ঋণ করে ঘি খাওয়ার প্রবণতা দেশের মানুষকে ঋণের ফাঁদে আটকে ফেলেছে। এবারও সরকার এই ধারা থেকে বেরিয়ে আসতে পারেনি। বাজেট নিয়ে প্রতিক্রিয়ায় এ কথা বলেছে বাম গণতান্ত্রিক জোট।
অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ গতকাল সোমবার ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাব করেছেন। আজ মঙ্গলবার এ বিষয়ে বাম গণতান্ত্রিক জোট এক বিবৃতিতে বলেছে, ঋণের সুদ পরিশোধ, জনপ্রশাসন এসব খাতেই বাজেট বরাদ্দের বিরাট অংশের টাকা চলে যাচ্ছে। সরকার প্রয়োজনে এই ধারা থেকে বেরিয়ে এসে নিজস্ব সম্পদের ওপরে ভর করে বাজেট প্রণয়নের ধারাকে একটা দৃশ্যমান ধারা হিসেবে সামনে নিয়ে আসার কাজটি করতে পারত। অন্তর্বর্তী সরকার পুঁজিবাদী ধারাটি দেশের নিয়তি হিসেবে ঘোষণা করল।
গতানুগতিক পথে হেঁটে যে বাজেট ঘোষণা করা হয়েছে, তা সাধারণ মানুষের স্বার্থ রক্ষা করবে না বলে মনে করছে বাম গণতান্ত্রিক জোট। তাদের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, এই বাজেটে বৈষম্যহীনতা ও টেকসই উন্নয়নব্যবস্থা গড়ে তোলার কথা বলা হলেও বাস্তবে মুক্তবাজারের পুরোনো ধারাবাহিকতার পুনরাবৃত্তি ঘটানো হয়েছে, যা বৈষম্য, বেকারত্ব, মূল্যস্ফীতি, বিনিয়োগসংকট—কোনোটাই মোকাবিলা করতে পারবে না।
বিবৃতিতে বলা হয়, অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে বিরাট কোনো প্রত্যাশা না থাকলেও মানুষের আশা ছিল, বাজেটে স্বস্তি থাকবে। কিন্তু সর্বজনীন রেশনব্যবস্থা, জাতীয় ন্যূনতম মজুরি ঘোষণার মতো বিষয় নেই। লুটেরা ও দুর্নীতিবাজদের কাছ থেকে টাকা আদায় করে ওই টাকা স্বাস্থ্য, শিক্ষাসহ সরাসরি সাধারণ মানুষের স্বার্থের কল্যাণমূলক কাজে ব্যয় করার আকাঙ্ক্ষা থাকলেও তার ছিটেফোঁটা পর্যন্ত নেই। বরং সংবিধানবহির্ভূতভাবে কালো টাকাকে সাদা করার বিধান রাখা হয়েছে, যা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।
বাম গণতান্ত্রিক জোট বলেছে, বাজেটে প্রবৃদ্ধির যে লক্ষ্য ধরা হয়েছে, তা মোটেই অর্জিত হবে না। মূল্যস্ফীতি যথাযথভাবে কমানো যাবে না। বৈষম্য দূর করার কোনো সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপও নেই।
বাজেটের আগে দেশের গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল ও বিভিন্ন শ্রেণি–পেশার মানুষের সঙ্গে কোনো পরামর্শ করা হয়নি উল্লেখ করে বাম জোট বলেছে, বিভিন্ন শ্রেণি–পেশার মানুষ এবং রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে অন্তর্বর্তী বিশেষ বাজেট প্রণয়নের আহ্বান জানানো হয়। এ ছাড়া চলতি বছরের মধ্যে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পথে সরকার হাঁটবে বলে আশা প্রকাশ করা হয়েছে।
বিবৃতিতে দিয়েছেন বাম গণতান্ত্রিক জোটের কেন্দ্রীয় পরিচালনা পরিষদের সমন্বয়ক ও বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন, সিপিবির সভাপতি মোহাম্মদ শাহ আলম, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশিদ ফিরোজ, বাংলাদেশের বিপ্লবী কমিউনিস্ট লীগের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল কবির জাহিদ, বাসদের (মার্ক্সবাদী) সমন্বয়ক মাসুদ রানা, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টির সাধারণ সম্পাদক মোশরেফা মিশু, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক পার্টির নির্বাহী সভাপতি আবদুল আলী।