ডাকসু নির্বাচন: নির্বাচনী বিতর্কে নানা প্রতিশ্রুতি ভিপি প্রার্থীদের

বিতর্কে বক্তব্য দিচ্ছেন স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী ঐক্য প্যানেলের সহসভাপতি (ভিপি) প্রার্থী উমামা ফাতেমাছবি: প্রথম আলো

রাজনৈতিকভাবে সচেতন একাডেমিক ক্যাম্পাস গড়ে তোলা, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে সেতুবন্ধ তৈরি করা, আওয়ামী নীতির বাইরে এসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক জায়গাকে নতুনভাবে গড়ে তোলা, শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার প্রতি আগ্রহ তৈরি করা, নতুন নতুন উদ্ভাবন ও প্রযুক্তির প্রতি উদ্বুদ্ধ করাসহ নির্বাচনী বিতর্কে নানা প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন ডাকসু নির্বাচনের সহসভাপতি (ভিপি) প্রার্থীরা।

আজ শনিবার বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র–শিক্ষক কেন্দ্রে এই নির্বাচনী বিতর্ক অনুষ্ঠিত হয়। ডাকসু নির্বাচন নিয়ে এই বিতর্কের আয়োজন করেন ঢাকা ইউনিভার্সিটি ডিবেটিং সোসাইটি।

বিতর্কে অংশ নিয়ে বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থী সংসদের সহসভাপতি (ভিপি) প্রার্থী আব্দুল কাদের বলেন, ‘একজন ভিপি প্রার্থী হিসেবে আমার প্রধান কাজ হবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে সেতুবন্ধ তৈরি করা। আবাসন সমস্যা সমাধান, ভর্তি নীতিমালা সহজ করা এবং শিক্ষকদের জবাবদিহি নিশ্চিত করা।’

আব্দুল কাদের বলেন, ‘প্রথম কাজ হবে এখানকার রাজনৈতিক ব্যবস্থা ও রাজনৈতিক কাঠামো কীভাবে গঠিত হবে, তা ঠিক করা। কারণ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতি কখনোই বাইরের রাজনীতি থেকে মুক্ত নয়। আমরা যতই বলি, রাজনীতির বাইরে গিয়ে কেবল একাডেমিক বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে তোলা সম্ভব নয়। এ জন্য প্রয়োজন রাজনৈতিক সদিচ্ছা এবং সঠিক রাজনৈতিক কাঠামো।’

কাদের বলেন, নতুন কোনো প্রতিশ্রুতি নয়, বরং আগে যে কাজগুলো শুরু করেছিলেন, নির্বাচিত হলে সেগুলো আনুষ্ঠানিকভাবে শেষ করবেন। প্রত্যেক শিক্ষার্থীর জন্য আসন বরাদ্দের ওপর জোর দিয়ে তিনি বলেন, যেদিন একজন শিক্ষার্থী ভর্তি হবে, সেদিনই তার জন্য একটি সিট নিশ্চিত করা হবে।

বর্তমানে দলনির্ভর, পক্ষপাতদুষ্ট নিয়োগ ও পদায়ন প্রথা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশকে নষ্ট করছে উল্লেখ করে আব্দুল কাদের প্রশাসনের সব পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করার ওপর জোর দেন।

নির্বাচনী বিতর্কে ছাত্রদল মনোনীত প্যানেলের সহসভাপতি (ভিপি) প্রার্থী আবিদুল ইসলাম খান
ছবি: প্রথম আলো

নির্বাচনী বিতর্কে ছাত্রদল মনোনীত প্যানেলের সহসভাপতি (ভিপি) প্রার্থী আবিদুল ইসলাম খান বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বিগত দীর্ঘদিনের শাসনামলে যে একাডেমিক অবস্থানে ছিল, সেখানে একটি নীতিই অবশিষ্ট ছিল মুজিব নীতি বা আওয়ামী নীতি। শিক্ষক কিংবা ছাত্র, প্রত্যেক জায়গাতেই প্রায় এ নীতিকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। আমরা সেই নীতির বাইরে এসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক জায়গাকে নতুনভাবে গড়ে তুলতে চাই।’

আবিদুল বলেন, ‘শিক্ষক নিয়োগে অবশ্যই স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে হবে। কোনো মতাদর্শের ভিত্তিতে নয়, যোগ্যতার ভিত্তিতে নিয়োগ দিতে হবে। শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার যথাযথ সুযোগ করে দিতে হলে আবাসন সমস্যার সমাধান জরুরি। আমরা সে বিষয়েও কাজ করার অঙ্গীকার করছি।’

