গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে গিরিজা কিশোর (জিকে) আদর্শ উচ্চবিদ্যালয় ভোটারদের অপেক্ষা
ছবি : তানভীর আহাম্মেদ

গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ভোট গ্রহণ শেষ হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার সকাল আটটায় আয়তনে দেশের সবচেয়ে বড় এই সিটির নির্বাচনের ভোট গ্রহণ শুরু হয়। শেষ হয় বেলা চারটায়।

তবে কয়েকটি কেন্দ্রে এখনও ভোট গ্রহণ চলছে। যারা ভোটকেন্দ্রের ভেতরে চারটার আগে ঢুকেছেন কিন্তু ভোট গ্রহণ বাকি, তাদের ভোট নেওয়া হচ্ছে। টঙ্গীর দারুসসুন্নাহ কেরামতিয়া মাদ্রাসা এমন একটি কেন্দ্র।

নির্বাচন কমিশনের তথ্যানুযায়ী, গাজীপুর সিটিতে মোট ভোটার ১১ লাখ ৭৯ হাজার ৪৭৬ জন। তাঁদের মধ্যে ৫ লাখ ৯২ হাজার ৭৬২ জন পুরুষ, ৫ লাখ ৮৬ হাজার ৬৯৬ জন নারী ও ১৮ জন হিজড়া। এই সিটিতে ৫৭টি সাধারণ ও ১৯টি সংরক্ষিত ওয়ার্ড আছে। মোট ভোটকেন্দ্র ৪৮০টি, মোট ভোটকক্ষ ৩ হাজার ৪৯৭টি।

নির্বাচনের মেয়র প্রার্থীরা হলেন নৌকা প্রতীকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আজমত উল্লা খান, টেবিলঘড়ি প্রতীকে জায়েদা খাতুন (সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের মা), লাঙ্গল প্রতীকে জাতীয় পার্টির প্রার্থী এম এম নিয়াজ উদ্দিন, হাতপাখা প্রতীকে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের গাজী আতাউর রহমান, গোলাপ ফুল প্রতীকে জাকের পার্টির মো. রাজু আহাম্মেদ, মাছ প্রতীকে গণফ্রন্টের প্রার্থী আতিকুল ইসলাম। এ ছাড়া স্বতন্ত্র থেকে মেয়র পদে ঘোড়া প্রতীকে মো. হারুন-অর-রশীদ ও হাতি প্রতীকে সরকার শাহনূর ইসলাম প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

আজ সকাল থেকেই ভোটকেন্দ্রগুলোয় ভোটারদের উপস্থিতি দেখা গেছে। তাঁদের মধ্যে উৎসাহ–উদ্দীপনাও ছিল বেশ। প্রার্থীরাও কেউ ভোট গ্রহণের অনিয়ম নিয়ে কোনো প্রশ্ন তোলেননি। আজ প্রথম আলোর সাংবাদিকেরা যেসব কেন্দ্র ঘুরেছেন, এর প্রতিটিতেই নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর পোলিং এজেন্ট দেখতে পেয়েছেন। অনেক স্থানে হাতপাখা প্রতীকের প্রার্থীর এজেন্টও ছিলেন। তবে অন্য প্রার্থীদের এজেন্টদের খুব কমই চোখে পড়েছে।  

পরিবেশ সুষ্ঠু হলেও ইভিএমে ভোট দিতে দেরি হওয়ায় ভোট গ্রহণ এগোয় ধীরগতিতে। এর ফলে অনেক কেন্দ্রে ভোটারদের দীর্ঘ লাইন দেখা দেয়। ভোট গ্রহণও দেরি হয়। ভোট শুরুর চার ঘণ্টা পর ভোগড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে সাড়ে ১২ শতাংশ ভোট গ্রহণ হয় বলে জানান ওই কেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তা।

ইভিএম নিয়ে অবশ্য ভিন্ন চিত্রও আছে। ইভিএমে অনেকে দ্রুত ভোট দিয়ে স্বস্তি প্রকাশ করেছেন। ছোট দেওড়া কেন্দ্রে ভোটার শেখ কামাল বলেন, তাঁর ভোট দিতে ১০ সেকেন্ডের বেশি লাগেনি। হোসনে আরা নামে আরেক ভোটার বলেন, তিনি যে প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন, সেখানে আঙুলের ছাপের মাধ্যমে হাজিরা দেন। ফলে ইভিএমে তাঁর কোনো সমস্যাই হয়নি।

