মহাসমাবেশ থেকে আন্দোলনের গতি পাল্টাবে বিএনপি

২৭ জুলাই ঢাকার মহাসমাবেশ থেকে নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকারের দাবি মানার জন্য বর্তমান সরকারকে একটা সময়সীমা বেঁধে দিতে পারে বিএনপি। দলটির উচ্চপর্যায়ের একাধিক সূত্র বলছে, এই সময়সীমা হতে পারে সংক্ষিপ্ত। বেঁধে দেওয়া সময়ের মধ্যে দাবি না মানলে সরকার হটানোর লক্ষ্যে টানা কর্মসূচিতে যাবে বিএনপিসহ সরকারবিরোধী যুগপৎ আন্দোলনে থাকা দল ও জোটগুলো।

বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের দায়িত্বশীল নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এই মুহূর্তে তাঁদের সব মনোযোগ আগামীকালের (২৭ জুলাই) ঢাকার মহাসমাবেশের দিকে। সমাবেশে সর্বোচ্চ উপস্থিতি নিশ্চিত করতে দলের নীতিনির্ধারকেরা নানামুখী চেষ্টা ও সাংগঠনিক তৎপরতা চালাচ্ছেন।

এর অংশ হিসেবে বিএনপির কেন্দ্রীয় দপ্তর থেকে ইতিমধ্যেই সারা দেশে দলের সব পর্যায়ের কমিটির সদস্যদের মহাসমাবেশে উপস্থিত থাকার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে দূরের (ঢাকা থেকে) জেলা ও মহানগরের নেতা-কর্মীদের আগেভাগেই ঢাকায় পৌঁছানোর পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

আরও পড়ুন

তবে গতকাল আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের একটি বক্তব্যের পর ঢাকার মহাসমাবেশ কতটা নির্বিঘ্ন হয়, তা নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে বিএনপির নীতিনির্ধারকদের মধ্যে।

গতকাল আওয়ামী লীগের এক সভায় সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বিএনপিকে লক্ষ্য করে সীমান্ত দিয়ে ‘অস্ত্র কেনা ও মজুতের’ অভিযোগ তোলেন।

এই বক্তব্যের বিষয়ে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব মনে করছে, রাজপথে একটা সশস্ত্র সাংঘর্ষিক অবস্থা সৃষ্টি করা হতে পারে। এর অংশ হিসেবেই ক্ষমতাসীন দলের অন্যতম শীর্ষ নেতা এমন কথা বলেছেন।

এ বিষয়ে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গত রাতে প্রথম আলোকে বলেন, ‘তাঁর (ওবায়দুল কাদের) বক্তব্যের মধ্য দিয়ে পরিষ্কার হয়ে যায় যে তাঁরা নতুন চক্রান্ত শুরু করেছেন। আমাদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিকে সংঘাতের দিকে নিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা তৈরি করছে। অথচ অস্ত্র নিয়ে যা কিছু হচ্ছে, তার সবই সরকার ও সরকারি দল করছে।’

আরও পড়ুন

বিএনপির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, সামগ্রিক পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে ঢাকার মহাসমাবেশ সফল করতে কয়েক ধরনের পরিকল্পনা রয়েছে। এর একটি হচ্ছে, সমাবেশে বাধা না দিলে তারা শান্তিপূর্ণভাবেই মহাসমাবেশ করবে। এই মহাসমাবেশ থেকে স্বল্প সময়ের ব্যবধানে বিরতিহীন কর্মসূচি দেওয়া হতে পারে। আর সমাবেশে বাধা দিলে সেদিনই রাজধানীর একাধিক জায়গায় নেতা–কর্মীরা জমায়েত হয়ে সমাবেশ করবেন।

তাঁর (ওবায়দুল কাদের) বক্তব্যের মধ্য দিয়ে পরিষ্কার হয়ে যায় যে তাঁরা নতুন চক্রান্ত শুরু করেছেন। আমাদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিকে সংঘাতের দিকে নিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা তৈরি করছে। অথচ অস্ত্র নিয়ে যা কিছু হচ্ছে, তার সবই সরকার ও সরকারি দল করছে।
মির্জা ফখরুল ইসলাম, মহাসচিব, বিএনপি

ওই সূত্রগুলো জানিয়েছে, ঢাকার মহাসমাবেশকে ঘিরে পুলিশ ও প্রশাসন কী ধরনের আচরণ করে, তার ওপর ভিত্তি করে নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকারের দাবি মানার জন্য সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হতে পারে। তবে বিএনপির সর্বাত্মক চেষ্টা হচ্ছে মহাসমাবেশে বিপুল উপস্থিতি নিশ্চিত করা। এর মধ্য দিয়ে সরকারের ওপর চাপ বাড়াতে চায় দলটি। অন্যদিকে বড় জমায়েত করে আন্তর্জাতিক মহলকেও বিএনপি দেখাতে চায় যে জনগণ আর এ সরকারকে চায় না, তারা বিএনপির সঙ্গেই আছে। আর মহাসমাবেশের কর্মসূচি নিয়ে সরকার যদি বাড়াবাড়ি করে, সেটিও আন্তর্জাতিক মহলকে দেখানো যাবে।

