ঐক্য বিনষ্টের বিষয়ে মিত্রদের সতর্ক করল বিএনপি

ফাইল ছবি

বিএনপি মনে করছে, বিরোধী দলগুলোর চলমান যুগপৎ আন্দোলন যত জোরদার হবে, সরকার বিভিন্ন দল ও জোটের ঐক্য বিনষ্ট করাসহ নানা বিভ্রান্তি সৃষ্টির চেষ্টা করবে। এ বিষয়ে সামনের দিনগুলোতে সবাইকে সজাগ ও সতর্ক থাকতে হবে। পাশাপাশি কর্মসূচিতে বক্তব্য দেওয়ার সময় নেতাদের দায়িত্বশীল হতে হবে, যাতে সরকার এখান থেকে কোনো বাড়তি সুযোগ না পায়।

জানা গেছে, গতকাল শুক্রবার বিকেলে গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে ৭–দলীয় জোট গণতন্ত্র মঞ্চের নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে বিষয়টি গুরুত্বসহকারে আলোচনা হয়। বৈঠক সূত্র জানায়, মূলত বিষয়টি আলোচনার জন্যই বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম লিয়াজোঁ (সমন্বয়) কমিটির বৈঠকে আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।

এদিকে আজ শনিবার ঢাকায় শুরু হচ্ছে বিএনপির চার দিনের গণপদযাত্রা কর্মসূচি। বেলা দুইটায় বাড্ডার হোসেন মার্কেটের কাছ থেকে মালিবাগের আবুল হোটেল পর্যন্ত এ পদযাত্রা হবে।

আরও পড়ুন

কর্মসূচিতে বিএনপির জ্যেষ্ঠ নেতারা অংশ নেবেন। পদযাত্রার শুরুতে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম বক্তব্য দেবেন।

এরপর ৩০ জানুয়ারি যাত্রাবাড়ী থেকে শ্যামপুর পর্যন্ত, ৩১ জানুয়ারি গাবতলী বাস টার্মিনাল থেকে মাজার রোড হয়ে মিরপুর ১০ নম্বর গোলচত্বর পর্যন্ত এবং ১ ফেব্রুয়ারি মুগদা থেকে মালিবাগ পর্যন্ত পদযাত্রা। উল্লিখিত তারিখে পদযাত্রার কর্মসূচি শুরু হবে বেলা দুইটায়। বিএনপির ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ শাখা নিজ নিজ এলাকায় এ পদযাত্রা কর্মসূচির আয়োজন করবে।

এ কর্মসূচিকে সমর্থন দিয়েছে গণতন্ত্র মঞ্চ। গতকাল এই জোটের সঙ্গে বৈঠক শেষে গণতন্ত্র মঞ্চের সমন্বয়কারী ও নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না সাংবাদিকদের বলেন, ‘বিএনপির মহানগর শাখা একটি কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। আমাদের কাছে মনে হয়েছে, কর্মসূচিটি কার্যকর হতে পারে। আমরা এটাকে সমর্থন করেছি। ভালো কর্মসূচি হয়েছে।’

নয়াপল্টনে বিএনপির গণমিছিল
ফাইল ছবি
আরও পড়ুন

বিএনপি ও গণতন্ত্র মঞ্চের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গতকালের বৈঠকে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম সভা-সমাবেশের বক্তব্যের ক্ষেত্রে সবাইকে আরও দায়িত্বশীল হওয়ার বিষয়ে কথা বলেন। এ সময় তিনি নিজ দলের কোনো কোনো নেতার অনিয়ন্ত্রিত বক্তব্যের বিষয়টিও আলোচনায় তোলেন। এ ছাড়া বৈঠকে চলমান যুগপৎ আন্দোলনকে কীভাবে আরও জোরদার ও বিস্তৃত করা যায়, এ আন্দোলনে কীভাবে সমাজের নানা অংশের মানুষকে যুক্ত করা যায়, সে বিষয়ে মতামত চাওয়া হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানিয়েছে।

গণতন্ত্র মঞ্চের অন্যতম শরিক দল গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি প্রথম আলোকে বলেন, মূলত চারটি বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। আন্দোলনের যৌথ ঘোষণা, যুগপৎ আন্দোলনকে আরও জোরদার করা, এতে সমাজের বিভিন্ন অংশের মানুষকে সম্পৃক্ত করা এবং আন্দোলন নস্যাৎ করতে সরকারি তৎপরতার বিরুদ্ধে সতর্ক থাকা।

বিকেল সোয়া চারটা থেকে সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত প্রায় পৌনে দুই ঘণ্টা ধরে এ বৈঠক হয়। বৈঠক শেষে মির্জা ফখরুল ইসলাম ও গণতন্ত্র মঞ্চের পক্ষে মাহমুদুর রহমান সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন।

