রেজা কিবরিয়া-নুরুল হকের পাল্টাপাল্টি অভিযোগ

গণ অধিকার পরিষদের আহ্বায়ক রেজা কিবরিয়া ও সদস্যসচিব নুরুল হক
ফাইল ছবি

গণ অধিকার পরিষদের দুই শীর্ষ নেতা রেজা কিবরিয়া ও নুরুল হক একে অন্যের বিরুদ্ধে পাল্টাপাল্টি অভিযোগ করেছেন। নুরুল হকের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের সঙ্গে গোপন আঁতাত করা এবং সই জাল করার অভিযোগ এনেছেন রেজা কিবরিয়া। অপরদিকে নুরুল হক বলেছেন, তাঁর ভাবমূর্তি ক্ষুণ্নের জন্য অপপ্রচার চালাচ্ছেন রেজা কিবরিয়া।

রেজা কিবরিয়াকে গণ অধিকার পরিষদের আহ্বায়ক পদ থেকে অপসারণের সিদ্ধান্ত ঘোষণার পরদিন রোববার গুলশানে এক সংবাদ সম্মেলন করেন তিনি। সেখানে নিজেকে দলের আহ্বায়ক দাবি করে রেজা কিবরিয়া বলেন, ‘সে (নুরুল) জাহাঙ্গীর কবির নানক, রাশেদ খান মেনন, হাসানুল হক ইনুর সঙ্গে দেখা করেছে। সে মনে হয় ওদের মতো হতে চায়। মন্ত্রী হবে, কিছু টাকাপয়সা বানাবে। এটাতে সে সন্তুষ্ট।’

নুরুল হককে বিশ্বাসঘাতক আখ্যায়িত করে রেজা কিবরিয়া দাবি করেন, দলের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী আহ্বায়ক বা সভাপতিকে সরাতে ৮১ জনের ভোট লাগে। কিন্তু তাঁকে সরাতে ৪৮ জনের মধ্যে ৩৬ জন সই করেছেন। বাকিরা সই করেননি। সেই বৈঠকের আগে কয়েকজনের নামে ভুয়া স্বাক্ষর নেওয়া হয়েছে। সই জালিয়াতির অভিযোগে নুরুল, রাশেদ খান ও দপ্তর সম্পাদক শাকিল উজ্জামানের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা হওয়া উচিত।

রেজা কিবরিয়া আবারও দাবি করেন, নুরুল হকের সঙ্গে  ইসরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের একজন এজেন্ট মেন্দি এন সাফাদির দুবাইয়ে বৈঠক হয়েছে। গত ১৮ জুন দলের বৈঠকে নুর এই কথা স্বীকার করেছেন।

এরপর দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে পাল্টা সংবাদ সম্মেলন করেন নুরুল হক ও তাঁর সঙ্গে থাকা নেতারা। গণ অধিকার পরিষদের সদস্যসচিব নুরুল হক বলেন, দলের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী নিয়মতান্ত্রিকভাবে আহ্বায়ক পদ থেকে রেজা কিবরিয়াকে অপসারণ করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। কারও সই জাল করা হয়নি দাবি করে তিনি বলেন, রেজা কিবরিয়া তাঁর কিছু আত্মীয়স্বজনকে গণ অধিকার পরিষদের কমিটিতে জায়গা দিয়েছিলেন। তাঁদের দু–একজনকে দিয়ে তিনি উল্টো বক্তব্য দেওয়াতে পারেন। তবে তাঁরাও পাল্টা প্রস্তুতি রেখেছেন। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ৮১ জনের সই হলে চলে, সেখানে ৯১ জন সই করেছেন।

আওয়ামী লীগের নেতাদের সঙ্গে কোনো বৈঠক হয়নি দাবি করে নুরুল হক বলেন, আপস করলে রেজা কিবরিয়ার সেটা করার সুযোগ আছে। তাঁর বাবা জিয়াউর রহমানের আমলে পররাষ্ট্রসচিব হয়েও আওয়ামী লীগের রাজনীতি করেছেন, সুযোগ–সুবিধা নিয়েছেন। রাশেদ খান মেনন, হাসানুল হক ইনু ও জাহাঙ্গীর কবির নানকের সঙ্গে তাঁর কোনো বৈঠক হয়নি। আর ইনু, মেনন এঁরা আওয়ামী লীগেরও কেউ নন।

নুরুল হক বলেন, ১৪ বছর ধরে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায়। রেজা কিবরিয়ার বাবার হত্যার বিচার শেষ হয়নি। তিনি এখন গণ অধিকার পরিষদের নেতাদের নামে মামলা করবেন।

তিনি সরকারের সঙ্গে আঁতাত করে গণ অধিকার পরিষদকে ‘জি এম কাদেরের মতো আদালতে ব্র্যাকেটবন্দী’ করতে চাইছেন। জি এম কাদেরকে যেভাবে দলের রাজনৈতিক কার্যক্রম চালাতে পারবেন না বলে আদেশ দেওয়া হয়েছিল, সে রকম সাময়িক হয়রানি করতে পারবেন। তাতে গণ অধিকার পরিষদের কার্যক্রম থামানো যাবে না।

সামাজিকভাবে হেয়প্রতিপন্ন করার জন্য আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ এনেছেন দাবি করে নুরুল হক বলেন, ‘তিনি (রেজা) এবং তাঁর গংরা যাঁরা গোয়েন্দা সংস্থা, মাসুদ করিম-এনায়েত করিম গংরা কিংবা ইনসাফ বেইনসাফ গংরা তাঁকে দিয়ে এগুলো করাচ্ছে, ভিপি নুরের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার জন্য।’

মোসাদ বা কোনো গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে কোনো বৈঠক হয়নি দাবি করে নুরুল হক বলেন, রাজনৈতিকভাবে হেয় করার জন্য এসব অপপ্রচার করছেন। গণ অধিকার পরিষদ ইসলামপন্থী ও বামপন্থী সবাইকে রাস্তায় নামাতে পেরেছে। ইসলামি মূল্যবোধের মানুষের কাছে গণ অধিকার পরিষদকে বিতর্কিত করতে মোসাদের কথা আনা হচ্ছে।

রেজা কিবরিয়ার কারণে ২৬ বছরের গণফোরাম ভেঙেছে দাবি করে নুরুল হক বলেন, তিনি ২-৩ জন মুরব্বির পরামর্শে রেজা কিবরিয়াকে দলে নিয়েছিলেন। এখন মনে হচ্ছে কেউ কেউ অসৎ উদ্দেশ্যে বিশেষ অ্যাজেন্ডা নিয়ে এটি (রেজা কিবরিয়াকে নেওয়ার পরামর্শ) করেছিলেন।

বেশ কিছু দিন ধরেই রেজা কিবরিয়া ও নুরুল হকের মধ্যে দ্বন্দ্ব চলছিল। বিভিন্ন সময় তা প্রকাশ্যে এসেছে। সম্প্রতি গণ অধিকার পরিষদের শীর্ষ এই দুই নেতা একে অপরের বিরুদ্ধে আর্থিক অনিয়মসহ নানা অভিযোগ করেন। তাঁরা নিজ নিজ ফেসবুক পাতায়ও পোস্ট দিয়ে পাল্টাপাল্টি অভিযোগ করেছেন। পাল্টাপাল্টি বহিষ্কারের ঘোষণার পর গত শনিবার গণ অধিকার পরিষদের একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, তাঁদের আহ্বায়কের পদ থেকে রেজা কিবরিয়াকে অপসারণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।