একাত্তরের গণহত্যার স্বীকৃতি আদায়ে প্রয়োজনে সেল গঠন: হাছান মাহমুদ

পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ জাতীয় প্রেসক্লাবে একাত্তরের গণহত্যা নিয়ে ডিকাব আয়োজিত সেমিনারে বক্তব্য দেন। ঢাকা, ১০ মার্চ
ছবি: সংগৃহীত

একাত্তরের গণহত্যার স্বীকৃতি আদায়ের জন্য প্রয়োজনে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সেল গঠন করা হবে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ। তিনি বলেছেন, এই স্বীকৃতি অনেক আগেই পাওয়া যেত। কিন্তু পঁচাত্তরে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করার পর একাত্তরে কী হয়েছে, তা ভুলিয়ে দেওয়ার চেষ্টা হয়েছে।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী আজ রোববার জাতীয় প্রেসক্লাবে একাত্তরের গণহত্যা নিয়ে আয়োজিত এক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এ কথা বলেন। ‘বাংলাদেশে ১৯৭১ সালে জেনোসাইড: আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি ও ক্ষতিপূরণ’ শীর্ষক ওই সেমিনারের আয়োজন করে ডিপ্লোমেটিক করেসপনডেন্টস অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশ (ডিকাব)।

হাছান মাহমুদ বলেন, ‘একাত্তরের গণহত্যার স্বীকৃতি নিয়ে দীর্ঘমেয়াদি আলোচনা হচ্ছে। যেহেতু ৫২ বছর আগের ঘটনা, সেটার সঠিক ডকুমেন্টেশন করা কঠিন। আমাদের ভিজ্যুয়াল ডকুমেন্টেশন কম। আমাদের পক্ষে ভিজ্যুয়াল ডকুমেন্টেশন নিয়ে কাজ করার সুযোগও কম। মুক্তিযোদ্ধা যারা বেঁচে আছেন, তাঁদের সঙ্গে হয়তো কথা বলে কিছু ভিজ্যুয়াল ডকুমেন্টেশন করা সম্ভব। তবে খুব বেশি করা সম্ভব না। প্রয়োজনে সেল গঠন করে একাত্তরের স্বীকৃতি পেতে কাজ করা হবে।’

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘একাত্তরে যে গণহত্যা হয়েছে, এটির স্বীকৃতি আমরা অনেক আগেই পেতে পারতাম। এটি না হওয়ার পেছনে কারণ হচ্ছে, পঁচাত্তরে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করার পর একাত্তরে কী হয়েছে, তা ভুলিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। যারা গণহত্যার সঙ্গে যুক্ত ছিল, তাদের দেশে পুনর্বাসিত করা হয়েছে।’

জিয়াউর রহমান তাদের (গণহত্যায় জড়িত ব্যক্তিদের) পুনর্বাসিত করেছেন উল্লেখ করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, গোলাম আযম পাকিস্তানি পাসপোর্ট নিয়ে এসে এখানে রাজনীতি করার সুযোগ পেয়েছে।

বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সমালোচনা করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, খালেদা জিয়া আরও এক কদম ওপরে গিয়ে, যারা স্বাধীনতা চায়নি, সেই দলের সঙ্গে জোট করেছেন। যারা এ পতাকাটা চায়নি, যারা পাকিস্তানি পতাকার পক্ষে লড়াই করেছে, তাদের গাড়িতে লাল-সবুজ পতাকা লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে। তিনি (খালেদা জিয়া) বলেছেন, আসলে একাত্তরে ৩০ লাখ মানুষ মারা যায়নি। সেই বক্তব্য তিনি এবং তাঁর দল অস্বীকারও করেননি।

হাছান মাহমুদ বলেন, ‘এভাবে আমাদের মুক্তিযুদ্ধকে আড়াল করার চেষ্টা না হতো এবং গণহত্যার সঙ্গে যারা যুক্ত, তাদের যদি পুনর্বাসিত না করা হতো, তাদের যদি রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় না আনা হতো, তাহলে হয়তো আমাদের গণহত্যার স্বীকৃতি পেতে এত সময় লাগত না।’

অনুষ্ঠানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর জেনোসাইড স্টাডিজের পরিচালক অধ্যাপক শেখ হাফিজুর রহমান কার্জন মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। তিনি গণহত্যার স্বীকৃতি আদায়ের চ্যালেঞ্জগুলো তুলে ধরে এই লক্ষ্যে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সমন্বিত তৎপরতার প্রয়োজন বলে উল্লেখ করেন।

বিদেশে বাংলাদেশের মিশনগুলোতে ২৫ মার্চের আগেই একাত্তরের ভয়াবহতা নিয়ে প্রদর্শনী, সেমিনারসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠান আয়োজনের তাগিদ দেন সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য ও প্রেসক্লাবের সভাপতি ফরিদা ইয়াসমিন।

ডিকাব সভাপতি নুরুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক আশিকুর রহমান স্বাগত বক্তব্য দেন।