‘ঝুঁকি’ আছে জেনেই প্রার্থী হতে মনোনয়ন ফরম নিলেন আসিফ মাহমুদ
ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনে ঢাকা–১০ আসনে প্রার্থী হতে নিজেই থানা নির্বাচনী কার্যালয়ে গিয়ে মনোনয়ন ফরম তুললেন উপদেষ্টার পদ ছেড়ে আসা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। তাঁর জীবনের নিরাপত্তা যে ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে, তা জানার কথাও বললেন জুলাই অভ্যুত্থানের এই নেতা।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের একজন সমন্বয়ক হিসেবে জুলাই অভ্যুত্থানের নেতৃত্বে সামনের কাতারে থাকা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী আসিফ মাহমুদ গত বছর অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের শুরুতেই উপদেষ্টা পদে শপথ নিয়েছিলেন। ভোটে প্রার্থী হওয়ার ইচ্ছা পোষণের পর নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগের দিন গত ১১ ডিসেম্বর তিনি উপদেষ্টা পরিষদ থেকে পদত্যাগ করেন।
আজ সোমবার ঢাকার ধানমন্ডি থানা নির্বাচন কার্যালয়ে গিয়ে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করে প্রার্থী হতে আরেক ধাপ এগিয়ে যান আসিফ মাহমুদ।
আসিফ মাহমুদের জুলাইয়ের সহযোদ্ধারা নতুন রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) গঠন করে নির্বাচনের মাঠে নামলেও তিনি দলটিতে যোগ দেননি। তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিলেও শেষ পর্যন্ত তিনি এনসিপিতে যোগ দিতে পারেন বলে আলোচনা রয়েছে।
নির্বাচিত হলে অন্তর্বতী সরকারের উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করার অভিজ্ঞতা কাজে লাগাবেন জানিয়ে আসিফ মাহমুদ সাংবাদিকদের বলেন, ‘এ অভিজ্ঞতা অত্যন্ত প্রয়োজনীয় ছিল। এখন আমরা শিখেছি যে কীভাবে সমস্যার সমাধান করতে হয়, কোন অফিসে কোন কাজ হয়।’
জুলাই অভ্যুত্থানে সক্রিয় শরিফ ওসমান হাদি ঢাকা–৮ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে তৎপর ছিলেন। তফসিল ঘোষণার পরদিনই তাঁকে গুলি করা হয়। ছয় দিন মৃত্যুর সঙ্গে লড়ে গত বৃহস্পতিবার মারা যান তিনি। হাদি হত্যাকাণ্ডের পর রাজনীতিকদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।
ওসমান হাদি হত্যাকাণ্ডে জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তারে সরকারের ব্যর্থতার সমালোচনা করে আসিফ মাহমুদ বলেন, ‘এখন পর্যন্ত সরকার আসামিদের গ্রেপ্তার করতে ব্যর্থ হয়েছেন। আসামিদের আইডেন্টিফাই করা হয়েছে। তারা কোথায় আছে, সেটাও সরকার নিশ্চিত করতে পারছে না। এটা দুঃখজনক। এ জায়গায় শুধু আমি না, সকল প্রার্থীর জন্যই একটা ঝুঁকির জায়গা থেকে যায়।’
অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুতরা জুলাই আন্দোলনের নেতাদের হত্যার ষড়যন্ত্র করছে, এমন খবর পাওয়ার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘জুলাই গণ–অভ্যুত্থানে যারা নেতৃত্ব দিয়েছে, তাদের টার্গেট করা হচ্ছে বলে আমরা বিভিন্ন মাধ্যমে শুনতে পেরেছি, জানতে পেরেছি। আমাকেও সরকারের বিভিন্ন স্তর এবং বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা থেকে মাঝেমধ্যে জানানো হয় যে আপনার নিরাপত্তাঝুঁকি আছে। এখানে যেতে পারবেন না, ওখানে যেতে পারবেন না।’
প্রার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে সাবেক উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ বলেন, ‘আমরা যদি ফ্রিলি মুভ না করতে পারি (অবাধে চলাচল) নির্বাচনী প্রচারণার ক্ষেত্রে আমাদের অনেকখানি পিছিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে। সে ক্ষেত্রে আমি মনে করি, শুধু আমি না, এ ধরনের যাদের ক্ষেত্রেই ঝুঁকি আছে, সেটা সরকার এবং সরকারের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো ভালো বলতে পারবে, তাদেরকে নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য সরকার সর্বোচ্চ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।’
তিনি বলেন, ‘শহীদ ওসমান হাদির মত অবস্থা যেন আর কারো না হয়। এর মধ্য দিয়ে দেশের পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করা নির্বাচন বানচাল করা এবং বাংলাদেশকে একটা অন্ধকার দিকে ঠেলে দেওয়ার সুযোগ যেন কেউ না পায়, সেটা সরকারকে নিশ্চিত করতে হবে।’
নানা গোষ্ঠী দেশকে অস্থিতিশীল করে নির্বাচন বানচাল করতে চাইছে বলে দাবি করে তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগকে ছাড়া তারা কোনো ধরনের নির্বাচন হতে দিতে চায় না। আমরা স্পষ্টভাবে বলতে চাই, বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক রূপান্তর এখন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ—বাংলাদেশের সামগ্রিক স্থিতিশীলতা, সার্বভৌমত্ব ও স্বাধীনতা রক্ষার জন্য।’
ঢাকা–১০ আসনে অন্য প্রার্থীদের বিরুদ্ধে নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ তোলেন আসিফ মাহমুদ। তিনি বলেন, ‘ইতিমধ্যেই আমরা দেখেছি, ঢাকা–১০ আসনে নির্বাচনের আচরণবিধি অন্যান্য প্রার্থীরা লঙ্ঘন করছেন। পোস্টার– ব্যানার ছিঁড়ে ফেলার কথা ছিল, নির্বাচনী প্রচারণাসংক্রান্ত কিছুই থাকার কথা ছিল না; কিন্তু আমরা এখনো দেখছি সেগুলো আছে। অনেকেই নির্বাচনী বুথ স্থাপন করছেন, যেটা আসলে ২২ জানুয়ারির আগে করার কথা না। এ ধরনের কার্যক্রম যেন কোনো প্রার্থী না করতে পারেন, সেটা নিশ্চিত করতে হবে।’
রাজধানীর ধানমন্ডি, কলাবাগান, নিউমার্কেট ও হাজারীবাগ এলাকা নিয়ে গঠিত ঢাকা–১০ আসনে বিএনপির মনোনয়ন পেয়েছেন দলটির নির্বাহী কমিটির সদস্য শেখ রবিউল আলম। জামায়াত প্রার্থী করছে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী জসীম উদ্দিন সরকারকে। জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) এখন পর্যন্ত এই আসনে প্রার্থী ঘোষণা করেনি।