আপনারা কি চেয়েছিলেন যে তিনি মারা যান: সিইসিকে মির্জা ফখরুল

রাজধানীর গোপীবাগে বিএনপির পদযাত্রায় বক্তব্য দেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর
ছবি: শুভ্র কান্তি দাশ

বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র প্রার্থী সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করিমের ওপর হামলা এবং এ বিষয়ে সিইসির একটি বক্তব্যের কঠোর সমালোচনা করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। সিইসির উদ্দেশে তিনি প্রশ্ন করেছেন, ‘আপনারা (নির্বাচন কমিশন) কি তাঁর লাশ চান, আপনারা কি চেয়েছিলেন যে তিনি মারা যান?’

মঙ্গলবার বিকেলে রাজধানীর গোপীবাগে এক পদযাত্রা কর্মসূচিতে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মির্জা ফখরুল ইসলাম এসব কথা বলেন। সোমবার বরিশাল সিটি নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মীদের হামলায় সৈয়দ ফয়জুল করিম আহত হন। ভোট গ্রহণ শেষে এ বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, ‘উনি (প্রার্থী) কি ইন্তেকাল করেছেন?’

এই বক্তব্যের উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘বরিশালে যিনি প্রার্থী ছিলেন, ফয়জুল করিম সাহেব, আলেম মানুষ, তাঁকে আওয়ামী সন্ত্রাসীরা পিটিয়ে রক্তাক্ত করেছে। বন্ধ করতে পারেননি। উপরন্তু কী বলেছেন, তিনি কি ইন্তেকাল করেছেন?’

সিইসির এই প্রশ্নের প্রতিক্রিয়ায় পাল্টা প্রশ্ন রাখেন বিএনপির মহাসচিব। তিনি বলেন, ‘আপনারা কি চেয়েছিলেন যে তিনি মারা যান? এত ব্যর্থ আপনারা। একজন প্রার্থী, সর্বজন শ্রদ্ধেয় একজন আলেম মানুষ, তাঁকে পর্যন্ত নিরাপত্তা দিতে পারেননি। আর আপনারা বলেন, জাতীয় সংসদ নির্বাচন করবেন অবাধ, সুষ্ঠুভাবে।’

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানে নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া কোনো বিকল্প নেই বলে মন্তব্য করেন মির্জা ফখরুল। এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের নেতাদের বক্তব্যের উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘বলে কী তত্ত্বাবধায়ক সরকার আর হবে না কোনো দিন। আপনাদের খুব মজা লেগেছিল, যখন আপনারা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে ১৭৩ দিন হরতাল করেছিলেন, ১১ জনকে গানপাউডার দিয়ে পুড়িয়ে মেরেছিলেন; জাতীয় পার্টি এবং জামায়াতের সঙ্গে হাত মিলিয়ে বিএনপির বিরুদ্ধে লড়াই করেছিলেন।’

আরও পড়ুন

‘গদিটা ছেড়ে আসুন’

‘আসুন না নির্বাচনে, কার কত শক্তি দেখি’, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের গতকালের এই বক্তব্য তুলে ধরে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘আরে আপনারা আসেন না মাঠে। ওই গদি ছেড়ে দিয়ে আসেন। ওই যে পুলিশ-টুলিশ আছে না, এদের বাদ দিয়ে আসেন। একটা সত্যিকার অর্থে নিরপেক্ষ নির্বাচন হোক। নিরপেক্ষ সরকারের অধীন নির্বাচন দিন। তারপর দেখেন কার কত শক্তি।’

জনগণের শক্তি দেখতে হলে অবশ্যই নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে একটা অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হতে হবে বলে মন্তব্য করেন মির্জা ফখরুল ইসলাম। তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিল করার জন্য সাবেক প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হকের সমালোচনা করেন বিএনপির মহাসচিব। তিনি বলেন, ‘এই বাংলাদেশের বিচারব্যবস্থার ইতিহাসে সবচেয়ে কালো অক্ষরে যাঁর নাম লেখা থাকবে, তিনি হচ্ছেন বিচারপতি খায়রুল হক। কারণ, এই মানুষটি বাংলাদেশের মানুষের যে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা, একটি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন হবে, সেই ব্যবস্থাকে সম্পূর্ণভাবে বাতিল করে দিয়েছেন।’

সিরাজুল আলম খান প্রসঙ্গে

মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক সিরাজুল আলম খান মৃত্যুর পর আওয়ামী লীগ তাঁকে যথাযথ সম্মান জানায়নি বলে অভিযোগ করেছেন মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, ‘সিরাজুল আলম খান একজন ঐতিহাসিক ক্ষণজন্মা সংগঠনপ্রিয় মানুষ। যিনি মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক ছিলেন এবং স্বাধীনতাসংগ্রামে লড়াই করেছিলেন, নিউক্লিয়াস তৈরি করেছিলেন। তাঁকে আপনারা মর্যাদা দিয়ে একটি শোকবাণী পর্যন্ত দেননি।’

আওয়ামী লীগ কেন সিরাজুল আলম খানকে সম্মান জানায়নি, সে বিষয়ে নিজের মতো করে একটি ব্যাখ্যা দিয়েছেন ষাটের দশকে ছাত্র ইউনিয়ন করে আসা মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, ‘আপনাদের বিরুদ্ধে তিনি (সিরাজুল আলম খান) বিদ্রোহ ঘোষণা করেছিলেন। স্বাধীনতার পর যখন তারা (আ. লীগ সরকার) জনগণের সব অধিকার কেড়ে নিতে শুরু করল, চুরি আর দুর্নীতিতে দেশকে ভরে দিল, তখন এই মানুষটি আ স ম রব, শাহজাহান সিরাজদের নিয়ে, তরুণদের নিয়ে রুখে দাঁড়িয়েছিলেন আওয়ামী দুঃশাসনের বিরুদ্ধে।’

‘দেশটা কারও বাবার নয়’

দেশের সব শ্রেণি-পেশার মানুষের উদ্দেশে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘দেশটা আপনার। দেশটা কারও বাবার নয়। আমরা যুদ্ধ করে এ দেশ স্বাধীন করেছি। তার প্রতিদানে আজ কী পাচ্ছি? যে দেশে কোনো আইনের শাসন নেই, বিচার নেই, মানুষ তার নিজের প্রতিনিধি নির্বাচন করতে পারে না। সংবিধান কেটে-ছিঁড়ে এমন করেছে যে একমাত্র একজনকেই বন্দনা করতে হবে। তাদের নির্দেশেই দেশ চলবে।’ এ অবস্থার পরিবর্তন ঘটাতে সবাইকে চলমান আন্দোলনে শরিক হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।

ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক আবদুস সালামের সভাপতিত্বে সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির, স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক মীর সরাফত আলী, স্বনির্ভরবিষয়ক সম্পাদক শিরিন সুলতানা, মুক্তিযোদ্ধা দলের সাধারণ সম্পাদক সাদেক খান, কৃষক দলের সভাপতি হাসান জাফির, মহানগর দক্ষিণের যুগ্ম আহ্বায়ক সাইফুল ইসলাম ও তানভীর আহমেদ।