সেলিম চেয়ার‌ম্যান কত বালু তুলেছেন, তা নিয়ে সংসদে প্রশ্ন

লক্ষ্মীপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান সেলিম খান
ছবি: সংগৃহীত

চাঁদপুরের হাইমচরের লক্ষ্মীপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান সেলিম খান নদী থেকে কত বালু তুলেছেন, তা ভূমিমন্ত্রী জানেন কি না, সেই তথ্য জানতে চেয়েছেন জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য ফখরুল ইমাম। আজ মঙ্গলবার জাতীয় সংসদে বালুমহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা (সংশোধন) বিলের ওপর আলোচনার সময় তিনি এ প্রশ্ন রাখেন।

বিলের আলোচনায় অংশ নিয়ে জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য ফখরুল ইমাম বলেন, চাঁদপুরের হাইমচরের সেলিম চেয়ারম্যান বালু তোলা নিয়ে ২০১৫ সালে উচ্চ আদালতে একটি মামলা করেন। ২০১৮ সালে রায় হয়। তিনি বালু তোলার অনুমতি পান। হাইকোর্টের রায় এখন বাতিল করেছে সুপ্রিম কোর্ট। এটা হলো বালু ব্যবস্থাপনার অবস্থা।
এই সংসদ সদস্য বলেন, সেলিম চেয়ারম্যান ইতিমধ্যে কত বালু তুলেছেন, মন্ত্রী তা জানেন কি না, জানাবেন।

চাঁদপুরের পদ্মা ও মেঘনার ডুবোচর থেকে গত আট বছর বালু তুলছেন ইউপি চেয়ারম্যান মো. সেলিম খান। দুই শতাধিক ড্রেজার দিয়ে ২৪ ঘণ্টা ধরে তাঁর লোকেরা বালু তুলেছেন। এ নিয়ে ‘“বালুখেকো” চেয়ারম্যান তিনি’ শিরোনামে গত মার্চ মাসে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয় প্রথম আলোয়। এর কিছুদিন পর আদালতের আদেশে বালু তোলার কাজ বন্ধ হয়।

সেলিম চেয়ারম্যান বছরে ১৪৪ কোটি ঘনফুট বালু তুলতেন বলে ওই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। বছরে বালু বিক্রি হতো ৩৬০ কোটি টাকার। গত আট বছরে পদ্মা-মেঘনা থেকে বালু তুলে কমবেশি ২ হাজার ৮৮০ কোটি টাকা সেলিম খানের পকেটে ঢুকেছে বলে প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল। ড্রেজার ও বালুর ব্যবসার সঙ্গে সম্পৃক্ত একাধিক ব্যক্তি ও চাঁদপুর জেলা প্রশাসন সূত্র থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে বালু তোলা ও বিক্রির ওই হিসাব প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়েছিল।

সংসদে বালুমহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা বিলের আলোচনায় অংশ নিয়ে গণফোরামের সংসদ সদস্য মোকাব্বির খান বলেন, তড়িঘড়ি করে সংসদে ভূমির তিনটি আইন আনা হয়েছে। এই বিলগুলো নিয়ে সংসদ সদস্যরা পর্যালোচনারও সুযোগ পাননি। সরকার ইচ্ছা করে জনগণ থেকে আড়াল করে আইন করছে। বিভিন্ন পত্রিকার খবর তুলে ধরে তিনি অভিযোগ করেন, অনেক জায়গায় অবৈধ বালু উত্তোলনে ব্যবস্থা না নিয়ে প্রশাসন মাসহারা নিচ্ছে। এ ক্ষেত্রে রাজনীতিবিদদেরও দায়দায়িত্ব আছে।

সংসদ সদস্যদের বক্তব্যের জবাবে ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী বলেন, বিদ্যমান আইনে কিছু ফাঁকফোকর আছে। যে কারণে মাঠ প্রশাসন অনেক ক্ষেত্রে চাইলেও ব্যবস্থা নিতে পারে না। এই আইন হলে তা সম্ভব হবে। এই আইনের উদ্দেশ্য কৃষিজমির সুরক্ষা। ইটভাটা টপ সয়েল (মাটির ওপরের উর্বর অংশ) নষ্ট করে দিচ্ছে। এই আইন হলে মহৎ উদ্দেশ্য সফল হবে।

বিলের ওপর আনা জনমত যাচাই, বাছাই কমিটিতে প্রেরণ ও সংশোধনী প্রস্তাবগুলো নিষ্পত্তি শেষে ‘বালুমহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা (সংশোধন) বিল-২০২৩’ কণ্ঠভোটে পাস হয়। বিলে বলা হয়েছে, কোনো ব্যক্তিমালিকানাধীন জমি থেকে বালু বা মাটি তোলা যাবে না, যদি তা উর্বর কৃষিজমি হয় বা বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে হয় বা কৃষিজমির উর্বর উপরিভাগের মাটি হলে বা পরিবেশ প্রতিবেশ বা জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি সাধিত হয় বা ড্রেজারের মাধ্যমে বা যদি অন্য কোনো কৌশলী প্রক্রিয়ায় বালু বা মাটি উত্তোলন করা হয়, যাতে এই জমিসহ পার্শ্ববর্তী অন্য জমির ক্ষতি, চ্যুতি বা ধসের উদ্ভব হয়। তবে কোনো ব্যক্তি বসতবাড়ি নির্মাণ বা নিজের প্রয়োজনে সংশ্লিষ্ট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার অনুমতি নিয়ে নিজের মালিকানাধীন জমি থেকে সীমিত পরিসরে বালু বা মাটি তুলতে পারবেন। এই অংশটুকু সংসদীয় কমিটির সুপারিশে বিলে যোগ করা হয়।