ওসমান হাদির ভাই বললেন, বিচার চাইলে আন্দোলন চালিয়ে যেতে হবে
আন্দোলনের চাপ না থাকলে ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শহীদ শরিফ ওসমান হাদি হত্যাকাণ্ডের ন্যায়বিচার পাওয়া নিয়ে সংশয় প্রকাশ করছেন এই জুলাই যোদ্ধার ভাই শরিফ ওমর বিন হাদি।
শরিফ ওমর বিন হাদি বলেছেন, ওসমান হাদিকে ভালোবাসলে, তাঁর হত্যার বিচার চাইলে, শাহবাগকে ফ্যাসিবাদ ও ভারতীয় আধিপত্যবাদমুক্ত হিসেবে কায়েম করতে চাইলে জনগণকে আন্দোলন অব্যাহত রাখতে হবে।
আজ রোববার সকালে রাজধানীর মগবাজারের আল-ফালাহ মিলনায়তনে শরিফ ওসমান হাদির শাহাদাত উপলক্ষে জামায়াতে ইসলামী আয়োজিত দোয়া মাহফিলে এ কথা বলেন ওমর বিন হাদি।
ইনকিলাব মঞ্চ গঠন করে আওয়ামী লীগ ও ভারতের বিরোধিতায় সরব ওসমান হাদি ঢাকা-৮ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে প্রচার চালানোর মধ্যে ১২ ডিসেম্বর হামলার শিকার হন। মাথায় গুলিবিদ্ধ হাদিকে উন্নত চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুরে পাঠানো হলেও বাঁচানো যায়নি। ছয় দিন পর গত বৃহস্পতিবার সেখানে তাঁর মৃত্যু হয়।
গতকাল সারা দেশে রাষ্ট্রীয় শোকের মধ্যে লাখো মানুষের অংশগ্রহণে জানাজার পর হাদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের সমাধির পাশে সমাহিত করা হয়।
ইনসাফের বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় হাদির সংগ্রামের কথা তুলে ধরে তাঁর ভাই ওমর বিন হাদি বলেন, ‘আমরা ওসমান হাদির পক্ষ থেকে কোনো আর্থিক সহযোগিতা চাই না। কোনো অনুদান চাই না। শুধু একটাই চাই, ওসমান হাদির অসমাপ্ত বিপ্লবকে আপনারা সমাপ্ত করবেন। আপনারা যদি রাজি থাকেন, আমার সঙ্গে ওয়াদা করেন, ইনসাফের বাংলাদেশ গঠিত না হওয়া পর্যন্ত আপনারা শান্ত হবেন না।’
‘ওসমান হাদি যে বিপ্লবী আন্দোলন শুরু করেছিল, যেই আন্দোলনের কারণে শহীদ হয়েছে, তার অসমাপ্ত বিপ্লব দেশের মানুষকে সমাপ্ত করতে হবে,’ বলেন ওমর বিন হাদি।
ওসমান হাদি হত্যাকাণ্ডের জন্য তাঁর সমর্থকেরা অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগকে দায়ী করছে। ইনকিলাব মঞ্চের সদস্যসচিব আবদুল্লাহ আল জাবের যে মামলা করেছেন, তাতে প্রধান আসামি করা হয়েছে আওয়ামী লীগের ছাত্রসংগঠন ছাত্রলীগের (বর্তমানে নিষিদ্ধ) কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সদস্য ফয়সাল করিম মাসুদকে।
পুলিশ ও র্যাব এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ১৪ জনকে গ্রেপ্তার করলেও ফয়সালসহ প্রধান সন্দেহভাজনেরা এখনো অধরা। তাঁরা ভারতে পালিয়ে গেছেন বলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সূত্রে খবর পাওয়া যাচ্ছে। তাঁদের পালানোর সুযোগ পাওয়া নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের সমালোচনা করছেন ইনকিলাব মঞ্চের নেতা–কর্মীরা।
ওমর বিন হাদি বলেন, ওসমান হাদির মৃত্যুর পর তাঁর পরিবার, ইনকিলাব মঞ্চের সদস্যরা এখনো স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারেনি।
জামায়াতের এই মাহফিলে সভাপতিত্ব করেন দলের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার। দলটির সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আবদুল হালিমের সঞ্চালনায় দোয়া মাহফিলে আরও বক্তব্য দেন ওসমান হাদির বড় ভাই ওমর বিন হাদি, জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এ টি এম মা’ছুম, ঢাকা-১২ আসনে জামায়াতের প্রার্থী সাইফুল আলম খান মিলন, ঢাকা-১০ আসনের সংসদ সদস্য প্রার্থী জসীম উদ্দিন সরকার, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আমির নূরুল ইসলাম বুলবুল, ঢাকা মহানগর উত্তরের আমির সেলিম উদ্দিন প্রমুখ। ওসমান হাদির জন্য দোয়া ও মোনাজাতের মাধ্যমে শেষ হয় এ অনুষ্ঠান।