দেশে আর চেতনার ব্যবসা চলবে না: সালাহউদ্দিন

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বক্তব্য দিচ্ছেন। আজ শনিবার জাতীয় জাদুঘরের প্রধান মিলনায়তনে এক অনুষ্ঠানেছবি: প্রথম আলো

আওয়ামী লীগের মতো ‘স্বাধীনতার পক্ষের-বিপক্ষের শক্তি’র বিষয় টেনে দেশের মানুষের মধ্যে বিভক্তি সৃষ্টি করা উচিত হবে না বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ। তিনি বলেন, বিএনপি এটি সমর্থন করে না। স্বাধীনতার ৫৪ বছর পরে এই চেতনার ব্যবসা আর চলবে না।

আজ শনিবার সন্ধ্যায় রাজধানীর জাতীয় জাদুঘরের প্রধান মিলনায়তনে এক জাতীয় সম্মেলনে সালাহউদ্দিন আহমদ এসব কথা বলেন। হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের শীর্ষ চার নেতা ‘আল্লামা শাহ আহমাদ শফী, আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী, আল্লামা নূর হুসাইন কাসেমী ও আল্লামা নূরুল ইসলাম জিহাদীর নেতৃত্ব, ত্যাগ ও সংগ্রাম’ শীর্ষক এই জাতীয় কনফারেন্সের আয়োজন করে শায়খুল হাদীস পরিষদ।

সম্মেলনে জুলাই গণ–অভ্যুত্থান নিয়েও চেতনার ব্যবসা না করার অনুরোধ জানান বিএনপির এই নেতা। তিনি বলেন, কেউ যদি মনে করে, তারা জুলাইয়ের একমাত্র ধারক-বাহক, তাহলে আবার জাতির মধ্যে বিভক্তি আসবে। শুধু একটি শক্তিকেই স্বীকৃতি দিতে হবে, সেটি হলো ফ্যাসিবাদবিরোধী জাতীয় ঐক্য।

কয়েকটি দলের মাঠের কর্মসূচির প্রসঙ্গ টেনে সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, সবকিছুর সমাধান আলোচনার টেবিলে হবে। টেবিলে আলোচনার পাশাপাশি মাঠের আন্দোলনে যাওয়া স্ববিরোধিতা। এমন কোনো নজির স্থাপন করা যাবে না, যা দুদিন টিকবে না। একই বিষয়ে যাতে দুই বছর পর আবার আন্দোলন করা না লাগে।

হেফাজতে ইসলামের নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, ‘আপনাদের আগের এবং বর্তমান চাহিদা...চাহিদা তো একটাই—দ্বীন (ধর্ম) পেহেলে, প্রথমে দ্বীন; তারপরে রাজনীতি। আজকে বাংলাদেশে কিছু কিছু শক্তির দেখি পহেলা রাজনীতি, বাদ মে দ্বীন।’

ইসলামপন্থী কয়েকটি দলের সমালোচনা করে সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘কেউ কেউ বলছেন, ইসলামের জন্য একটা আলাদা বাক্স বসিয়ে দাও (নির্বাচনে ইসলামপন্থীদের সব ভোট এক বাক্সে আনার চেষ্টা), তো আমরা কি ইসলাম থেকে খারিজ হয়ে গেলাম নাকি ভাই সাহেব? আপনারা কি খারিজ হয়ে গেছেন? ইসলামের জন্য বাক্স নয়, এটা রাজনীতির বাক্স। রাজনীতি দিয়ে ইসলামের শক্তিকে বিভক্ত করা ঠিক নয়।’

বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, ৯০ থেকে ৯২ শতাংশ মুসলমানের দেশে মানুষদের বিভক্ত রাখতে পারলে কাদের লাভ, সেটা বুঝতে হবে। সবাই যেন ঐক্যবদ্ধ থাকে। ইসলাম নিয়ে কেউ যেন বিভাজনের, বিভ্রান্তিকর রাজনীতি না করে।

আওয়ামী লীগের রক্তে কোনো দিন গণতন্ত্র ছিল না উল্লেখ করে সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, তাদের ডিএনএ–তে গণতন্ত্র নেই। জন্ম থেকে আজ পর্যন্ত তারা বাংলাদেশের পক্ষে রাজনীতি করেনি। যাদের পক্ষে তারা কাজ করেছে, তারা আজ তাদের আশ্রয় দিয়েছে। তাদের উৎপত্তি সেখানে, বিনাশও সেখানে হবে বলে আশা করা যায়।

সম্মেলনে হেফাজতে ইসলামের আমির আল্লামা মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী বলেন, হেফাজতের এই চার নেতা (আহমাদ শফী, জুনায়েদ বাবুনগরী, নূর হুসাইন কাসেমী ও নূরুল ইসলাম জিহাদী) সঠিক তরিকার (ধারা) ওপর ছিলেন। সবাইকে তাদের তরিকার ওপর থাকার চেষ্টা করতে হবে। যারা বলে সাহাবায়ে কেরামদের অনুসরণ করা জরুরি নয়, তাদের কথা অনুসরণ করে চললে জাহান্নাম ছাড়া আর কোনো উপায় থাকবে না।
হেফাজতের মহাসচিব মাওলানা সাজিদুর রহমান বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারকে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ধর্মীয় শিক্ষক নিয়োগের সিদ্ধান্ত নিতে হবে। গানের শিক্ষক নিয়োগের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করতে হবে। তা না হলে হেফাজতে ইসলাম আবার কর্মসূচি দিতে বাধ্য হবে।

উলামায়ে কেরামের মাঝে ইসলামবিরোধী শক্তি বিভক্তি সৃষ্টি করতে চাচ্ছে উল্লেখ করে খেলাফত মজলিসের মহাসচিব আহমাদ আবদুল কাদের উলামায়ে কেরামকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানান।

সম্মেলনে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সদস্যসচিব আখতার হোসেন বলেন, ইসলামের বিধিনিষেধগুলো মানার কারণে দেশের মানুষকে যাতে আর অন্যায়, জুলুমের শিকার হতে না হয়, সেই শপথ নিয়েই বাংলাদেশে রাজনীতি করতে হবে।

সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন শায়খুল হাদীস পরিষদের প্রধান পৃষ্ঠপোষক মাওলানা মাহফুজুল হক। সঞ্চালনা করেন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক হাসান জুনায়েদ, সহ–সাধারণ সম্পাদক এহসানুল হক এবং প্রচার সম্পাদক আল আবিদ শাকির। এতে আরও বক্তব্য দেন গণ অধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান, হেফাজতে ইসলামের নায়েবে আমির মাওলানা আবদুল কাইয়ুম, যুগ্ম মহাসচিব ফজলুল করীম কাসেমী ও আজিজুল হক ইসলামাবাদী, আন্তর্জাতিক মজলিসে তাহাফুজে খতমে নবুওয়ত বাংলাদেশের মহাসচিব মাওলানা মুহিউদ্দিন রব্বানী, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের নায়েবে আমির হেলাল উদ্দিন প্রমুখ।