গণ–অবস্থান থেকে সরকারকে নতুন ‘বার্তা’ দেবে বিএনপি

  • বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির উদ্যোগের প্রতিবাদে ১৬ জানুয়ারি বিক্ষোভ কর্মসূচি দেওয়া হতে পারে।

  • ২৫ জানুয়ারিতেও প্রতিবাদ কর্মসূচি দেওয়ার চিন্তা করছে বিএনপি।

সরকারবিরোধী আন্দোলন জোরদার করতে নয়টি বিভাগীয় সমাবেশ করেছে বিএনপি
ফাইল ছবি

যুগপৎ আন্দোলনে বিএনপিসহ সরকারবিরোধী বিভিন্ন দল ও জোট ঢাকাসহ বিভাগীয় শহরগুলোতে আজ বুধবার একযোগে গণ-অবস্থান কর্মসূচি পালন করবে। বর্তমান সরকারের পদত্যাগ, সংসদ বিলুপ্ত করা ও নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীন নির্বাচনসহ ১০ দফা দাবিতে বিএনপির নেতৃত্বে বিভিন্ন দল ও জোট গত ডিসেম্বর থেকে যুগপৎ আন্দোলন শুরু করেছে। আজকের গণ-অবস্থান তাদের দ্বিতীয় যুগপৎ কর্মসূচি।

জামিনে মুক্তি পাওয়ার দুই দিন পরই বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে ঢাকার কর্মসূচিতে। এর আগে গত ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় গণসমাবেশের দুই দিন আগে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এবং দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। তাঁরা প্রায় এক মাস কারাবন্দী ছিলেন।

বিএনপিসহ আন্দোলনকারী দলগুলো এবার নতুন কর্মসূচির ক্ষেত্রে তাদের প্রধান দাবির পাশাপাশি নাগরিক দুর্ভোগের বিষয়ও সামনে আনছে। সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে, আজ বুধবার গণ-অবস্থান কর্মসূচি থেকে ১৬ জানুয়ারি দেশব্যাপী বিক্ষোভ সমাবেশের যুগপৎ কর্মসূচি দেওয়া হতে পারে। নতুন এ কর্মসূচি চিন্তার ক্ষেত্রে মূল বিষয় হবে গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম ১৫ শতাংশ বৃদ্ধির সরকারি উদ্যোগের প্রতিবাদ করা। দুই দিন আগে সরকারের পক্ষ থেকে বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব তুলে ধরা হয়।

আরও পড়ুন

ঢাকায় গণ-অবস্থান কর্মসূচির জন্য পুলিশের অনুমতি পাওয়া গেছে আগের দিন মঙ্গলবার সন্ধ্যায়। তবে শর্ত রয়েছে। বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলোকে সড়ক অবরোধ না করে ফুটপাতে এই অবস্থান কর্মসূচি পালন করতে হবে। জনদুর্ভোগ যাতে না হয়, সে জন্য এই শর্ত দেওয়ার কথা পুলিশ বলেছে। বিএনপির নেতারা বলেছেন, অবস্থান কর্মসূচিতে তাঁরা ফুটপাত ধরে সড়ক বিভাজক পর্যন্ত, সড়কের একটি অংশে তাঁরা অবস্থান নেবেন। ঢাকার গণ-অবস্থান কর্মসূচি ঘিরে পুলিশ সতর্ক ব্যবস্থা নিয়েছে। রাজধানীতে প্রবেশমুখে গতকাল মঙ্গলবার পুলিশের তল্লাশিচৌকি ছিল।

আন্দোলনকারী দলগুলো এবার নতুন কর্মসূচির ক্ষেত্রে তাদের প্রধান দাবির পাশাপাশি নাগরিক দুর্ভোগের বিষয়কেও সামনে আনছে।

বিরোধীদের এই কর্মসূচিকে ঘিরে আজ ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগও রাজধানীতে ‘সতর্ক পাহারায়’ থাকবে বলে দলটি জানিয়েছে। এর মধ্যে আওয়ামী লীগের ঢাকা মহানগর দক্ষিণ শাখার সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে অবস্থান ও সমাবেশ এবং মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগ বিকেলে মিরপুর সনি সিনেমা হলের পেছনে ‘শান্তি সমাবেশ’ করবে। এ ছাড়া যুবলীগ বেলা ১১টায় ফার্মগেটে ও দুপুর ১২টায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সমাবেশ এবং ছাত্রলীগ বেলা ১১টা থেকে ৩টা পর্যন্ত শাহবাগে অবস্থান কর্মসূচি দিয়েছে।