রেজিস্ট্রার ভবনের দাপ্তরিক কাজে শিক্ষার্থীদের অগ্রাধিকার দেওয়ার আহ্বান জানানো হবে উল্লেখ করে আবিদুল ইসলাম খান বলেন, ‘ডাকসুর উদ্যোগে বছরে দুই থেকে তিনবার জব ফেয়ার আয়োজন করতে চাই, যেখানে করপোরেট কোম্পানিগুলো এসে শিক্ষার্থীদের চাকরির সুযোগ করে দেবে।’

ছাত্রশিবির সমর্থিত ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোট প্যানেলের সহসভাপতি (ভিপি) প্রার্থী সাদিক কায়েম বলেন, ‘আমরা যারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হই, আমাদের স্বপ্ন থাকে একটি একাডেমিক পরিবেশ পাব, গবেষণার সুযোগ থাকবে, আবাসনের সমস্যা থাকবে না, স্বাস্থ্য ও খাদ্যের নিরাপত্তা থাকবে। আমাদের জন্য এটি হবে একটি নিরাপদ ক্যাম্পাস। সেই স্বপ্ন পূরণ না হওয়া পর্যন্ত আমরা থামব না।’

তবে শুধু রাজনীতি নয়, সাদিক কায়েম শিক্ষার্থীদের জ্ঞানের প্রতি আগ্রহ তৈরি করা, নতুন নতুন বিজ্ঞান, উদ্ভাবন ও প্রযুক্তির প্রতি উদ্বুদ্ধ করার ওপর জোর দেন। বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়কে একটি একাডেমিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তোলার দায়িত্ব আমাদের।’

নির্বাচনী বিতর্কে নানা প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন ডাকসু নির্বাচনের সহসভাপতি (ভিপি) প্রার্থীরা
ছবি: প্রথম আলো

সাদিক বলেন, ‘আমাদের প্রথম দাবি থাকবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে একটি রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান থেকে বের করে এনে একাডেমিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা। এ জন্য শিক্ষক নিয়োগের প্রক্রিয়ায় পরিবর্তন আনতে হবে। দলীয় বিবেচনায় নয়, মেধার ভিত্তিতেই শিক্ষক নিয়োগ হতে হবে। একই সঙ্গে শিক্ষক মূল্যায়ন ব্যবস্থা চালু করতে হবে।’

স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী ঐক্য প্যানেলের সহসভাপতি (ভিপি) প্রার্থী উমামা ফাতেমা বলেন, ‘আমাদের প্যানেলের মূল লক্ষ্য হলো একটি স্বতন্ত্র, রাজনৈতিকভাবে সচেতন একাডেমিক ক্যাম্পাস গড়ে তোলা।’ তিনি বলেন,  প্রথমত, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান ছাত্ররাজনীতির কাঠামোতে একটি বড় পরিবর্তন প্রয়োজন। এই পরিবর্তনের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থী, ছাত্রসংগঠন এবং প্রশাসনের মধ্যে একটি সামাজিক চুক্তির মাধ্যমে উপযুক্ত নীতিমালা প্রণয়ন করতে হবে।

ডাকসুকে কার্যকর করতে হলে প্রথমেই ডাকসুকে নিয়মিত করার ওপর জোর দেন উমামা। তিনি বলেন, ‘আমি নির্বাচিত হলে ডাকসুর গঠনতান্ত্রিক সংশোধনের দাবি জানাব। এবং নিশ্চিত করব যে প্রতিবছর নির্দিষ্ট ক্যালেন্ডারের ভিত্তিতে নির্বাচনের আয়োজন হয়।’

উমামা বলেন, ‘বর্তমানে সিন্ডিকেট ও সিনেটে মাত্র ৫ জন শিক্ষার্থী প্রতিনিধি যান। এটি কোনোভাবেই যথেষ্ট নয়। আমরা চাই ডাকসুর ২৮ জন কেন্দ্রীয় পদপ্রাপ্ত প্রতিনিধি যেন সিনেট-সিন্ডিকেটে অন্তর্ভুক্ত হতে পারেন। পাশাপাশি সিন্ডিকেটের মিটিংয়েও যেন শিক্ষার্থীদের অন্তর্ভুক্তি থাকে, সেটি আমরা নিশ্চিত করব।’

‘যেহেতু তিনি নারী প্রার্থী, তাই নারী শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা তাঁর কাছে একটি প্রধান প্রশ্ন উল্লেখ করে উমামা বলেন, ‘আমরা চাইব এক হলের নারী শিক্ষার্থী যেন অন্য হলে প্রবেশ করতে পারেন। অনাবাসিক শিক্ষার্থীরা যেন অন্তত বিশ্রাম নেওয়া, খাবার খাওয়া বা নামাজ পড়ার জন্য হলে প্রবেশ করতে পারেন।’