জাঝর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, জাঝর, গাজীপুর
ছবি: দীপু মালাকার

কোনাবাড়ী এলাকার চারটি ভোটকেন্দ্রের মধ্যে একটিতে সর্বোচ্চ ৩২ দশমিক ৩৬ শতাংশ ভোট পড়েছে বলে জানান ওই ভোটকেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তারা। আজ বেলা দুইটার সময় এ তথ্য পাওয়া যায়।  

আজকের নির্বাচনে ভোট গ্রহণের সময় গোপন বুথে প্রবেশের দায়ে দুজনকে আজ আটক করা হয়। আজ সিসিটিভি ক্যামেরায় ভোট দেখার পর এই অনিয়ম চোখে পড়ে নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তাদের। তাঁরা বিষয়টি দেখার পর দুজনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা দেওয়ার নির্দেশ দেন। এরপর একজনকে আটক এবং অন্যজনকে তিন দিনের জেল দেওয়া হয়েছে।

গাজীপুরের বাসনের ১০১ নম্বর সোনারবান মেমোরিয়াল হাইস্কুল কেন্দ্র থেকে রিয়াদুল ইসলাম রিয়াজ এবং গাজীপুর সিটির বি ব্লকের ১০৩ নম্বর উম্মুল কুরা হিফজ মাদ্রাসা কেন্দ্র থেকে মো. আবু তাহেরকে আটকের নির্দেশ দেওয়া হয়।

গাজীপুর সিটির নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা ফরিদুল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করে প্রথম আলোকে বলেছেন, আটক ব্যক্তিদের একজনকে বিকেলে ছেড়ে দেওয়া নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আর অপরজনের তিন দিনের জেল দেওয়া হয়েছে।

নির্বাচনে সালনার নাগা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে দুই কাউন্সির প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। আজ দুপুর সাড়ে ১২টা থেকে বেলা ১টা পর্যন্ত ওই কেন্দ্রের প্রবেশমুখে এ ঘটনা ঘটে। এ সময় একজনকে রক্তাক্ত অবস্থায় দেখা যায়। তবে ওই কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ চলে।

এ নির্বাচনে শাসকদল আওয়ামী লীগের প্রার্থী আজমত উল্লা খান আজ সকাল ৯টার দিকে নিজ ওয়ার্ড ৫৭ নম্বরের টঙ্গী দারুস সালাম মাদ্রাসায় ভোটকেন্দ্রে ভোট দেন। ভোট দেওয়ার পর তিনি সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন।

আজমত উল্লা খান বলেন, ‘আজকের জয় নৌকার, নৌকারই হবে। গাজীপুরকে একটি দুর্নীতিমুক্ত সিটি করপোরেশন গঠনে মানুষের যে প্রত্যয়, তা নৌকার জয়ের মাধ্যমে নিশ্চিত হবে।’

আজমত উল্লা এটাও বলেন, নির্বাচনে যে ফলাফলই আসুক না কেন, তিনি সেটা মেনে নেবেন। জনরায়ই তাঁর কাছে মূল বিষয়।

এ নির্বাচনের স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুন এবং তাঁর ছেলে ও  সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলম ভোট গ্রহণ সুষ্ঠু হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন। তাঁরা দুজনেই আজ স্বতন্ত্র। জায়েদা খাতুনের নির্বাচন কার্যক্রমের প্রধান সমন্বয়কারী জাহাঙ্গীর আলম বলেন, বিকেল চারটা পর্যন্তই যেন ভোট গ্রহণ সুষ্ঠু হয়। কোনোভাবেই যেন সিসিটিভি ক্যামেরা ও ইভিএম মেশিন টেম্পারিং করা না হয়।

আজ সকাল ১০টায় স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুন ও জাহাঙ্গীর আলম সিটি করপোরেশনের ৩০ নম্বর ওয়ার্ডের কানাইয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোট দেন।

আরেক স্বতন্ত্র প্রার্থী শাহনুর ইসলাম নির্বাচনের শেষ পর্যন্ত মাঠে থাকার ঘোষণা দেন। তিনি বলেন, ‘মানুষ শেষ সময় পর্যন্ত কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিতে পারলে যে ফলই আসুক, তা মেনে নেব।’