বিএনপির পদযাত্রায় হামলা
৭ জেলায় আসামি ৭ হাজার
ঢাকা, বগুড়া, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, খাগড়াছড়ি, কিশোরগঞ্জ ও জয়পুরহাট জেলায় হামলা, সংঘর্ষ ও ভাঙচুরের ঘটনায় ১৬টি মামলা দায়ের।
বিএনপির পদযাত্রায় বাধা, হামলা ও সংঘর্ষের ঘটনায় ঢাকাসহ দেশের ৭ জেলায় বিএনপি ও এর সহযোগী সংগঠনের ৯১৬ জন নেতা–কর্মীর নাম উল্লেখ করে ১৬টি মামলা হয়েছে। এসব মামলায় ৭ হাজার ৫১ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে। পুলিশ, আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের নেতা–কর্মীরা এসব মামলার বাদী। এসব মামলায় গতকাল বুধবার পর্যন্ত ৪০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
ঢাকায় মিরপুরে সরকারি বাঙলা কলেজে পাল্টাপাল্টি হামলার ঘটনায় মিরপুর এলাকার বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের ১৮৮ নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে গত মঙ্গলবার দারুসসালাম থানায় দুটি মামলা হয়েছে। মামলা দুটিতে ৩৯১ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি দেখানো হয়েছে। মঙ্গলবার রাতেই পুলিশ মিরপুরের বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে এজাহারভুক্ত ১৮ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। গতকাল তাঁদের আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। আসামিদের বিরুদ্ধে মারধর, ভাঙচুর ও পোড়ানোর অভিযোগ আনা হয়েছে।
এজাহার বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, আসামিরা দারুসসালাম, শাহ আলী, মিরপুর, পল্লবী, রূপনগর, মিরপুর, কাফরুল থানা এবং ওয়ার্ড কমিটির বিএনপি, শ্রমিক দল, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদলের বিভিন্ন স্তরের নেতা-কর্মী।
দারুসসালাম থানায় একটি মামলার বাদী সরকারি বাঙলা কলেজের অফিস সহকারী মাহিদুর রহমান। গতকাল তিনি বলেন, ‘ঘটনার সময় অফিসে ছিলাম। কারা, কেন ভেতরে ঢুকেছে, তা জানি না। হামলাকারীদের সঙ্গে আমার দেখা হইনি। আমাকে কেউ মারধর কিংবা কোনো হুমকি–ধমকি দেয়নি। মামলা কে বা কারা লিখেছে, তা–ও আমি জানি না। কাদের আসামি করা হয়েছে, তা–ও জানি না। প্রিন্সিপাল স্যার বলেছেন, আমাকে থানায় গিয়ে সই দিয়ে আসতে, সেইভাবে গতকাল (মঙ্গলবার) রাতে আমি থানায় গিয়ে সই দিয়ে আসছি।’ অপর মামলার বাদী রুবেল হোসেন সরকারি বাঙলা কলেজ শাখার ছাত্রলীগের নেতা। তিনি থাকেন কলেজের পাশে প্রিন্সিপাল আবুল কাশেম হলে।
বগুড়ায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনায় জেলা বিএনপির সভাপতি রেজাউল করিম বাদশা, সাধারণ সম্পাদক আলী আজগর তালুকদারসহ দলটির ২১১ নেতা-কর্মীর নামে পৃথক চারটি মামলা হয়েছে। মামলাগুলোতে অনেককে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে। মঙ্গলবার রাতে বগুড়া সদর থানায় তিনটি ও দুপচাঁচিয়া থানায় একটি মামলা হয়। দুটি মামলায় পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
বগুড়ার পুলিশ সুপার সুদীপ কুমার চক্রবর্ত্তী বলেছেন, পুলিশ ফাঁড়িতে হামলা, সরকারি কাজে বাধা, ভাঙচুর ও ককটেল হামলার ঘটনায় বিশেষ ক্ষমতা আইনে, বিস্ফোরক দ্রব্য আইনসহ বিভিন্ন ধারায় চারটি মামলা করা হয়েছে।
লক্ষ্মীপুরে বিএনপির সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের ঘটনায় গতকাল রাতে চারটি মামলা হয়েছে। দুটি মামলায় বিএনপির কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরীকে প্রধান করে ৫৫ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে, অজ্ঞাতনামা আসামি ৩ হাজার ৫০০ জন। কৃষকদলের কর্মী সজীব হত্যার ঘটনায় তাঁর ভাই সুজন হোসেন অজ্ঞাত ব্যক্তিদের আসামি করে মামলা করেন। অপর মামলার বাদী নুরুল আমিন। তাঁর বাড়ি ও গাড়ি ভাঙচুরের ঘটনায় অজ্ঞাতনামা ২৫০ জনের বিরুদ্ধে বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা হয়েছে।
ফেনীতে বিএনপির পদযাত্রার সময় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনায় দুটি মামলা হয়েছে। মঙ্গলবার গভীর রাতে ফেনী শহর পুলিশ ফাঁড়ির উপপরিদর্শক হায়াত উল্যা ফেনী মডেল থানায় মামলা দুটি করেন। দুটি মামলাতেই বিএনপি ও এর সহযোগী সংগঠনের ৮৮ নেতা-কর্মীর নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতনামা ২ হাজার ব্যক্তিকে আসামি করা হয়েছে।
খাগড়াছড়িতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নেতা-কর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় ১৫৭ জনকে আসামি করে একটি মামলা করেছেন সদর থানার এসআই মামুন হোসেন। মামলায় ১৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
এদিকে কিশোরগঞ্জে বিএনপির পদযাত্রা থেকে পুলিশের ওপর হামলার অভিযোগে মামলা হয়েছে। গতকাল সদর মডেল থানার এসআই ফজলুর রহমান বাদী হয়ে ১৯ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতনামা ৬০ থেকে ৭০ জনকে আসামি করে মামলাটি করেন। সদর মডেল থানার ওসি মোহাম্মদ দাউদ জানান, এজাহারে জেলা যুবদলের সভাপতি খসরুজ্জামান শরীফ, জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্যসচিব আবু নাসের, জেলা যুবদলের সাংগঠনিক সম্পাদক তারেকুজ্জামানসহ ১৯ জনের নাম আছে।
জয়পুরহাটে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় পুলিশ ও ছাত্রলীগের এক নেতা দুটি মামলা করেছেন। জয়পুরহাট সদর থানায় করা মামলার বাদী এসআই রুবেল হোসেন। এ মামলায় আসামির তালিকায় বিএনপির ৮২ নেতা–কর্মীর নাম রয়েছে। অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে ৪০০–৫০০ জনকে। আসামির তালিকায় বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সহসাংগঠনিক সম্পাদক এইচ এম ওবায়দুর রহমান (চন্দন) ও জেলা বিএনপির আহ্বায়ক গোলজার হোসেনের নাম রয়েছে।
একই ঘটনায় জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি জাকারিয়া হোসেন রাজা বাদী হয়ে সদর থানায় আরও একটি মামলা করেছেন। মামলায় বিএনপি ও দলের সহযোগী সংগঠনের ১১৬ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে ৪০০ জনকে।