গণমাধ্যমের স্বাধীন অস্তিত্ব ধ্বংস করছে সরকার: বিএনপি

রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আজ সোমবার দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে দলটির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বক্তব্য দেনছবি: সংগৃহীত

আওয়ামী লীগ সরকার গণমাধ্যমের স্বাধীন অস্তিত্ব বিপন্ন করার অ্যাজেন্ডা বাস্তবায়ন করছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেন, ‘সাংবাদিক নির্যাতন করলে, এমনকি হত্যা করলেও যে কোনো শাস্তি হয় না, এটি বর্তমান ক্ষমতাসীন ফ্যাসিস্ট সরকার প্রতিষ্ঠিত করে ফেলেছে।’

আজ সোমবার দুপুরে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে রুহুল কবির রিজভী এ অভিযোগ করেন।

গণমাধ্যমকে উদ্ধৃত করে রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘এই সরকারের আমলে সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনিসহ ৫৯ জন সাংবাদিক হত্যার শিকার এবং আড়াই শতাধিক সাংবাদিক ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে নির্যাতিত হয়েছেন। এর মধ্যে ১২ বছর হলো, এখন পর্যন্ত সাগর-রুনির রোমহর্ষক হত্যাকাণ্ডের তদন্ত প্রতিবেদন পর্যন্ত তৈরি হয়নি। এমনকি তাঁদের ল্যাপটপটি পর্যন্ত উদ্ধার হয়নি।’

সাগর-রুনি হত্যা মামলার তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে জমা দেওয়ার তারিখ ১০৫ বার পেছানোর ঘটনার সমালোচনা করে রিজভী বলেন, ‘দুর্নীতি-দুঃশাসন-দুর্বৃত্তায়নে আওয়ামী লীগের বহুমাত্রিক বিশ্ব রেকর্ডের মধ্যে সাগর-রুনি হত্যা মামলায় ১০৫ বার তদন্ত প্রতিবেদন পেছানোর ঘটনা আরেকটি নতুন বিশ্ব রেকর্ড।’ তিনি আরও বলেন, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাত ছিল সাগর-রুনির সাংবাদিকতার অন্যতম বিষয়। যে খাত থেকে রাষ্ট্রীয় মদদে লাখো-কোটি টাকার দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে, সেই খাতের লুটপাট তথা নেপথ্যেও কুশীলবদের সঙ্গে এই হত্যা ও বিচারহীনতার সম্পর্ক থাকা অস্বাভাবিক নয়।

রিজভী বলেন, গত ১২ বছরে নৃশংস এই হত্যাকাণ্ডের বিচার না হওয়ার কারণ হয়তো সাগর-রুনির অনুসন্ধানী সাংবাদিকতায় এমন কিছু তথ্যপ্রমাণ উঠে এসেছিল এবং তাঁরা এমন কিছু বিষয় জেনে ফেলেছিলেন—যা ক্ষমতাসীনদের জন্য স্পর্শকাতর ও হুমকি ছিল। যে কারণে রহস্যজনকভাবে হত্যাকাণ্ডের প্রকৃত তদন্তের বিষয়টি এড়িয়ে যাওয়া হচ্ছে।

রিজভী বলেন, গণমাধ্যমের কণ্ঠ রোধ করতে এই সরকার ডিজিটাল কিংবা সাইবার নিরাপত্তা আইনের মতো কালো আইন প্রয়োগ করছে। সেন্টার ফর গভর্নেন্স স্টাডিজের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে ৮৯০টি মামলা হয়। সর্বোচ্চ ১৩ দশমিক ৬৮ শতাংশ মামলা হয় সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে মামলা দায়ের করে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ ক্ষমতাসংশ্লিষ্ট স্বার্থান্বেষী মহল। সে কারণে সাংবাদিক হত্যা বা নির্যাতনের বিচার হয় না।

নিরপেক্ষ বা বিরোধী মতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল গণমাধ্যমগুলোর ওপর সরকারি খড়্গ–এর সমালোচনা করেন রিজভী। বর্তমান পরিস্থিতিতে গণমাধ্যমের একটি বড় অংশই আওয়ামী লীগের মন্ত্রী, সংসদ সদস্য ও নেতাদের দ্বারা অথবা তাঁদের আস্থাভাজন ব্যবসায়ীদের অর্থায়নে পরিচালিত হচ্ছে। এসব গণমাধ্যমের মালিকপক্ষের চাপে স্বাধীন সাংবাদিকতা বিলীন হচ্ছে। আবার অনেক সাংবাদিক বাধ্য হয়ে আওয়ামী লীগের বয়ান প্রচারণায় শামিল হচ্ছেন। সরকারের মুখপাত্র হিসেবে চিহ্নিত কিছু গণমাধ্যমের খবর এতটাই একপেশে যে দেশের জনগণ আজ মূলধারার গণমাধ্যমের একাংশের ওপর আস্থা হারিয়ে ফেলেছে। এর উদ্দেশ্য এই ক্রান্তিকালে এ দেশে মানবাধিকার, গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ ও আশা–আকাঙ্ক্ষাকে অবরুদ্ধ করা।

রিজভী বলেন, ‘আমরা সাগর-রুনি হত্যার বিচার চাই। আমরা প্রতিটি সাংবাদিকের নিরাপত্তা এবং তাঁদের পেশাগত স্বাধীনতা চাই। ইনশা আল্লাহ চলমান আন্দোলনে বিজয়ের মাধ্যমে স্থাপিত গণতান্ত্রিক বাংলাদেশে আমরা সাগর-রুনি হত্যার সুষ্ঠু তদন্ত ও ন্যায়বিচারের মাধ্যমে সব সাংবাদিকের নিরাপত্তা ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠা করব।’