সংসদে প্রতিনিধিত্ব চান জুলাই শহীদ পরিবারের সদস্যরা

জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষ্যে বিএনপির বিশেষ আলোচনা সভায় শহীদ পরিবারের সদস্যরাছবি: প্রথম আলো

ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনে সংসদের উচ্চকক্ষ (প্রস্তাবিত) ও নিম্ন কক্ষে নিজেদের প্রতিনিধিত্ব চেয়েছেন জুলাই অভ্যুত্থানে শহীদ হওয়া ব্যক্তিদের পরিবারের সদস্যরা।

আজ মঙ্গলবার জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের বর্ষপূতি উপলক্ষে বিএনপি আয়োজিত ‘গণ-অভ্যুত্থান ২০২৪, জাতীয় ঐক্য ও গণতান্ত্রিক অভিযাত্রা’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় তাঁরা এ প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন। বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আয়োজিত এ সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। তিনি অনলাইনে যুক্ত হয়ে বক্তব্য দেন। এ ছাড়া ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হয়ে সভা উদ্বোধন করেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। বিশেষ অতিথি ছিলেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

আলোচনা সভার শুরুতে জুলাই অভ্যুত্থানে শহীদ, আহতসহ বিগত সরকারের আমলে গুম-খুন-নির্যাতনের শিকার ব্যক্তিদের পরিবারের সদস্যরা বক্তব্য দেন। জুলাই অভ্যুত্থানে সাভারে শহীদ হওয়া ইয়ামিনের বাবা মহিউদ্দিন বলেন, শান্তির স্বার্থে শুধু সংসদের উচ্চকক্ষের নির্বাচন সংখ্যানুপাতিক (পিআর) পদ্ধতিতে হওয়া উচিত। একই সঙ্গে আগামী নির্বাচনে শহীদ পরিবার (জুলাই অভ্যুত্থান) থেকে সংসদের উচ্চ ও নিম্নকক্ষে ১০ জন প্রতিনিধি মনোনয়নের আশা করেন বলে জানান তিনি।

সভায় অনলাইনে যুক্ত হয়ে বক্তব্য দেন বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া
ছবি: প্রথম আলো

মীর মাহফুজুর রহমান মুগ্ধর বাবা মীর মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, শহীদ পরিবার থেকে অংশীদারত্ব রাখতে হবে। রংপুরে শহীদ আবু সাঈদের ভাই রমজান আলী বলেন, ‘আবু সাঈদ যদি বুক পেতে না দাঁড়াত, দেশের পরিস্থিতি (পরিবর্তন) এত সহজ হয়ে আসত না । আবু সাঈদ গুলির সামনে বুক পাতিয়ে সকল পেশাজীবী, দলমত-নির্বিশেষে সবাইকে সাহস জুগিয়েছিল।’

সরকার থেকে শহীদ পরিবারগুলোর খোঁজখবর নেওয়া হয় না বলে সভায় অভিযোগ করেন জুলাই অভ্যুত্থানে উত্তরায় শহীদ হওয়া আবদুল্লাহ বিন জাহিদের মা ফাতেমাতুজ জোহরা। তিনি বলেন, যাদের রক্তের বিনিময়ে এই পরিবর্তন, এই সরকার, তারা এখনই খোঁজ নেয় না, পরে আর কী হবে!

বিগত সরকারের আমলে গুমের শিকার বিএনপি নেতা ইলিয়াস আলীর স্ত্রী তাহসীনা রুশদীর অভিযোগ করে বলেন, গুম কমিশনে অভিযোগ জমা দেওয়ার পর বারবার তাঁরা ফোন করে আমাদের কাছ থেকে তথ্য নিতে চাচ্ছে। জানতে চেয়েছে, ইলিয়াস আলী ফিরে এসেছেন কি না। এসব থেকে ধারণা করা যায়, কমিশনের কাজের গতি কী, কতটা গুরুত্ব দিয়ে তারা কাজ করছে। ট্রাইব্যুনালে গুমের কোনো আইন না থাকার প্রসঙ্গটি টেনে তাহসীনা বলেন, ‘মামলা করব কীভাবে। সেই ২০১২ সালে জিডি করেছি, হাইকোর্টে রিটও করেছিলাম।’ মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য রাষ্ট্র কেন বাদী হয় না, এমন প্রশ্নও তোলেন তিনি।

গুম হওয়া ব্যক্তিদের স্বজনদের সংগঠন ‘মায়ের ডাক’–এর আহ্বায়ক সানজিদা ইসলাম বলেন, ‘যাঁদের বিরুদ্ধে গুমের অভিযোগ, তাঁদের বিচার করতে হবে। শেষ রক্তবিন্দু থাকা পর্যন্ত আমরা লড়ব।’

গুম হওয়া এক ব্যক্তির স্বজনের কান্না
ছবি: প্রথম আলো

গুমের শিকার পুরান ঢাকার ছাত্রদল নেতা পারভেজ হোসেনের মেয়ে আবিদা ইসলাম বলেন, ‘১২ বছর ধরে বাবাকে খুঁজছি। ৫ আগস্টের পরে মনে হয়েছিল, বাবাকে ফেরত পাব, কিন্তু খোঁজই পাইনি।’

বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর সভাপতিত্বে সভায় আরও বক্তব্য দেন গুমের শিকার নুরুজ্জামান জনির ছোট ভাই মনিরুজ্জামান, চট্টগ্রামে ছাত্রদল নেতা শহীদ মোহাম্মদ ওয়াসিমের বাবা শফিউল আলম, ছাত্রলীগের হামলায় নিহত বিশ্বজিৎ দাসের বাবা অনন্ত চন্দ্র দাস প্রমুখ। সভাটি সঞ্চালনা করেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি।