পবিত্র রমজানে তারাবিহ ও সাহ্‌রিতে বিদ্যুতের সমস্যা হবে না: প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতীয় সংসদে প্রশ্নোত্তর পর্বে বক্তব্য দেন। ঢাকা, ২৮ ফেব্রুয়ারিছবি: পিআইডি

আসন্ন পবিত্র রমজানে তারাবিহ ও সাহ্‌রিতে বিদ্যুতের সমস্যা হবে না বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রমজানে নিত্যপণ্যের দামে লাগাম টানা সম্ভব হবে বলেও আশা প্রকাশ করেন তিনি।

আজ বুধবার বিকেলে জাতীয় সংসদে প্রশ্নোত্তর পর্বে প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন। স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদের বৈঠকের শুরুতে প্রধানমন্ত্রীর প্রশ্নোত্তর পর্ব অনুষ্ঠিত হয়।

স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য আবুল কালাম সম্পূরক এক প্রশ্নে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে জানতে চান, পবিত্র রমজান মাসে তারাবিহর নামাজ ও সাহ্‌রির সময় নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুতের ব্যবস্থা করা হবে কি না।

জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকার অনেক অর্থ ব্যয় করে বিদ্যুৎ উৎপাদন করে। ভর্তুকি দিয়ে তা বিতরণ করা হয়। এখন বিশ্বব্যাপী তেল, এলএনজি ও পরিবহনসহ সবকিছুর দাম বেড়ে গেছে। তার পরও নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের প্রচেষ্টা রয়েছে।

সরকারপ্রধান বলেন, ‘এটা ঠিক যে যেহেতু আমাদের জ্বালানি তেল বা এলএনজির সংকট আছে, সেহেতু সময়ে-সময়ে...তা ছাড়া জানেন যে, যান্ত্রিক ব্যাপার..., অনেক সময় কোনো কোনো কারণে বিদ্যুৎ উৎপাদন হ্রাস পায় বা ব্যাহত হয়। সে জন্য আমরা ইতিমধ্যে সিদ্ধান্ত নিয়েছি, হ্যাঁ, তারাবিহর নামাজ ও সাহ্‌রির সময় বিদ্যুতের সমস্যা হবে না; বরং বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের জন্য যদি প্রয়োজন হয়...যখনই প্রয়োজন হবে, অন্তত দিনের কোনো এক সময় যখন বেশি বিদ্যুতের প্রয়োজন নেই, সে সময়টায় যদি দু-তিন ঘণ্টা লোডশেডিং করে দেওয়া যায়, সহনীয় পর্যায়ে থাকবে, তাহলে কিন্তু আর বিদ্যুতের সংকট তারাবিহ ও সাহ্‌রির সময়ে হবে না। আমাদের প্রচেষ্টা সেইভাবে থাকবে।’

একসময় দেশে ১০-১২ ঘণ্টা, দিনের পর দিন লোডশেডিং থাকত, এখন সে অবস্থা নেই উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমার মনে হয়, মাঝেমধ্যে থাকা (লোডশেডিং) ভালো। তাহলে মানুষ অতীতকে ভুলে যাবে না। অন্তত উপলব্ধি করবে কোথায় ছিলাম আর কোথায় এসেছি।’

সংসদ সদস্য নুরুন্নবী চৌধুরীর প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, দেশ ক্রমাগত এগিয়ে যাচ্ছে। অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বৃদ্ধির সঙ্গে মানুষের জীবনমানেরও উন্নয়ন ঘটেছে। তাই অর্থনীতির মূল চালিকা শক্তি জ্বালানি, প্রাকৃতিক গ্যাসের চাহিদাও ক্রমবর্ধমান হারে বাড়ছে। ফলে গ্যাসের চাহিদা ও সরবরাহ সামঞ্জস্যপূর্ণ করা সম্ভব হচ্ছে না। এই সংকট কাটাতে চাহিদা অনুযায়ী গ্যাস সরবরাহ করার লক্ষ্যে সরকারের নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।

ইচ্ছাকৃত মূল্য বৃদ্ধি করলে কঠোর ব্যবস্থা

ইচ্ছাকৃতভাবে কেউ যদি নিত্যপণ্যের মূল্য বেশি নেয়, তাহলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একই সঙ্গে তিনি বলেছেন, নিত্যপণ্যের মূল্য স্বাভাবিক রাখতে সরকার সব ধরনের কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে।

জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য মুজিবুল হক সম্পূরক এক প্রশ্নে বলেন, দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে সরকার নানা পদক্ষেপ নিয়েছে। কিন্তু কিছু অসাধু ব্যবসায়ী এই সুযোগগুলো ব্যবহার করে। এতে উদ্দেশ্য সফল হয় না। বিষয়টি কঠোরভাবে নজরদারি করে অসাধু ব্যবসায়ীদের আইনের আওতায় আনতে পদক্ষেপ নেওয়া হবে কি না, তা জানতে চান তিনি।

এই প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রতিটি এলাকায় মোবাইল কোর্ট পরিচালনা ও আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হয়ে থাকে। তারপরও যদি কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি করে, অবশ্যই তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

