সুকৌশলে নির্বাচন আয়োজনে বাধা সৃষ্টি করা হচ্ছে

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানফাইল ছবি

অন্তর্বর্তী সরকারের ঘাড়ে বন্দুক রেখে যারা নিজেদের ফায়দা হাসিল করতে চায়, তারাই জাতীয় নির্বাচন আয়োজনে বাধা সৃষ্টি করছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তিনি বলেছেন, ‘বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ বলছে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ঘাড়ে বন্দুক রেখে নিজেদের খবরদারি বহাল রাখতে চায় কিংবা প্রভাব খাটিয়ে বিভিন্নভাবে ফায়দা হাসিল বা নিজেদের আখের গোছাতে চায়, তাদেরকেই আমরা দেখছি, জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানকে সুকৌশলে বাধা সৃষ্টি করছে।’

আজ সোমবার বিকেলে রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন চত্বরে বাংলাদেশ সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদ আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন তারেক রহমান। তিনি লন্ডন থেকে সভায় ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হন।

ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলন ও চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থানে পেশাজীবীদের অবদান নিয়ে এ আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে শহীদ পরিবার এবং নির্যাতনের শিকার পেশাজীবীদের সম্মাননা দেওয়া হয়। অনুষ্ঠানে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে পেশাজীবী শীর্ষক স্মরণিকার মোড়ক উন্মোচন এবং গত ১৬ বছরে ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে পেশাজীবীদের ভূমিকা নিয়ে একটি তথ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়।

সভায় বক্তব্যের শুরুতেই রাজধানীর উত্তরায় বিমান দুর্ঘটনায় হতাহতের ঘটনায় শোক প্রকাশ করেন তারেক রহমান। একই সঙ্গে তিনি বিএনপি ও এর অঙ্গ এবং সহযোগী সংগঠনের নেতাদের নিহত ব্যক্তিদের পরিবার ও আহত ব্যক্তিদের চিকিৎসায় সহায়তা করতে নির্দেশ দেন।

সভায় তারেক রহমান বলেন, কয়েকটি রাজনৈতিক দল হঠাৎ করেই পিআর (সংখ্যানুপাতিক নির্বাচনপদ্ধতি) এর দাবিতে সোচ্চার হয়েছে। বাংলাদেশে সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতির নির্বাচনব্যবস্থা প্রবর্তন করার অর্থ হবে রাষ্ট্র ও রাজনীতিতে বিচ্ছিন্নতাবাদ, ফ্যাসিবাদ ও চরমপন্থার পথ তৈরি করে দেওয়া। এর ফলে সমাজে বিভ্রান্তি সৃষ্টির পাশাপাশি সরকার অস্থিতিশীল হয়ে উঠতে পারে। দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব হুমকির সম্মুখীন হতে পারে।

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, দেশের জনগণের ঐক্য চাইলে কোনোভাবেই সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতির নির্বাচনব্যবস্থা চালু করা উচিত হবে না। দেশ ও জনগণের স্বার্থে পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন বাংলাদেশের জন্য উপযোগী নয় বলেই বিএনপি মনে করে।

অনেকেই গণ-অভ্যুত্থানের কৃতিত্ব কুক্ষিগত করার জন্য বিভিন্নভাবে খুবই তৎপর উল্লেখ করে তারেক রহমান বলেন, শহীদদের তালিকা তৈরির ব্যাপারে এই তৎপরতা থাকলে নিশ্চয়ই এত দিনে চূড়ান্ত একটা তালিকা তৈরি করা যেত। প্রায় এক বছর হতে চললেও শহীদদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা না হওয়া দুঃখজনক বলে তিনি উল্লেখ করেন। বিএনপি রাষ্ট্র পরিচালনার সুযোগ পেলে বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান শহীদদের নামে করার চিন্তা রয়েছে বলে জানান দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান।

এ সভায় সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের সভাপতি এ জেড এম জাহিদ হোসেন। সঞ্চালক ছিলেন পরিষদের সদস্য সচিব কাদের গনি চৌধুরী ও জুলাই-আগস্ট গণ–অভ্যুত্থান, শোক ও বিজয়ের বর্ষপূর্তি পালনে বিএনপি গঠিত কমিটির সদস্যসচিব অধ্যাপক মোর্শেদ হাসান খান। অনুষ্ঠানে অধ্যাপক সায়মা ফেরদৌস, লে. কর্নেল (অব.) কামরুজ্জামান, সাবেক এনএসআই ডিজি আবদুর রহিমের ছেলে আবরার রহিম, শহীদ সাংবাদিক সাগর-রুনির ছেলে মাহির সরওয়ার মেঘ, গণ-অভ্যুত্থানে শহীদ সাজ্জাদ হোসেনের মা শাহিনা বেগমসহ অনেকে।

অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেওয়ার কথা ছিল বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের। তিনি অনুষ্ঠানে উপস্থিতও ছিলেন। আয়োজকেরা জানান, উত্তরায় বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনায় আহত ব্যক্তিদের দেখতে তারেক রহমানের পরামর্শে অনুষ্ঠানের মাঝামাঝি সময়ে মির্জা ফখরুল জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে চলে যান।

অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান ও মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমদ, বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ইসমাইল জবিহউল্লাহ, বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এ বি এম ওবায়দুল ইসলাম, স্টেট ইউনিভার্সিটির উপাচার্য আখতার হোসেন খান, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য লুৎফর রহমান, বাংলাদেশ সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম আবদুল্লাহ প্রমুখ।