এক বছর না যেতেই ত্যাগ-তিতিক্ষা ভুলে পরস্পরকে অপমান করছি: সালাহউদ্দিন আহমদ

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদফাইল ছবি

জুলাই–আগস্ট গণ–অভ্যুত্থানের এক বছর না যেতেই রাজনৈতিক দলগুলো পরস্পরকে অপমানসূচক কথাবার্তার সমালোচনা করেছে, বলেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ। তিনি বলেন, ‘এক বছর যেতে না যেতেই ত্যাগ-তিতিক্ষা ভুলে যাচ্ছি। পরস্পর পরস্পরকে অপমানিত করার সুযোগ করছি। কেন জানি না, আমাদের মধ্যে সেই চর্চা ইদানীং শুরু হয়ে গেছে।’

আজ রোববার সন্ধ্যায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র–শিক্ষক কেন্দ্র (টিএসসি) মিলনায়তনে এক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে সালাহউদ্দিন আহমদ এ কথা বলেন। আদর্শ প্রকাশনের আয়োজনে ছাত্রদলের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবিদুল ইসলাম খানের ‘স্ফুলিঙ্গ থেকে দাবানল: অভ্যুত্থানের অজানা অধ্যায়’ শীর্ষক বইয়ের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠান হয়।

সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘আজ গণতান্ত্রিক শক্তিগুলোর মধ্যে বিভেদ কারা করছে? কারা শক্তিগুলোর মধ্যে লড়াই সৃষ্টি করে দিয়ে আরাম উপভোগ করছে? তারা কারা? তারা ওরাই, যারা আমাদের মধ্যে বিভক্তির মধ্য দিয়ে সুযোগ নেবে, বাংলাদেশকে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র বিনির্মাণ হতে দিতে চায় না, ফ্যাসিবাদের আগমনকে স্বাগতম জানাতে চায়, গণতান্ত্রিক সংগ্রামকে স্বাভাবিকভাবে নিতে পারেনি, যারা বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে নিয়ে এখন পর্যন্ত প্রশ্ন তুলতে চায়। তবে আমি কাউকে উদ্দেশ্য করে বলছি না।’

স্বাধীনতা–উত্তর বাংলাদেশে আর কোনো বিভক্তি চান না উল্লেখ করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, ‘কারা স্বাধীনতার বিরুদ্ধে ছিল, কারা স্বাধীনতার পক্ষে ছিল, এই বিভক্তি তো আওয়ামী লীগ করেছে। স্বাধীনতার পক্ষের এবং বিপক্ষের শক্তি সাজিয়ে স্বাধীনতার চেতনা, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিক্রি করে তারাই ফায়দা নিয়েছে। সেই একই রাজনৈতিক অস্ত্র কি আমরা ব্যবহার করব? আমরা করতে পারি? আমরা ঐক্যবদ্ধ বাংলাদেশ চাই। সেই ঐক্য হবে জুলাইয়ের ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের ফ্যাসিবাদবিরোধী ঐক্য। এই ঐক্যের যারা বিরুদ্ধে, তারা এখন দিল্লিতে। এই ঐক্যের যারা বিরুদ্ধে, তারা ফ্যাসিবাদের দোসর হয়ে বাংলাদেশে হয়তো ঘাপটি মেরে বসে আছে। তারা ছাড়া সবাই আমরা ঐক্যবদ্ধ।’

সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ঐক্যবদ্ধ শক্তির মধ্যে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে কিছুটা বিতর্ক হবে, কিছুটা সংগ্রাম হবে, নির্বাচন হবে, কেউ বিরোধী দলে যাবে, কেউ সরকারি দল যাবে, কেউ তর্ক-বিতর্ক করবে। কিন্তু সেটি বাংলাদেশের শক্তিশালী রাষ্ট্রকাঠামো বিনির্মাণের জন্যই হবে। তিনি আরও বলেন, ‘যারা সংস্কারের কথা বলছি, ফ্যাসিস্টদের বিচারের কথা বলছি, সবাইকে একজায়গায় দাঁড়াতে হবে। সেটা হতে হবে গণ–ঐক্য। ফ্যাসিবাদবিরোধী ঐক্যকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে।’

আওয়ামী লীগকে জাতীয় নিরাপত্তার জন্য ঝুঁকি মন্তব্য করে এই বিএনপি নেতা বলেন, ‘তারা বুঝিয়ে দিল, তারা বাংলাদেশের প্রোডাক্ট নয়। আওয়ামী লীগ কোনো রাজনৈতিক দল নয়। আওয়ামী লীগ একটি মাফিয়া, স্বৈরতান্ত্রিক এবং ফ্যাসিস্ট শক্তি। তাই তাদের নিয়ে বেশি কথা বলা আমার পক্ষে জায়েজ মনে হয় না।’ তিনি বলেন, ‘আমাদের বিদেশি বন্ধু থাকবে, তবে বিদেশি কোনো প্রভু থাকবে না। দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্বের জন্য ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।’

বিএনপির ধারাবাহিক আন্দোলনের কারণেই ৫ আগস্ট এসেছে দাবি করে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের উপদেষ্টা মাহদী আমিন বলেন, প্রথম ১৬ বছর বিএনপি তার কাজ করেছে। এরপর বিএনপির সঙ্গে সব ধর্ম–মত, শ্রেণি–পেশার মানুষ নেমে এসেছিলেন বলেই এই জুলাই গণ–অভ্যুত্থান সম্ভব হয়েছে। মাহদী আমিন বলেন, এখন সংস্কারের কথা বলা হচ্ছে। সবচেয়ে বড় সংস্কার হলো নির্বাচন। কারণ, গত ১৬ বছর দেশের মানুষ নির্বাচন থেকে বঞ্চিত হয়েছিলেন।

আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য দেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক শামীমা সুলতানা, বাসসের প্রধান সম্পাদক মাহবুব মোর্শেদ, আদর্শ প্রকাশনের প্রকাশক মাহাবুব রাহমান, অনলাইন অ্যাকটিভিস্ট সাইয়্যেদ আবদুল্লাহ, জুলাই গণ–অভ্যুত্থানে শহীদ মানিক মিয়া চৌধুরীর বাবা আনিস চৌধুরী প্রমুখ। স্বাগত বক্তব্য দেন বইয়ের লেখক আবিদুল ইসলাম খান।