সামনের কর্মসূচিগুলোকে একদিকে ঝুঁকিপূর্ণ, অন্যদিকে লক্ষ্য অর্জনের জন্য ইতিবাচক হবে বলে ভাবছে বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্ব। তাঁরা মনে করছেন, সাম্প্রতিক কর্মসূচিগুলোতে মানুষের অংশগ্রহণ বাড়ছে। সামনে আরও বাড়বে।

যুগপৎ আন্দোলনের বাইরে থাকা জামায়াতে ইসলামীর ২৭ জুলাই কোনো কর্মসূচি নেই। তবে দলটি তিন দিনের পৃথক কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। এর মধ্যে আছে ২৮ জুলাই সব বিভাগীয় শহরে ও ৩০ জুলাই জেলা সদরে বিক্ষোভ মিছিল এবং ১ আগস্ট ঢাকায় সমাবেশ।

আরও পড়ুন

গতকাল জামায়াতের একটি প্রতিনিধিদল ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কাছে ১ আগস্টের সমাবেশের বিষয়ে অনুমতি চেয়ে আবেদন করেছে। দলটি জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের উত্তর গেটে সমাবেশ করতে চায়। বিএনপির কর্মসূচির সঙ্গে দলটির দূরত্ব এখনো রয়ে গেছে।

জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের গত রাতে প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিএনপির মহাসমাবেশের প্রতি আমাদের নীতিগত সমর্থন আছে।’

এক বছর ধরে সারা দেশে বিক্ষোভ সমাবেশ, বিভাগীয় গণসমাবেশ, পদযাত্রা, তারুণ্যের সমাবেশসহ নানা কর্মসূচির পর ঢাকায় মহাসমাবেশের কর্মসূচি দিয়েছে বিএনপি। এই দিন গণতন্ত্র মঞ্চ, ১২–দলীয় জোট, জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট, এলডিপি, গণফোরামসহ আরও কিছু দল মহাসমাবেশ করবে। এবি পার্টিও ২৭ জুলাই প্রতিবাদী অবস্থান ও বিক্ষোভ করবে বিজয়-৭১ চত্বরে।

এ ছাড়া চরমোনাই পীরের দল ইসলামী আন্দোলনও ২৭ জুলাই ঢাকায় সমাবেশের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে।

গত রোববার খুলনার মোরেলগঞ্জে ইসলামী আন্দোলনের তৃণমূল প্রতিনিধি সম্মেলনে দলের দ্বিতীয় শীর্ষ নেতা মুফতি ফয়জুল করিমকে বক্তব্য দিতে পুলিশের বাধা ও অসৌজন্যমূলক আচরণের প্রতিবাদে এবং নির্বাচন কমিশন বাতিল, সংখ্যানুপাতিক নির্বাচন পদ্ধতির প্রবর্তন, বিদ্যমান রাজনৈতিক সংকট উত্তরণে সংসদ ভেঙে দিয়ে জাতীয় সরকারের অধীনে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ সংসদ নির্বাচনের দাবিতে এ সমাবেশ হবে।

এক বছর ধরে সারা দেশে বিক্ষোভ সমাবেশ, বিভাগীয় গণসমাবেশ, পদযাত্রা, তারুণ্যের সমাবেশসহ নানা কর্মসূচির পর ঢাকায় মহাসমাবেশের কর্মসূচি দিয়েছে বিএনপি। এই দিন গণতন্ত্র মঞ্চ, ১২–দলীয় জোট, জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট, এলডিপি, গণফোরামসহ আরও কিছু দল মহাসমাবেশ করবে। এবি পার্টিও ২৭ জুলাই প্রতিবাদী অবস্থান ও বিক্ষোভ করবে বিজয়-৭১ চত্বরে।

২৭ জুলাই একই দিনে বিএনপিসহ ৩৬টি দলের পাশাপাশি ইসলামী আন্দোলনের সমাবেশ সরকারের জন্য একটি বাড়তি চাপ তৈরি করবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

ইসলামী আন্দোলনের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব গাজী আতাউর রহমান গত রাতে প্রথম আলোকে বলেন, ‘পুলিশ সমাবেশের অনুমতি দেওয়া নিয়ে গড়িমসি করছে। সমাবেশ পেছাতে বলেছে। তবে আমরা ২৭ জুলাই সমাবেশ করব।’