আরও ৮ মামলা দায়ের, কুমিল্লায় সমাবেশ শনিবার

বিএনপি বলছে, আগামী ৩ ডিসেম্বর রাজশাহী বিভাগীয় গণসমাবেশ ঠেকাতেই পুলিশ বিএনপির নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে ‘গায়েবি’ মামলা করছে।

রাজশাহী বিভাগীয় গণসমাবেশের আগে গায়েবি মামলা ও নেতা-কর্মীদের আটক, পুলিশি হয়রানি, হামলা ও গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে বিএনপির সংবাদ সম্মেলন। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজশাহী নগরের একটি রেস্তোরাঁয়
ছবি: প্রথম আলো

রাজশাহী বিভাগে বিএনপির নেতা–কর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের ও গ্রেপ্তার অব্যাহত আছে। সর্বশেষ গত বুধবার পাবনায় সাতটি ও বগুড়ার ধুনটে একটি মামলা হয়েছে। এ নিয়ে ১০ দিনে এই বিভাগে ৩৩টি মামলায় বিএনপির ১ হাজার ১৬ জন নেতা-কর্মীকে আসামি করা হয়েছে। এসব মামলায় এ পর্যন্ত ৫৩ জন নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

অধিকাংশ মামলা বিশেষ ক্ষমতা ও বিস্ফোরক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে করা হয়েছে। বিএনপি বলছে, আগামী ৩ ডিসেম্বর রাজশাহী বিভাগীয় গণসমাবেশ ঠেকাতেই পুলিশ বিএনপির নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে ‘গায়েবি’ মামলা করছে। মামলাগুলোর এজাহারে যেসব অভিযোগ আনা হয়েছে, সে ধরনের ঘটনা কোথাও ঘটেনি।

পাবনা ও ধুনটে ৮ মামলা

পাবনার সাত উপজেলায় ১৮টি ককটেল বিস্ফোরণের অভিযোগে হওয়া সাত মামলায় বিএনপির ৫৪ জন নেতা–কর্মীকে আসামি করা হয়েছে। গত বুধবার ভাঙ্গুড়া, ঈশ্বরদী, চাটমোহর, আটঘরিয়া, সুজানগর, সাঁথিয়া ও আতাইকুলা থানায় মামলাগুলো করা হয়।

সাতটি মামলায় ৫৪ জনের নাম উল্লেখ করার পাশাপাশি অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে ৪৮৫ জনকে। মামলার মধ্যে চারটি পুলিশ ও তিনটি স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতারা বাদী হয়ে দায়ের করেছেন। সাতটি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের (ওসি) সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে। এর আগে ২১ নভেম্বর পাবনা শহরের খেয়াঘাট এলাকায় দুটি ককটেল বিস্ফোরণের অভিযোগে জেলা বিএনপি, যুবদল ও ছাত্রদলের সাতজনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা ১৫০ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে।

পুলিশের দাবি, নাশকতা সৃষ্টি ও জনমনে আতঙ্ক তৈরি করতে বিএনপির নেতা–কর্মীরা ককটেলগুলো বিস্ফোরণ করেছেন। ঘটনাস্থল থেকে ২০টি তাজা ককটেল উদ্ধার করেছে পুলিশ। তবে বিএনপির নেতারা বলছেন, ৩ ডিসেম্বর বিএনপির রাজশাহী বিভাগীয় সমাবেশ বানচাল করার ষড়যন্ত্র হিসেবে মামলাগুলো করা হয়েছে।

জেলা বিএনপির সদস্যসচিব মাসুদ খন্দকার প্রথম আলোকে বলেন, এসব ঘটনা আওয়ামী লীগ ও পুলিশের সাজানো নাটক। মিথ্যা মামলা দিয়ে বিএনপির নেতা–কর্মীদের হয়রানি করার ষড়যন্ত্র চলছে।

জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি রেজাউল রহিম বলেন, নিজেদের বাঁচাতে বিএনপি আবোল–তাবোল বকছে। তারা জনবিচ্ছিন্ন হয়ে ককটেল ফাটিয়ে আতঙ্ক তৈরি করছে।

পাবনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ ও প্রশাসন) মাসুদ আলম বলেন, ঘটনা যা ঘটছে, তার আলোকেই পুলিশ ব্যবস্থা গ্রহণ করছে, মামলা নিচ্ছে। এটা নিয়ে কে কী বলছে, তা দেখার বিষয় না।

এদিকে বগুড়ার ধুনট উপজেলা বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের ৪৬ নেতা-কর্মীর নামে ককটেল বিস্ফোরণ ও নাশকতা সৃষ্টির অভিযোগে গতকাল বৃহস্পতিবার মামলা করেছে পুলিশ। এ মামলায় পুলিশ দুই নেতাকে গ্রেপ্তারও করেছে। এই দুজন হলেন ধুনট উপজেলার মথুরাপুর ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম (৪৪) ও এলাঙ্গী ইউনিয়ন যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক উজ্জ্বল হোসেন (৩৫)। পরে এই দুজনকে আদালতের মাধ্যমে বগুড়া জেলা কারাগারে পাঠানো হয়।

পুলিশের ভাষ্য, ধুনট-শেরপুর পাকা সড়কের পাশে উল্লাপাড়া গ্রাম এলাকায় শফিকুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তির ধান-চালের চাতাল আছে। সেই চাতালের পাশে বিএনপির নেতা-কর্মীরা নাশকতা সৃষ্টির জন্য গতকাল বুধবার রাতে জড়ো হন। শেষ রাতের দিকে তাঁরা ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে এলাকায় আতঙ্ক ও ত্রাস সৃষ্টি করতে চেয়েছিলেন।

তবে চাতালমালিক শফিকুল ইসলাম বলেন, চাতালে এখন ধান-চাল নেই। তাই চাতালে কেউ থাকেন না। গতকাল সকালে চাতালে যাওয়ার সময় সিদ্দিক হোসেন নামের একজনের কাছে তিনি জানতে পারেন, রাতে তাঁর চাতালে ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটানো হয়েছে। কিন্তু কারা এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত, তা কেউ বলতে পারছে না।

কুমিল্লায় মঞ্চ তৈরি হচ্ছে দেরিতে

শনিবার কুমিল্লায় বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশ। কিন্তু গতকাল পর্যন্ত মঞ্চ তৈরির কাজই শুরু হয়নি। মঞ্চের জন্য সব ধরনের মালামাল কুমিল্লা টাউন হল মাঠে স্তূপ করে রাখা আছে। আজ শুক্রবার বিকেলের মধ্যে মঞ্চ প্রস্তুত হবে বলে দলীয় নেতারা জানিয়েছেন।

এদিকে গণসমাবেশ ঘিরে কুমিল্লায় ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে বিএনপি। পুরো নগরে মাইকিং করা হচ্ছে। পোস্টার, ব্যানার, ফেস্টুন ও বিলবোর্ডে লাগানো হয়েছে নগরের সড়কগুলো লাগোয়া বিভিন্ন স্থাপনায়।

বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির কুমিল্লা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও গণসমাবেশের সমন্বয়কারী মোস্তাক মিয়া প্রথম আলোকে বলেন, কুমিল্লা জেলা প্রশাসন টাউন হল মাঠে গত শনিবার থেকে গতকাল রাত আটটা পর্যন্ত ছয় দিনব্যাপী বইমেলা চলে। এ কারণে মঞ্চ তৈরি করা যায়নি। বৃহস্পতিবার রাত থেকে মঞ্চ তৈরি শুরু হবে। শেষ হবে শুক্রবার বিকেলের মধ্যেই।

আজ শুক্রবার জুমার নামাজ হবে কুমিল্লা টাউন হল মাঠে। বিএনপির নেতা-কর্মীরা টাউন হল মাঠে থাকবেন, খাবার খাবেন এবং নামাজ পড়বেন বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে।

[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়েছেন নিজস্ব প্রতিবেদক, কুমিল্লা, প্রতিনিধি, পাবনা ও ধুনট, বগুড়া]