‘ধর ধর’ বলে ধাওয়া দিয়ে ছাত্রদলের দুই কর্মীকে মারধরের অভিযোগ

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মিলন চত্বরের যাত্রী ছাউনির নিচে ছাত্রলীগের দুই নেতা ছাত্রদল কর্মী মাহমুদুল হাসানকে নিয়ে যাচ্ছেন
ছবি:  প্রথম আলো

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র (টিএসসি) এলাকায় জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের দুই কর্মীকে ছাত্রলীগ মারধর করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। কর্মীরা বলছেন, ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা ‘ধর, ধর’ বলে তাঁদের ধাওয়া করেন। পরে মারধর করেন।
আজ মঙ্গলবার বেলা ১টা ১০ মিনিটে টিএসসি এলাকায় এই মারধরের ঘটনা ঘটে।

আহত ছাত্রদলের দুই কর্মী হলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হল শাখার কর্মী মাহমুদুল হাসান ও কবি জসীমউদ্‌দীন হল শাখার কর্মী জুবায়ের আলী। মাহমুদুল আগে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের ছাত্রসংগঠন ইসলামী শাসনতন্ত্র ছাত্র আন্দোলনের (অধুনা ইসলামী ছাত্র আন্দোলন) বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি ছিলেন। গত বছর থেকে তিনি ছাত্রদল করা শুরু করেন।

ছাত্রদল কর্মী মাহমুদুলের অভিযোগ, একপর্যায়ে তাঁকে ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দেওয়ার জন্য চাপ দেন ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসানের নির্দেশে এই মারধরের ঘটনা ঘটেছে বলেছে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদল। তানভীর এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেন, দুপুরে মাহমুদুল হাসান ও জুবায়ের আলী টিএসসির জনতা ব্যাংকসংলগ্ন একটি চায়ের দোকানে বসেছিলেন। বেলা ১টা ১০ মিনিটে হঠাৎ ছাত্রলীগের একদল নেতা-কর্মী জনতা ব্যাংকের সামনে আসেন। তাঁদের দেখে মাহমুদুল ও জুবায়ের দোকান থেকে উঠে হাঁটা শুরু করেন। মুহূর্তের মধ্যেই ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা ‘ধর, ধর’ বলে তাঁদের ধাওয়া করেন। মাহমুদুল ও জুবায়ের দৌড় দেন। কিন্তু টিএসসির সড়কদ্বীপের প্রান্তে তাঁদের ধরে ফেলেন ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। এরপর প্রথমে সেখানে এবং পরে রাজু ভাস্কর্যের সামনে তাঁদের মারধর করা হয়। মাহমুদুলকে বেশি মারধর করা হয়। একপর্যায়ে মিলন চত্বরের যাত্রী ছাউনির সামনে নিয়ে মাহমুদুলকে জেরাও করেন ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা।

মাহমুদুল হাসান প্রথম আলোকে বলেন, ‘ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা আমাকে ও আমার এক ছোট ভাইকে (জুবায়ের) বিনা কারণে মারধর করেছেন। তাঁরা আমাদের এলোপাতাড়ি কিল-ঘুষি দেন। পরে আমাকে মিলন চত্বরের যাত্রী ছাউনির নিচে নিয়ে মুখের সামনে মুঠোফোনের ক্যামেরা ধরে ভিডিও করেন ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। তাঁরা আমাকে ছাত্রদল করার বিষয়ে স্বীকারোক্তি দিতে বলেন, একপর্যায়ে জয় বাংলা স্লোগান দেওয়ার জন্য চাপ দেন। অবশ্য আমি স্লোগান দিইনি। পরে তাঁদের হাত থেকে মুক্ত হয়ে ক্যাম্পাসের বাইরে চলে এসেছি।’

বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক আরিফুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আহত মাহমুদুল ও জুবায়ের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন। আমরা এই হামলা ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। ছাত্রলীগ আজ রাজনৈতিকভাবে দেউলিয়া হয়ে গেছে৷ তারা ক্যাম্পাসে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে সাধারণ শিক্ষার্থী ও ছাত্রদলসহ অন্যান্য ক্রিয়াশীল ছাত্রসংগঠনের ওপর মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতন চালায়। ক্যাম্পাসকে তারা সন্ত্রাসের অভয়ারণ্যে পরিণত করেছে। সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে নিয়ে অচিরেই ছাত্রলীগের সন্ত্রাসী কার্যক্রম প্রতিহত করতে ছাত্রদল দৃঢ় প্রতিজ্ঞ।’

তবে হামলায় নির্দেশ দেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘ছাত্রলীগের কেউ এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত নয়। ছাত্রলীগ মৌলবাদের বিরুদ্ধে। রাজনীতির নামে কেউ ক্যাম্পাসে মানুষ হত্যা বা অগ্নিসন্ত্রাস করতে চাইলে ছাত্রলীগ তাদের দাঁতভাঙা জবাব দেবে’।