বিএনপি আজ ঢাকাসহ ১০টি বিভাগীয় শহরে (সাংগঠনিক বিভাগ) যে গণ-অবস্থান কর্মসূচি দিয়েছে, প্রতিটিতে দলের কেন্দ্রীয় নেতারা অংশ নেবেন। এর মধ্যে কেন্দ্রীয়ভাবে ঢাকার নয়াপল্টনে বেলা ১১টা থেকে ৩টা পর্যন্ত এই কর্মসূচি হবে। এতে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের পাশাপাশি স্থায়ী কমিটির জ্যেষ্ঠ সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন ও সদ্য কারামুক্ত আরেক নেতা মির্জা আব্বাসও উপস্থিত থাকবেন।

আরও পড়ুন

এর আগে ৩০ ডিসেম্বর সরকারের পদত্যাগ এবং নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীন নির্বাচনসহ ১০ দফা দাবিতে ঢাকায় বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলো যুগপৎভাবে গণমিছিল করেছিল। তার আগে বিএনপি রাষ্ট্রকাঠামো মেরামতের রূপরেখা ও ২৭ দফা প্রস্তাব তুলে ধরেছে। এখন তারা বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে নতুন কর্মসূচি নেওয়ার কথা বলছে।

বিএনপিসহ যুগপৎ আন্দোলনে যুক্ত দলগুলোর দায়িত্বশীল একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) গঠিত কারিগরি মূল্যায়ন কমিটি এবার গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম ১৫ শতাংশ বাড়ানোর যে সুপারিশ করেছে, তা আমলে নিয়ে আগেভাগেই শক্ত প্রতিবাদ জানাবে বিরোধীরা। বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির সরকারি পাঁয়তারা বন্ধের দাবিতে যুগপৎভাবে দেশব্যাপী বিক্ষোভ সমাবেশ করার সিদ্ধান্ত হয়।

এর বাইরে

২৫ জানুয়ারি বিএনপি দলীয়ভাবে একটি কর্মসূচি দিতে পারে বলে দলটির সূত্রে জানা গেছে। ১৯৭৫ সালের ২৫ জানুয়ারি সংবিধানের চতুর্থ সংশোধনীর মাধ্যমে সংসদীয় শাসনব্যবস্থা বাতিল করে একদলীয় শাসনব্যবস্থা (বাকশাল) প্রবর্তন করা হয়েছিল। এর প্রতিবাদে সেই দিনটিতে অতীতের মতো এবারও বিএনপি কর্মসূচি রাখতে চাইছে।

বিএনপির সূত্র জানায়, গণ-অবস্থান কর্মসূচিতে অংশ নিতে জ্যেষ্ঠ নেতারা বিভিন্ন বিভাগে পৌঁছে গেছেন। এর মধ্যে স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় সিলেটে, আবদুল মঈন খান রাজশাহীতে, নজরুল ইসলাম খান ময়মনসিংহে, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী চট্টগ্রামে, সেলিমা রহমান বরিশালে, ইকবাল হাসান মাহমুদ রংপুরে।

এ ছাড়া দলের ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ কুমিল্লায়, শামসুজ্জামান খুলনায় ও আহমেদ আজম খান ফরিদপুরের বিভাগীয় গণ-অবস্থানে অংশ নেবেন।

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গত রাতে প্রথম আলোকে বলেন, ‘দেশে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার এবং ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠার দাবি এখন জনগণের পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে মাঠে নামতে শুরু করেছে। তাই কোনো দমন-পীড়ন, গ্রেপ্তার এই গণজাগরণকে বন্ধ করতে পারবে না। জনগণের বিজয় হবেই।’

প্রেসক্লাব, বিজয়নগর এলাকায় গণ-অবস্থান অন্যদের

বিএনপির পাশাপাশি সরকারবিরোধী অন্তত চারটি জোট রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাব, বিজয়নগর ও পুরানা পল্টন এলাকায় গণ-অবস্থান করবে। এর মধ্যে সাতদলীয় জোট ‘গণতন্ত্র মঞ্চ’ বেলা ১১টা জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এবং বাম গণতান্ত্রিক ঐক্যজোট কাছাকাছি জায়গায় গণ-অবস্থান করবে। ১২-দলীয় জোট বিজয়নগরে পানির ট্যাংকের পাশে, জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট পুরানা পল্টন মোড়-সংলগ্ন এলাকায়, অলি আহমেদের লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি) এফসিডি-সংলগ্ন দলীয় কার্যালয়ের সামনে এবং মোস্তফা মহসীন মন্টুর নেতৃত্বাধীন গণফোরাম আরামবাগে ইডেন কমপ্লেক্স-সংলগ্ন সড়কে পৃথক গণ-অবস্থান করবে বলে এক বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে।

তবে যুগপৎ আন্দোলনের প্রথম কর্মসূচি ‘গণমিছিল’ এক জোটে করলেও আজকের গণ-অবস্থান কর্মসূচিতে নেই জামায়াতে ইসলামী। দলটি এবার ১১ জানুয়ারি ‘গণতন্ত্র হত্যা’ দিবস হিসেবে বিভাগীয় পর্যায়ে দলীয়ভাবে আলোচনা সভা করবে।

আরও পড়ুন