা বলছেন, রওশন এরশাদের সম্মেলনের আগে জাপার নিয়ন্ত্রণ যে জি এম কাদেরের হাতেই রয়েছে, সেটি দেখানোটাও যৌথ সভার মূল লক্ষ্য ছিল। জাপার চেয়ারম্যান জি এম কাদেরের সভাপতিত্বে সভায় দলের জ্যেষ্ঠ কো-চেয়ারম্যান আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, কো-চেয়ারম্যান এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার, সালমা ইসলামসহ ২৬ জন উপস্থিত ছিলেন।

সভায় যথাসময়ে দলের কেন্দ্রীয় সম্মেলন অনুষ্ঠানের কথা জানিয়ে জি এম কাদের বলেছেন, ‘জাতীয় পার্টি কোনো বিশেষ দলকে বাঁচাতে রাজনীতি করবে না। আমরা আমাদের নিজস্ব রাজনীতি নিয়ে এগিয়ে যাব।’

আরও পড়ুন

এদিকে ৯ মার্চের সম্মেলন সামনে রেখে গতকাল জাপার ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ শাখার নেতাদের সঙ্গে যৌথ সভা করেন রওশন এরশাদ। সভায় কাজী ফিরোজ রশীদ, সৈয়দ আবু হোসেন, কাজী মামুনূর রশিদ, শফিকুল ইসলামসহ নেতারা উপস্থিত ছিলেন। সেখানে রওশন এরশাদ বলেন, ‘৯ মার্চের সম্মেলন হবে একটি ঐতিহাসিক সম্মেলন। এই সম্মেলনের মধ্য দিয়েই দেশের রাজনীতিতে পরিবর্তনের সূচনা হবে। জাতীয় পার্টিকে আবার আমরা সুসংগঠিত করে রক্ষা করতে পারব।’

তবে জাপার শীর্ষ নেতৃত্ব রওশন এরশাদ ও তাঁর অনুসারীদের এই সম্মেলনের তৎপরতাকে আমলে নিচ্ছেন না। এ বিষয়ে জাপার মহাসচিব মুজিবুল হক সাংবাদিকদের বলেন, ‘তথাকথিত সম্মেলন যারা করছে, তারা ইতিমধ্যেই নির্বাচন কমিশনে চিঠি দিয়েছিল যে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের ও মহাসচিবকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। নির্বাচন কমিশন তাদের ওই চিঠিকে নাকচ করে দিয়েছে। দলের বাইরে কেউ যদি মহাসম্মেলনও করে, সে ব্যাপারে আমাদের কোনো বক্তব্য নেই।’

৯ মার্চের সম্মেলন হবে একটি ঐতিহাসিক সম্মেলন। এই সম্মেলনের মধ্য দিয়েই দেশের রাজনীতিতে পরিবর্তনের সূচনা হবে। জাতীয় পার্টিকে আবার আমরা সুসংগঠিত করে রক্ষা করতে পারব।
রওশন এরশাদ

সম্প্রতি দলীয় শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগে দলের দুই কো-চেয়ারম্যান কাজী ফিরোজ রশীদ ও সৈয়দ আবু হোসেন, দুই প্রেসিডিয়াম সদস্য সুনীল শুভ রায় ও শফিকুল ইসলামকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। চারজনই ৭ জানুয়ারির সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সঙ্গে ‘সমঝোতার’ মনোনয়ন থেকে বাদ পড়ায় শীর্ষ নেতৃত্বের ওপর ক্ষুব্ধ হন। অন্যদিকে, রওশনের ছেলে সাদ এরশাদকে রংপুরে মনোনয়ন না দেওয়ায় রওশন এরশাদ নির্বাচন থেকে বিরত থাকেন। এর জেরে নতুন করে জাপায় দ্বন্দ্ব শুরু হয়। রওশন এরশাদ নিজেকে জাপার চেয়ারম্যান ঘোষণা করে সম্মেলন আহ্বান করেন। এর মধ্য দিয়ে দলে আরেক দফা বিভক্তির আশঙ্কা করা হচ্ছে।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, পৃথক সম্মেলনের মাধ্যমে শেষ পর্যন্ত দল বিভক্তির দিকে গেলেও রওশন এরশাদের ব্যাপারে জাপার শীর্ষ নেতৃত্ব নমনীয় থাকবে। এ বিষয়ে গতকাল প্রেসিডিয়াম ও সংসদ সদস্যদের যৌথ সভা শেষে জাপার মহাসচিব মুজিবুল হক বলেন, রওশন এরশাদের সঙ্গে আমাদের (জাপা) সম্পর্ক স্পর্শকাতর। তাই তাঁর বিরুদ্ধে কোনো সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ নেই। তবে রওশন এরশাদের নাম ব্যবহার করে যারা অন্যায় করেছে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এ প্রসঙ্গে তিনি দলের দুই কো–চেয়ারম্যান কাজী ফিরোজ রশীদ ও সৈয়দ আবু হোসেনকে বহিষ্কার করার কারণও ব্যাখ্যা করেন।

মুজিবুল হক বলেন, ‘পার্টির চেয়ারম্যান ও মহাসচিবকে বহিষ্কার করার জন্য কাজী ফিরোজ রশীদের বাসায় মিটিং হয়েছিল। তাই কাজী ফিরোজ রশীদকে বহিষ্কার করা হয়েছে।’

অবশ্য কাজী ফিরোজ রশীদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার বাসায় মিটিং তো নতুন কিছু না। আর ওই মিটিংয়ে যাঁরা ছিলেন, তাঁদের অনেকে তো এখনো দলে আছেন। এমনিতেই দল ছোট হয়ে গেছে। আওয়ামী লীগের অনুকম্পা নিয়ে ১১ জন সংসদ সদস্য হয়েছেন। এভাবে দল টেকানো কঠিন।’

এদিকে গত রাতে এক বিজ্ঞপ্তিতে দলের চেয়ারম্যান জি এম কাদের ও মহাসচিব মুজিবুল হকের নির্দেশ ও আহ্বান ছাড়া অন্য কোনো ব্যক্তিবদের ডাকে এবং জাতীয় পার্টির নাম ব্যবহার করে কোথাও কোনো সম্মেলন, সমাবেশ কিংবা রাজনৈতিক কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ না করার অনুরোধ জানানো হয়েছে।

পার্টির চেয়ারম্যান ও মহাসচিবকে বহিষ্কার করার জন্য কাজী ফিরোজ রশীদের বাসায় মিটিং হয়েছিল। তাই কাজী ফিরোজ রশীদকে বহিষ্কার করা হয়েছে।
মুজিবুল হক