আরও পড়ুন

অনৈক্যের খবর আন্দোলন নস্যাৎ করার অপকৌশল

৭–দলীয় জোট গণতন্ত্র মঞ্চে অনৈক্যের বিষয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবর সম্পর্কে একজন সাংবাদিক প্রশ্ন করলে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, ‘সরকার এবং সরকারি এজেন্টরা স্বাভাবিকভাবে বিরোধী দলের যে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন শুরু হয়েছে, তাকে দমন করার জন্য, নস্যাৎ করার জন্য তারা বিভিন্ন কৌশল-অপকৌশল অবলম্বন করবে। সে জন্যই বিভিন্ন স্থানে, মিডিয়াতে বিভিন্ন রকম গল্প তৈরি করবে, গল্প বলবে—এগুলো নিয়ে আমরা কিন্তু খুব বেশি মাথা ঘামাই না।’ তিনি বলেন, এখন একটিই লক্ষ্য, সেটা হচ্ছে জনগণকে আরও ঐক্যবদ্ধ করে, আরও সম্পৃক্ত করে এই ভয়াবহ সরকারকে সরানো। এর বাইরে আর কোনো চিন্তা নেই।

মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, ‘সরকারের পতনের লক্ষ্যে আমরা যে গণ–আন্দোলন শুরু করেছি, সেটি সাফল্যের দিকে নিয়ে যাওয়ার জন্য পূর্বের কর্মসূচিগুলো পর্যালোচনা করেছি এবং পরবর্তী কী কর্মসূচি গ্রহণ করা যেতে পারে, সে বিষয়েও আলোচনা করেছি। সিদ্ধান্ত নিয়েছি অতি দ্রুত অন্যান্য দল ও জোটের সঙ্গেও আলোচনা করে ৪ ফেব্রুয়ারি কর্মসূচি সফল করার।’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আরও বৃহত্তর ঐক্য সৃষ্টি করে আমরা যেন সে লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারি, সেই ব্যাপারে আমরা একমত হয়েছি।’

কর্মসূচিতে উপস্থিতি

পরে এক প্রশ্নের জবাবে গণতন্ত্র মঞ্চের সমন্বয়কারী মাহমুদুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, গণতন্ত্র মঞ্চের কর্মসূচিতে উপস্থিতি কিছু কম হলেও বিএনপির মঞ্চে অনেক হয়। সেটাও তাঁদের বলেই মনে করেন তাঁরা। কারণ, তাঁরা একসঙ্গেই আন্দোলন করছেন।

প্রশ্ন ছিল, গণতন্ত্র মঞ্চের সাতটি দল যখন আলাদা কর্মসূচি করে, তখন অনেক উপস্থিতি দেখা যায়। কিন্তু জোটের কর্মসূচিতে উপস্থিতি কম হয় কেন?

জবাবে মাহমুদুর রহমান বলেন, ‘এক দিনের কোনো একটা সাময়িক ব্যর্থতা অনেক বড় করে সবাই মিলে দিয়েছেন। কিন্তু সব শেষের যে কর্মসূচি (২৫ জানুয়ারি) গণতন্ত্র মঞ্চ প্রেসক্লাবে করেছে, দ্যাট ওয়াজ আ সাকসেসফুল প্রোগ্রাম। অনেক ভালো হয়েছে। সেই রকম কাভারেজ আপনারা দেননি। এটুকু আপনাদের বলতে পারি, গণতন্ত্র মঞ্চের যে সাতটি দল আছে, সাতটি দলই আন্দোলনের ব্যাপারে আন্তরিক এবং পরিশ্রম করছে।’

মাহমুদুর রহমান জানান, বৈঠকে আন্দোলনকারী দলগুলোর সব সহযোগী সংগঠন, ছাত্র, নারী, যুব সংগঠনসহ অন্যান্য সামাজিক সংগঠনকে সম্পৃক্ত করার বিষয়ে উদ্যোগ নেওয়ার আলোচনা হয়।

এ ছাড়া জোটের ঐক্যের মধ্যে ফাটল ধরানো, বিভ্রান্তি সৃষ্টির জন্য শত্রুপক্ষ বিভিন্ন রকম কাজ করে, সে ব্যাপারে সজাগ থাকার বিষয়েও আলোচনা হয়েছে বলে জানান মাহমুদুর রহমান।

বৈঠকে গণতন্ত্র মঞ্চের পক্ষে জেএসডির সভাপতি আ স ম আবদুর রব, নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি, গণ অধিকার পরিষদের সদস্যসচিব নুরুল হক, ভাসানী অনুসারী পরিষদের আহ্বায়ক শেখ রফিকুল ইসলাম ও রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের সভাপতি হাসনাত কাইয়ুম ছিলেন। বিএনপির পক্ষে ছিলেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ, ভাইস চেয়ারম্যান বরকতউল্লা, যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন।