বঙ্গবন্ধুকে হত্যার নির্দেশ দিয়েছিলেন জিয়া: ফজলে নূর তাপস

জাতীয় শোক দিবসের আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস
ছবি: সংগৃহীত

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস বলেছেন, কর্নেল রশিদকে ‘ইউ গো আহেড’ আদেশের মাধ্যমে জিয়াউর রহমান বঙ্গবন্ধুকে হত্যার নির্দেশ দিয়েছিলেন। সোমবার বিকেলে নগর ভবন প্রাঙ্গণে ‘জাতীয় শোক দিবস-২০২২’ উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিলে এ কথা বলেন শেখ ফজলে নূর তাপস।

এ সময় ঢাকা দক্ষিণ সিটির মেয়র বলেন, কর্নেল রশিদ আর কর্নেল ফারুক দুজনই ভায়রা ভাই। তাঁরা তাঁদের স্বীকারোক্তিতে, সংবাদমাধ্যমের কাছে সাক্ষাৎকারে বারবার উল্লেখ করেছে‌ন, যে এই দুজনের (জিয়াউর রহমান ও খন্দকার মোশতাক) সঙ্গে আমরা বারবার শলা-পরামর্শ করেছি, দেখা করেছি, কথা বলেছি। মোশতাকের সঙ্গে কুমিল্লার বার্ডে তাঁরা সভা করেছেন।

শেখ ফজলে নূর তাপস বলেন, ১৯৭৫ সালের মার্চ মাসে কর্নেল রশিদ গিয়ে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার জন্য জিয়াউর রহমানের সম্মতি চেয়েছেন। উপসেনাপ্রধানের মতো ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার কাছে যদি সেনাবাহিনীর অধস্তন কর্মকর্তা গিয়ে বলেন, আমরা রাষ্ট্রপতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব। আমরা ক্যু করার জন্য প্রস্তুত হচ্ছি। জিয়া জবাবে কি বলেছেন? উনি কি সেই অধস্তন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছেন? উনি কি সেই অধস্তন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মার্শাল ল কোর্টে ব্যবস্থা নিয়েছেন? তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়ে তাঁকে কারাগারে নিক্ষেপ করার ব্যবস্থা নিয়েছেন? না, তিনি বলেছেন, ‘ইউ গো আহেড’।

তোমরা এগিয়ে যাও। তোমরা এগিয়ে যাওয়া মানে হ্যাঁ, তোমরা এগিয়ে গিয়ে রাষ্ট্রপতিকে হত্যা করো। তোমরা এগিয়ে গিয়ে ক্যু করো। রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করো। একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা যখন সেনাবাহিনীর অধস্তন কোনো কর্মকর্তাকে সম্মতি দেয় সেটা হলো আদেশ। নির্দেশনা দিয়েছেন তিনি। রাষ্ট্রদ্রোহী কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হয়েছেন। খুনের নির্দেশনা দিয়েছেন জিয়াউর রহমান।

বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে জিয়াউর রহমান পুরোপুরি অবগত ছিলেন এবং হত্যাকাণ্ডে মদদ দিয়েছেন, সহযোগিতা করেছেন উল্লেখ করে শেখ তাপস বলেন, মার্চ মাস থেকে আগস্ট মাস পর্যন্ত তিনি এই পুরো তথ্য নিজে লুকিয়ে রেখেছেন এবং খুনিদের সব রকম সহযোগিতা করেছেন। সেনাবাহিনীর মহড়া করার জন্য, অস্ত্র গোলাবারুদ দেওয়ার জন্য সব সহযোগিতা করেছেন জিয়া।

খুনিরা ১৫ আগস্ট হত্যাকাণ্ডের পরে কোথায় গিয়েছিলেন প্রশ্ন রেখে মেয়র শেখ তাপস বলেন, আবারও গিয়েছে খুনি মোস্তাকের কাছে, বঙ্গভবনে। তাঁকে নিয়ে রেডিওতে বার্তা দেওয়ার জন্য। আর গিয়েছে খুনি জিয়াউর রহমানের কাছে। যারা প্রথম এই হত্যাকাণ্ডের প্রতিরোধ করার চেষ্টা করেছিলেন, প্রতিহত করার চেষ্টা করেছিলেন কর্নেল নুরুদ্দীন, শাফায়াত জামিলসহ সেনাবাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের ধরে জিয়াউর রহমানের কাছে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। কেন জিয়াউর রহমানের কাছে যাবেন তাঁরা? কারণ, তাঁরা তো জিয়াউর রহমানের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে সংশ্লিষ্ট এবং তাঁদের আস্থার জায়গা হলো জিয়াউর রহমান।

আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া। প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি ষড়যন্ত্রকারীরা যেন আর মানুষ হত্যা করতে না পারে সে জন্য নেতা-কর্মীদের সতর্ক থাকার নির্দেশ দিয়েছেন।

মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বলেন, ষড়যন্ত্র কিন্তু এখনো আছে। এই ষড়যন্ত্র ১৯৭১ সাল থেকে শুরু হয়েছে। একটার পর একটা অঘটন ঘটিয়েছে। ওরা কিন্তু তৎপর। সাপ কিন্তু মরে না যতক্ষণ পর্যন্ত না তাঁকে পুরোপুরি না মারবেন। লেজে পাড়া দিয়ে ছাড়তে নেই। এই সাপকে চিরতরে মারতে হবে। যেন বারবার আর ষড়যন্ত্র করে মানুষ হত্যা করতে না পারে।

আলোচনা সভা শেষে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ ১৫ আগস্টে শাহাদাতবরণকারী সবার রুহের মাগফিরাত কামনা করে বিশেষ দোয়া ও মোনাজাত করা হয়।

এ সময় ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ফরিদ আহাম্মদ শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন। বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. হুমায়ুন কবির, ঢাকা-৫ আসনের সংসদ সদস্য কাজী মনিরুল ইসলাম মনু।

অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কাজী মোর্শেদ হোসেন কামালসহ ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, ছাত্রলীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ, করপোরেশনের সচিব আকরামুজ্জামান, দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলররা উপস্থিত ছিলেন।