কমিটি পুনর্গঠনের দাবিতে চবিতে ছাত্রলীগের একাংশের গণস্বাক্ষর কর্মসূচি

বিবাহিত ও চাকরিজীবীদের বাদ দিয়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের কমিটি পুনর্গঠন ও বর্ধিত করার কথা জানিয়েছেন একাংশের নেতা-কর্মীরা। এ লক্ষ্যে আজ বৃহস্পতিবার বেলা দুইটা থেকে তিনটা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনারের সামনে ছাত্রলীগের সাতটি উপপক্ষ গণস্বাক্ষর কর্মসূচির আয়োজন করে।

এর আগে গত ১০ আগস্ট একই দাবিতে সংবাদ সম্মেলন ও গত বৃহস্পতিবার মানববন্ধন করেছিলেন ছাত্রলীগের কর্মীরা। পাশাপাশি তাঁরা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি রেজাউল হক ও সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেনের ওপর অনাস্থা প্রকাশ করেছিলেন।

ছাত্রলীগের যে সাতটি উপপক্ষ গণস্বাক্ষর কর্মসূচির আয়োজন করেছিল, সেগুলো হলো ভার্সিটি এক্সপ্রেস, বাংলার মুখ, একাকার, এপিটাফ, রেড সিগন্যাল, কনকর্ড ও উল্কা। এসব উপপক্ষের নেতা-কর্মীরা চট্টগ্রাম শহরের সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের অনুসারী হিসেবে ক্যাম্পাসে পরিচিত।

ভার্সিটি এক্সপ্রেস উপপক্ষের নেতা ও শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি প্রদীপ চক্রবর্তী প্রথম আলোকে বলেন, ‘যাঁরা দীর্ঘদিন ধরে শাখা ছাত্রলীগের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন, তাঁদের বাদ দিয়ে নিষ্ক্রিয় কর্মীদের পদ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া কমিটিতে বিবাহিত ও চাকরিজীবীরাও রয়েছেন, যা ছাত্রলীগের গঠনতন্ত্রের পরিপন্থী। তাই এ কমিটি পুনর্বিবেচনা করতে হবে। যোগ্যদের পদ দিতে হবে। আর তা না হলে আমাদের এ সহিষ্ণু আন্দোলন অসহিষ্ণু হয়ে উঠবে।’

রেড সিগন্যাল উপপক্ষের নেতা ও শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি রকিবুল হাসান বলেন, ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত না থেকেও টাকার বিনিময়ে অনেকে এ কমিটিতে পদ পেয়েছেন। তাই এটি ছাত্রলীগের ‘পকেট’ কমিটি। শিগগির এ কমিটি পুনর্গঠন করতে হবে।

এ প্রসঙ্গে শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি রেজাউল হক বলেন, কমিটিতে বিবাহিত, চাকরিজীবী রয়েছেন, এমন সুনির্দিষ্ট তথ্য দিলে তাঁদের পদ বাতিলের ব্যবস্থা করবেন। আর নেতা-কর্মীদের যাঁরা গণস্বাক্ষরের আয়োজন করেছেন, তাঁরা অন্য (আ জ ম নাছির উদ্দীনের) পক্ষের।

সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমানে ছাত্রলীগের প্রায় দুই থেকে তিন হাজার নেতা-কর্মী রয়েছেন। সবাইকে পদ দেওয়া সম্ভব নয়। সাংগঠনিক সীমাবদ্ধতা রয়েছে। এর আগের যতগুলো কমিটি হয়েছে, এটি সবচেয়ে বর্ধিত কমিটি। তাঁরা আবাসিক হল ও অনুষদে কমিটি দিয়ে নেতা-কর্মীদের পদ পাওয়ার বিষয়টি সমাধান করবেন। ইতিমধ্যে তাঁরা কাজ শুরু করেছেন।

গত ৩১ জুলাই রাত সাড়ে ১২টার দিকে ক্ষমতাসীন ছাত্রসংগঠনটির কেন্দ্রীয় দপ্তর বিশ্ববিদ্যালয় শাখার ৩৭৬ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করে। কমিটি ঘোষণার পরই পদবঞ্চিত নেতা-কর্মীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তত ৪টি হলের প্রায় ৩০টি কক্ষ ভাঙচুর করেন। এদিন রাতেই বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটক আটকে দিয়ে অবরোধের ডাক দেন তাঁরা। বিক্ষুব্ধ নেতা-কর্মীরা নতুন শাখা কমিটি গঠনের দাবি জানান। এ অচল অবস্থা অব্যাহত থাকে ২ আগস্ট বেলা সাড়ে ১১টা পর্যন্ত। এ কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৯টি বিভাগের ১১টি চূড়ান্ত পরীক্ষা স্থগিত করা হয়।

বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের রাজনীতি দীর্ঘদিন ধরে দুটি পক্ষে বিভক্ত। একটি পক্ষ সাবেক মেয়র এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরীর ছেলে শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরীর অনুসারী। আরেকটি পক্ষ সাবেক সিটি মেয়র ও চট্টগ্রাম নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীনের অনুসারী হিসেবে পরিচিত।

ছাত্রলীগের দুই পক্ষের মধ্যে রয়েছে ১১টি উপপক্ষ। এর মধ্যে বিজয় ও চুজ ফ্রেন্ডস উইথ কেয়ার (সিএফসি) মহিবুল হাসান, বাকি নয়টি উপপক্ষ আ জ ম নাছিরের অনুসারী। তবে দুই নেতাই বিভিন্ন সময় বলেছেন, ছাত্রলীগের রাজনীতিতে তাঁদের কোনো পক্ষ নেই।