নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে প্রতিহত করতে সাম্প্রদায়িক সহিংসতা ঘটানো হয়: ধর্ম প্রতিমন্ত্রী
নির্বাচন ঘনিয়ে এলে রাজনৈতিকভাবে আওয়ামী লীগকে প্রতিহত করতে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক চক্র সাম্প্রদায়িক সহিংসতা সৃষ্টি করে বলে মন্তব্য করেছেন ধর্ম প্রতিমন্ত্রী ফরিদুল হক খান। আওয়ামী লীগকে প্রতিহত করতে বিরোধী শক্তি বিকল্প প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে এ ধরনের ঘটনা ঘটায় বলে মনে করেন তিনি।
আজ রোববার রাজধানীর নিউ ইস্কাটনে বিয়াম ভবনে আয়োজিত ‘ধর্মীয় সম্প্রীতি ও সচেতনতা বৃদ্ধিকরণ’ প্রকল্পের অধীনে দুটি পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের কর্মপরিকল্পনাবিষয়ক ওয়ার্কশপে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন ধর্ম প্রতিমন্ত্রী।
সাম্প্রদায়িক সহিংসতার বিষয়ে ফরিদুল হক খান বলেন, ‘যারা এই কুকর্মগুলো (সাম্প্রদায়িক সহিংসতা) করে বেড়ায়, তারা স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি, যে শক্তি যখনই কোনো নির্বাচনের সময় ঘনিয়ে আসে, তখনই সোচ্চার হয়ে ওঠে। এক বছর চার মাস পরই জাতীয় নির্বাচন। এই নির্বাচনকে ব্যাহত করতে, দেশের অগ্রযাত্রার পথ রুদ্ধ করতে, বাংলাদেশের বিরোধী শক্তি সোচ্চার। তাদের প্রতিহত করতে সবাইকে সচেতন থাকতে হবে।’
বাংলাদেশে জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসবাদ এখনো পুরোপুরি নির্মূল করা যায়নি উল্লেখ করে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘এখনো তারা ভেতরে-ভেতরে আছে। এই শক্তিকে শেষ করতে হলে আরও একটা যুগের প্রয়োজন হবে। এ জন্য প্রয়োজন সবার মধ্যে সম্প্রীতি। এই সম্প্রীতি যদি সবার মধ্যে থাকে, বাংলাদেশে স্বাধীনতার বিপক্ষের শক্তি বলেন, মৌলবাদী বলেন, কেউ মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে পারবে না।’
ধর্ম প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘কয়েক দিন আগে ৩০-৪০ জন সাংবাদিক আমার রুমে গিয়েছিলেন, আলোচনা করেছেন। একজন প্রশ্ন করলেন, এসব ঘটনা (সাম্প্রদায়িক সহিংসতা) ঘটে কেন, আপনারা দেখেন না? আমি বললাম, ১২টা প্রশ্ন করেছেন। সব কটির উত্তর দিয়েছি। এই প্রশ্নটা আমারও—ঘটনা ঘটে কেন, দেখি না কেন? আপনাকে এই চেয়ারে বসিয়ে দিলাম। আপনি দয়া করে এই উত্তরটা দেন। কোনো উত্তর দিতে পারেননি তাঁরা। এ ধরনের ঘটনা যেন না ঘটে, এই প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। নাম দেওয়া হয়েছে—ধর্মীয় সম্প্রীতি ও সচেতনতা বৃদ্ধিকরণ প্রকল্প।’
ওয়ার্কশপে বিশেষ অতিথি ছিলেন সংসদ সদস্য নারায়ণ চন্দ্র চন্দ ও আরমা দত্ত। সাম্প্রদায়িক সহিংসতাকে ‘রাজনৈতিক খেলা’ বলে মন্তব্য করে নারায়ণ চন্দ্র চন্দ বলেন, ‘এখানে যারা মাইনরিটি (সংখ্যালঘু), বর্ডার পার হলে মেজরিটি (সংখ্যাগুরু)। ওখানে যারা মাইনরিটি, বর্ডার পার হলে মেজরিটি। আমি বলব, রাজনৈতিক খেলা না খেলে ভারতের মেজরিটিরা ওই দেশের মাইনরিটিদের নিরাপত্তা নিশ্চয়তা দেবে। আর এ দেশের মেজরিটিরা মাইনরিটিদের নিরাপত্তা দেবে। সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।’
সংসদ সদস্য আরমা দত্ত বলেন, ‘ধর্মের (সাম্প্রদায়িক সহিংসতা) ঘটনাগুলো ঘটছে কেন? এগুলো উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। এগুলোর পেছনে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য রয়েছে। বিশেষ করে যারা ভালনারেবল (দুর্বল), যারা অর্থনৈতিক, সামাজিক বা রাজনৈতিকভাবে দুর্বল, তাদের ওপর আঘাত করা হয়। এটা একটা পলিটিক্যাল টুল (রাজনৈতিক হাতিয়ার)। অ্যান্ড ইট ইজ আ পলিটিক্যাল ওয়েপন টু অ্যাটাক অন দ্য মাইনরিটিজ (সংখ্যালঘুদের ওপর আক্রমণ করার জন্য রাজনৈতিক হাতিয়ার)। ইটজ আ ভেরি ক্লিয়ার ব্লুপ্রিন্ট ডিজাইন (এটা সুস্পষ্ট নীলনকশা)।’
অনুষ্ঠানের শুরুতে স্বাগত বক্তব্য দেন ‘ধর্মীয় সম্প্রীতি ও সচেতনতা বৃদ্ধিকরণ’ প্রকল্পের পরিচালক আব্দুল্লা আল শাহীন। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ। আমাদের সম্প্রীতির বন্ধন ইতিহাস ও ঐতিহ্যে গাঁথা। এটা আমাদের রক্তে মিশে আছে। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে, মাঝেমধ্যে শুনি, দেশের বিভিন্ন এলাকায় সম্প্রীতি বিনষ্টের ঘটনা ঘটছে। এ ধরনের ঘটনা প্রতিরোধ করতেই সচেতনতামূলক এই প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে।’
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন হিন্দু ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টের ভাইস চেয়ারম্যান সুব্রত পাল, বৌদ্ধ ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টের ভাইস চেয়ারম্যান সুপ্ত ভূষণ বড়ুয়া, বৌদ্ধ ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টের সচিব জয়দত্ত বড়ুয়া, খ্রিষ্টান ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টের সচিব নির্মল রোজারিও ও হিন্দু ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টের সচিব দিলীপ কুমার ঘোষ। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মু. আ. আউয়াল হাওলাদার।