আরও পড়ুন

সংসদ নেতা শেখ হাসিনা বলেন, ‘একটা কথা বলি, রমজান হচ্ছে কৃচ্ছ্র সাধনের মাস। মানুষ যেন কম খাবার গ্রহণ করে, খাদ্য সংরক্ষণ করে...। আমাদের এখানে দেখি যেন খাবার গ্রহণের বিষয়টি একটু বেড়েই যায়। প্রকৃতপক্ষে সে জন্য তো রমজান নয়। রমজান হচ্ছে সংযমের মাস। সংযম করতে হবে। এখন বিশেষ কোনো একটা জিনিস না খেলে হবেই না, রোজা রাখা যাবে না বা ইফতার করা যাবে না—এই মানসিকতাটা বদলাতে হবে। আমাদের দেশে যে খাদ্য পাওয়া যায়, সেটা দিয়েই রোজা রাখতে পারি। কারণ এটা না খেলে চলবেই না—এ রকম তো কথা নেই। অন্য সময় মানুষ কী খায়, সেভাবেই খাওয়ার ব্যবস্থা করা যেতে পারে। তাহলে একটা জিনিসের জন্য কান্নাকাটি শোনা যাবে না।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, তবে ইদানীং প্রতিটি জিনিসের দাম কমেছে। একেবারেই কমেনি, তা নয়। কৃষকের উৎপাদিত পণ্যের দাম কম হলে কৃষক ন্যায্য মূল্য পায় না। আবার দাম বেশি বেড়ে গেলে ভোক্তার কষ্ট হয়। এ দুটি বিষয় সরকারকে লক্ষ রাখতে হয়। এ ব্যাপারে সরকার যথেষ্ট সচেতন।

নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদেরও নজরদারির দায়িত্ব আছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, বাজার মনিটরিংয়ে (তদারকি) সবাই সহযোগিতা করলে এই অসাধু ব্যবসায়ীরা এভাবে নিত্যপণ্যের মূল্য অসৎ উপায়ে বাড়াতে পারবে না। সরকারের পক্ষ থেকে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। আরও পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

গুজবে কান না দেওয়ার আহ্বান

আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য আলী আজমের প্রশ্নের জবাবে মূল্যস্ফীতি কমানো ও দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখতে সরকারের নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের ফলে দরিদ্র জনগোষ্ঠী বিশেষ করে দরিদ্র পরিবার, বয়স্ক, বিধবা, স্বামী নিগৃহীত নারীসহ নিম্ন আয়ের মানুষের জীবনযাত্রায় স্বস্তি আসবে। পবিত্র রমজান মাসে মূল্যস্ফীতি সহনীয় পর্যায়ে থাকবে এবং বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দামে লাগাম টানা সম্ভব হবে বলেও তিনি আশা করছেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, জনগণের কষ্ট লাঘবে সরকার সব সময় সচেষ্ট। মূল্যস্ফীতি কমাতে বিভিন্ন ক্ষেত্রে শুল্কছাড় দেওয়া হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘ইতিমধ্যে আমরা ভোগ্যপণ্যের অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধি অনেকাংশে সংযত করতে পেরেছি। বিশ্ববাজারে কয়েকটি পণ্য যেমন জ্বালানি তেল, ভোজ্যতেল, গম, সারসহ বিভিন্ন খাদ্যপণ্য, ভোগ্যপণ্য ও শিল্পের কাঁচামালের মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় আমাদের দেশে আমদানিজনিত মূল্যস্ফীতির চাপ অনুভূত হচ্ছে।’

সম্পূরক প্রশ্নে সংসদ সদস্য আলী আজম বলেন, নিত্যপণ্যের দাম অন্য সময় মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে থাকলেও রমজানে তার ব্যতিক্রম দেখা যায়। এ সময় অধিক মুনাফালোভী কিছু ব্যবসায়ী অনৈতিকভাবে পণ্য গুদামজাত করে বাজারে কৃত্রিম সংকট তৈরি করার চেষ্টা চালায়। এ প্রেক্ষাপটে রমজানে পণ্যমূল্য স্বস্তির মধ্যে রাখতে অবৈধ মজুত, সিন্ডিকেট এবং বিশেষ করে বিএনপি-জামায়াতের গুজবের ব্যাপারে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হবে কি না।

এর জবাবে গুজবে কান না দেওয়ার জন্য সবার প্রতি আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, সবাই সচেতন থাকলে আর গুজবে কান না দিলে গুজব ছড়িয়ে কেউ সমস্যা তৈরি করতে পারবে না। তিনি বলেন, অসাধু ব্যবসায়ীরা যাতে মানুষের খাদ্য নিয়ে খেলতে না পারে, সে জন্য সরকার যথেষ্ট সচেতন রয়েছে। বহু পণ্য আমদানি করতে হয়। সরকার এই পরনির্ভরশীলতা কাটিয়ে নিজেদের উৎপাদন বাড়াতে চায়।

আরও পড়ুন