সময় খুব কম, আসুন জেতার জন্য লড়াই করি: মির্জা ফখরুল

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর
ফাইল ছবি

বিজয় সুনিশ্চিত জানিয়ে নেতা-কর্মীদের ঐক্যবদ্ধভাবে দ্রুত আন্দোলনে শামিল হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেছেন, ‘সময় খুব কম। আসুন জেতার জন্য লড়াই করি। ঐক্যবদ্ধ হয়ে আমরা এই সংগ্রাম ও লড়াই করি। বিজয় আমাদের সুনিশ্চিত।’

আজ সোমবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি প্রয়াত ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর স্মরণসভায় মির্জা ফখরুল ইসলাম এ কথা বলেন। ভাসানী অনুসারী পরিষদ এ স্মরণসভার আয়োজন করে।

‘এই স্বৈরাচারী সরকারকে তাড়াতে হবে’—জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, এ জন্য ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর মতো মানুষকে দরকার। যাদের পিছুটান নেই এবং জীবনের মায়া করেন না। তিনি বলেন, ‘আজকে বাংলাদেশের অস্তিত্ব হুমকির সম্মুখীন। স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব থাকবে কি না, তা আমি জানি না। এই সরকার ক্ষমতা দীর্ঘায়িত করার জন্য দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব বিক্রি করে দেবে, বাংলাদেশকে বিক্রি করে দেবে। তাই আজকে গণজাগরণ হয়েছে। এখন গণ-অভ্যুত্থান দরকার।’

এই সরকারকে মানুষ আর ক্ষমতায় দেখতে চায় না বলে মন্তব্য করে মির্জা ফখরুল বলেন, এ দেশের মানুষ সরকারকে বারবার চলে যেতে বলছে। তাদের মানুষ ক্ষমতায় দেখতে চায় না। কিন্তু এই সরকার জগদ্দল পাথরের মতো চেপে বসে আছে। এই প্রতিবাদগুলোই জাফরুল্লাহ ভাই করে গেছেন। তাঁর উদ্দেশ্য ছিল, এই ফ্যাসিস্ট সরকারকে সরিয়ে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করা।

সামনের লড়াইয়ে তরুণদের সামনে কাতারে থাকার আহ্বান জানান বিএনপির মহাসচিব। এ প্রসঙ্গে তিনি জাফরুল্লাহ চৌধুরীর স্মৃতিচারণা করে বলেন, ‘জাফরুল্লাহ ভাই প্রায় বলতেন যারা যুবক আছে, তাদের বের করে নিয়ে আসো, তাদের সামনে আনো। আমি আজকে তাঁর কথার সঙ্গে সুর তুলে বলতে চাই, এই দেশকে এই জাতিকে রক্ষা করতে এখন তরুণদের এগিয়ে আসতে হবে।’

স্মরণসভায় সাংবাদিকেরা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সেলফির নিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্যের বিষয়ে জানতে চান। জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এগুলোর উত্তর দিতে আমার রুচিতে আসে না। শুধু এটুকু বলতে চাই, তাদের এসব কথা বলে লাভ নেই। এখন মানুষ অন্তর থেকে পরিবর্তন চায়। প্রতি মুহূর্তে মানুষ এই সরকারকে সরিয়ে দিতে চায়। কারণ, এখন মানুষের জীবন অতিষ্ঠ হয়ে গেছে। প্রতিটি মুহূর্ত তাদের কাছে অসহনীয় হয়ে উঠছে।’

জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) সভাপতি আ স ম আবদুর রব বলেন, ‘এই সরকার জাফরুল্লাহ চৌধুরীকে ভয় পেত। কী কথা বললে কী হবে, সেটা চিন্তা করে তিনি কথা বলতেন না। তিনি যেটা বিশ্বাস করতেন, সেটাই বলতেন। আর ১৮ কোটি মানুষের মধ্যে আরেকটা জাফরুল্লাহ চৌধুরী আছে কি না, আমার সন্দেহ আছে।’

নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, বর্তমানে দেশে এমন একটা শাসক আছে, যারা জনগণের ভোটাধিকারের দাম দেয় না। যারা ধোঁকাবাজ, প্রতারক। তাদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে, তাদের সুবুদ্ধি হবে তারপর দেশের ভালো কাজ করবে, এটা যে ভাবছে, সে বোকার স্বর্গে বাস করছে।

মান্না বলেন, ‘এই যে সেলফি নিয়ে এত কথাবার্তা হচ্ছে, উনি (শেখ হাসিনা) যা করলেন, তা তো করলেনই। তিনি কি জানেন না, এ রকম ধোঁকাবাজি কেউ বুঝতে পারবে। বড় বড় রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রী, রাষ্ট্রপতিরা সেলফি তুলে—এটা কি আমরা জানি না, জানতে পারব না? মানুষ জানতে পারবে না? সেটা জেনেও তিনি এটা করেছেন। তার চেয়ে বড় কথা, ওবায়দুল কাদের কীভাবে বলতে পারলেন বিএনপির নেতাদের ঘুম হারাম হয়ে গেছে। এ রকম একটা পার্টি থার্ড ক্লাস কথাবার্তা বলে। তারপরও সেই পার্টি ১৫ বছর ধরে দাপটের সঙ্গে ক্ষমতায় আছে।’

ভাসানী অনুসারী পরিষদের আহ্বায়ক শেখ রফিকুল ইসলামের সভাপতিত্বে স্মরণসভায় আরও বক্তব্য দেন জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দার, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকী, বিএনপির মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক জহির উদ্দিন স্বপন, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের চেয়ারম্যান আলতাফুন নেছা, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক হাসনাত কাইয়ুম, গণফোরাম (একাংশ) সাধারণ সম্পাদক সুব্রত চৌধুরী, ন্যাশনাল পিপলস পার্টির চেয়ারম্যান ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, মুক্তিযোদ্ধা দলের সভাপতি ইশতিয়াক আজিজ উলফাত প্রমুখ।