জাপায় নাটকীয়তা বাড়ছে

রওশন এরশাদকে জাতীয় সংসদের বিরোধী দলের নেতার পদ থেকে সরাতে স্পিকারকে দেওয়া চিঠি এবার প্রত্যাহার চাইলেন মসিউর রহমান।

জাতীয় পার্টির প্রধান পৃষ্ঠপোষক রওশন এরশাদ এবং তাঁর দেবর ও পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদেরকে ঘিরে দলের ভেতরে উত্তেজনা চলছে
প্রথম আলো ফাইল ছবি

রওশন এরশাদকে ঘিরে জাতীয় পার্টিতে (জাপা) নাটকীয়তা আরও বাড়ছে। জাতীয় সংসদের বিরোধী দলের নেতার পদ থেকে রওশন এরশাদকে সরিয়ে উপনেতা জি এম কাদেরকে স্থলাভিষিক্ত করতে স্পিকারকে দেওয়া জাপার সংসদীয় দলের সিদ্ধান্ত এখনো কার্যকর হয়নি। এরই মধ্যে ওই চিঠি প্রত্যাহারের জন্য স্পিকারের কাছে আবেদন করেছেন জাপার সব পদ থেকে অব্যাহতি পাওয়া মসিউর রহমান রাঙ্গা। তিনি বিরোধী দলের চিফ হুইপ।

মসিউর রহমান গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে স্পিকারের কার্যালয়ে গিয়ে এ–সংক্রান্ত একটি চিঠি দেন। তবে জাপা বলছে, সংসদীয় দলের নেওয়া সিদ্ধান্ত বহাল আছে।

জানা গেছে, স্পিকারকে দেওয়া চিঠিতে রওশন এরশাদকে বিরোধী দলের নেতার পদ থেকে সরানোর সিদ্ধান্তে প্রক্রিয়াগত ত্রুটি ছিল বলে দাবি করেছেন মসিউর রহমান। চিঠিতে তিনি উল্লেখ করেন, গত ৩১ আগস্ট জাপার সংসদীয় দলের যে সভায় বিরোধী দলের নেতা পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত হয়, সে সভা আহ্বানের নোটিশে বিষয়টির উল্লেখ ছিল না। বিরোধী দলের চিফ হুইপ হিসেবে তিনি ওই সভা ডাকেন। পরদিন ১ সেপ্টেম্বর দলের ‘বিরোধী দলের নেতা পরিবর্তন প্রসঙ্গে’ জাপার ২৪ সংসদ সদস্যের সই করা যে চিঠি স্পিকারকে দেওয়া হয়, সেটিও তাঁর (মসিউর) স্বাক্ষরেই যায়।

চিঠিতে মসিউর উল্লেখ করেন, জাপার ২৬ সংসদ সদস্যের মধ্যে ৩১ আগস্টের সভায় ২৩ জনের উপস্থিতি উল্লেখ করা হয়। কিন্তু ১২ সংসদ সদস্যের স্বাক্ষরের তারিখ রয়েছে ১ সেপ্টেম্বর। সেদিন কোনো সভা হয়নি। এসব প্রক্রিয়াগত ত্রুটি উল্লেখ করে চিঠিটি প্রত্যাহার চেয়েছেন মসিউর।

অবশ্য জাপার চেয়ারম্যান ও বিরোধী দলের উপনেতা জি এম কাদের গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, বিরোধী দলের চিফ হুইপ হিসেবে মসিউর রহমান সংসদীয় দলের সিদ্ধান্ত স্পিকারকে ‘ফরোয়ার্ড’(পাঠানো) করেছিলেন। তিনি চাইলে নিজের ভোট প্রত্যাহার করতে পারেন। কিন্তু অন্যদের যে ভোট বা সিদ্ধান্ত এবং চিঠির যে বক্তব্য, সেটি তিনি প্রত্যাহার করতে পারেন না। দলের সিদ্ধান্ত ঠিকই আছে।

গত ২২ দিন ধরে জাপার অভ্যন্তরে উত্তেজনা চলছে জি এম কাদের ও রওশন এরশাদকে ঘিরে। ৩০ আগস্ট রওশন এরশাদ জাপার কেন্দ্রীয় সম্মেলন আহ্বান করে গণমাধ্যমে বিজ্ঞপ্তি পাঠানোর পর থেকে এর শুরু, যা এখন স্পিকারের কার্যালয়ে গিয়ে ঠেকেছে। গত রোববার জাপার মহাসচিব মুজিবুল হকের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল স্পিকারের সঙ্গে দেখা করে সংসদীয় দলের নেওয়া সিদ্ধান্তের অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে চান।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, স্পিকার এ বিষয়ে আইনমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলে সিদ্ধান্ত নিতে চান বলে প্রতিনিধিদলকে বলেছেন।

জাপার দায়িত্বশীল একটি সূত্র জানায়, স্পিকারের সিদ্ধান্ত প্রলম্বিত হওয়ায় জাপার অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে জটিলতা বাড়ছে। অনেকে মনে করছেন, এ ক্ষেত্রে সরকার রওশন এরশাদের পক্ষ নিয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে বিরোধী দলের নেতার পদ থেকে রওশন এরশাদকে সরানোর চিঠি প্রত্যাহার চেয়ে স্পিকারের কাছে মসিউর রহমানের আবেদন জাপায় আরও জটিলতা বাড়াবে বলে মনে করছেন অনেকে।

অবশ্য স্পিকারকে চিঠি দেওয়ার পর মসিউর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, সংসদীয় দলের সিদ্ধান্তের বিষয়ে তিনি এর আগে যে চিঠি দিয়েছিলেন, সেটা তিনি প্রত্যাহার করতে চান বলে স্পিকারকে জানিয়েছেন। যেহেতু প্রক্রিয়া ঠিক হয়নি, তাই তিনি তাঁর সই করা চিঠি প্রত্যাহার করার বলেছেন। স্পিকার বলেন, তিনি আইনগত দিক দেখে সিদ্ধান্ত নেবেন।

এই চিঠির রেশ ধরেই মসিউরকে সভাপতিমণ্ডলীসহ দলের সব পদপদবি থেকে অব্যাহতি দেন জাপার চেয়ারম্যান। মসিউর রহমানকে অব্যাহতি দেওয়ার পর গতকাল মঙ্গলবার রংপুর জেলা কমিটি বিলুপ্ত করে ৩১ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করেছে জাপা। মসিউর রহমান দীর্ঘদিন রংপুর জেলা কমিটির সভাপতি ছিলেন। নতুন আহ্বায়ক কমিটিতে আবুল মাসুদ চৌধুরীকে আহ্বায়ক এবং আবদুর রাজ্জাককে সদস্য সচিব করা হয়েছে।

মসিউর রহমান গত রাতে মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি আবুল মাসুদ চৌধুরীকে ফোন করে নতুন কমিটিকে অভিনন্দন জানিয়েছি। আমি আশা করি, নতুন কমিটি চেয়ারম্যানকে সহযোগিতা করবে। দল যেন দুর্বল না হয়, সেদিকে তারা দৃষ্টি রাখবেন।’