এনাফ ইজ এনাফ: মির্জা ফখরুল

গণসংহতি আন্দোলনের ২১তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় বক্তব্য দেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর
ছবি: জাহিদুল করিম

আওয়ামী লীগ এককভাবে ক্ষমতা ভোগ করতে চায় বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ এককভাবে ক্ষমতা দখল করতে চায়, এটাই তাদের চরিত্র। জনগণ তাদের কাছে কোনো ব্যাপারই না। সাধারণ মানুষ একটা কথাই জিজ্ঞেস করে, এরা (আওয়ামী লীগ) যাবে কবে? কারণ, ওনারা (সাধারণ মানুষ) আর পারছেন না।’

আজ মঙ্গলবার বিকেলে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে গণসংহতি আন্দোলনের ২১তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন মির্জা ফখরুল ইসলাম।

‘বাংলাদেশে গণতন্ত্রের সংগ্রাম ও নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তের ৩১ দফা’ শীর্ষক এ আলোচনা সভায় গণতন্ত্র মঞ্চ ও সমমনা রাজনৈতিক জোটের নেতারা বক্তব্য দেন।

মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, ‘এবারের আন্দোলনে একটা পরিবর্তন এসেছে। এবার রাজনৈতিক দলগুলো যারা একসঙ্গে যুগপৎ আন্দোলন করছি, তারা পরিষ্কার করে বলেছি, আমরা এক দফা দিয়েছি তথা এই সরকারের পতন আমরা চাই, তা বলেছি। সেই সঙ্গে এটাও বলেছি এই সরকারের পতনের পরে একটা নিরপেক্ষ নির্দলীয় সরকারের অধীনে যে নির্বাচন হবে, সেই নির্বাচনের মধ্য দিয়ে যাঁরা আসবেন, তাঁদের সমন্বয়ে একটা জাতীয় সরকার গঠন করা হবে। ৩১ দফা তাঁরা বাস্তবায়ন করবেন। রাষ্ট্রকাঠামো সংস্কারের কথা এসব দফায় পরিষ্কার করে বলা আছে।’

দেশের সব মানুষ এক হলে শোষণমুক্ত সমাজ গড়া সম্ভব বলে মনে করেন মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, ‘আজকে সেই সুযোগ এসে উপস্থিত হয়েছে। আজকে দেশের মানুষ এক হয়েছে যে আমরা ভয়াবহ দানব সরকারকে সরিয়ে সত্যিকারার্থে জনগণের প্রতিনিধি, যাঁরা নিবাচিত হয়ে আসবেন, সেই সরকারের মধ্য দিয়ে মানুষের আশা–আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়ন করব।’

তরুণদের উদ্দেশে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে হলে এখনই, আর কোনো দেরি নয়, একমুহূর্তের জন্যও দেরি না করে আসুন আমরা সবাই গণতান্ত্রিকভাবে শান্তিপূর্ণভাবে রাজপথে নেমে পড়ব। সোচ্চার কণ্ঠে উচ্চারণ করব আর নয়, এক দফা দাবি, তুমি যাও। এনাফ ইজ এনাফ। এখন দয়া করে ছেড়ে দিয়ে জনগণের একটা রাষ্ট্র, জনগণের একটা পার্লামেন্ট, জনগণের একটা সরকার তৈরি করার ব্যবস্থা করে দাও। অন্যথায় তুমি পালাবারও পথ খুঁজে পাবে না। পায়ও না কিন্তু।’

বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া অত্যন্ত অসুস্থ উল্লেখ করে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘বিদেশে নেওয়ার জন্য তাঁর পরিবার থেকে বারবার চিঠি দেওয়া হয়েছে। আমরাও বলেছি বিদেশে চিকিৎসার সুযোগ দিতে। চিকিৎসকেরা বলেছেন, এখানে যে ব্যবস্থা আছে এ পর্যন্তই। এরপর তাঁকে অ্যাডভান্স সেন্টারে নেওয়া দরকার। সেই ব্যবস্থা তারা (সরকার) করছে না। আবারও আহ্বান জানাই তাঁর চিকিৎসার ব্যবস্থা করুন। তা না হলে এর দায় আপনাদের ওপর বর্তাবে।’

আলোচনা সভায় নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, আওয়ামী লীগ রাজনৈতিক যুদ্ধে আমাদের কাছে হেরে গেছে। সারা পৃথিবী তার পদত্যাগ চায়। সাধারণ মানুষ এখন সরকারের অনিয়ম নিয়ে কথা না বলে জানতে চায়—এরা যাবে কবে, যাবে তো? মেগা প্রজেক্টের নামে সরকার মেগা দুর্নীতি করছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি।

মাঠে নামতে পারলে এই সরকারের ‘পালাবার পথ থাকবে না’ বলে মন্তব্য করেন জাতীয় পার্টি (কাজী জাফর) সভাপতির মোস্তফা জামাল হায়দার। তিনি বলেন, দেশকে তারা এমন পর্যায়ে নিয়ে গেছে যে বৈদেশিক ঋণের কিস্তির টাকা পরিশোধ করতে এই সরকারের হাতে টাকা নেই। তারা অর্থনীতিকে ধ্বংস করে দিয়েছে।

সরকার জনগণকে জুয়ার ঘুঁটিতে পরিণত করছে বলে অভিযোগ করেন বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক।

বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম বলেন, গত ৫২ বছরে আওয়ামী লীগের চরিত্রে বদল আসেনি। গত ১৫ বছরে তারা গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশকে আওয়ামী প্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ করেছে।

আলোচনা সভায় সভাপতির বক্তব্যে গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি অভিযোগ করেন, দেশকে অর্থনৈতিক দেউলিয়ার দিকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। লুটেরাদের ভাগ–ভাঁটোয়ারা দিয়ে সরকার ক্ষমতায় টিকে আছে।

আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য দেন গণফোরামের একাংশের নেতা সুব্রত চৌধুরী, জাসদের নাজমুল হক প্রধান, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের হাসনাত কাইয়ুম, ভাসানী অনুসারি পরিষদের শেখ রফিকুল ইসলাম, জাতীয় মুক্তি কাউন্সিলে ফয়জুল হাকিম, ন্যাশনাল পিপলস পার্টির ফরিদুজ্জামান ফরহাদ প্রমুখ।