জামায়াতের সঙ্গে এনসিপির নির্বাচনী সমঝোতা, আসনসংখ্যা চূড়ান্ত হয়নি

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় নাগরিক পার্টি

জামায়াতে ইসলামীসহ আট দলের সঙ্গে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নির্বাচনী সমঝোতা হয়েছে। এই সমঝোতায় কর্নেল (অব.) অলি আহমদের নেতৃত্বাধীন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টিও (এলডিপি) যুক্ত হয়েছে। তবে এখন এই ১০ দলের কে কোথায় নির্বাচন করবেন, তা এখনো ঘোষণা করা হয়নি। কিছু আসনে নতুন করে জরিপ চালিয়ে আসন ছাড়ের বিষয়ে আলোচনা অব্যাহত রাখতে চায় দলগুলো।

একাধিক দলের শীর্ষস্থানীয় নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ৮০ শতাংশের বেশি আসনে দলগুলোর মধ্যে সমঝোতা হয়েছে। বাকি আসনগুলোতে একাধিক দলের প্রার্থীরা নির্বাচন করার আগ্রহ দেখানোয় এবং প্রতিটি দলের প্রার্থী নিজেকে যোগ্য হিসেবে বিবেচনা করায় সমঝোতার আলোচনা আটকে আছে। এ কারণে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত এখনো নেওয়া সম্ভব হয়নি। এমনকি মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার পর্যন্ত এ আলোচনা চলতে পারে। তবে সব দল রাজনৈতিক বাস্তবতা বুঝে আসন ছাড়ের বিষয়ে মানসিকতা দেখালে জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহেই এটি চূড়ান্ত হতে পারে।

দলগুলো নিজেদের মধ্যে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সারা দেশের ৩০০ আসনে প্রার্থী নির্ধারণ করেছে। দুটি দল একেবারে শেষ পর্যায়ে এসেছে। আরও অনেক দল আসন সমঝোতায় আগ্রহী ছিল।
শফিকুর রহমান, জামায়াতের আমির

রাজনৈতিক সূত্র জানিয়েছে, একাধিক প্রার্থী রয়েছেন, এমন অন্তত ৫২টি আসনে একক প্রার্থী চূড়ান্ত করতে আবার জরিপ চালানো হবে দলগুলোর পক্ষ থেকে। আগামী কয়েক দিন প্রার্থীদের কর্মকাণ্ড, যোগ্যতা ও জনপ্রিয়তা পর্যবেক্ষণ করা হবে। এরপর সেসব আসনে প্রার্থী চূড়ান্ত করা হবে। তবে এসবের বাইরে আরও কিছু আসনে সমঝোতা নিয়ে দলগুলোর মধ্যে একধরনের অস্বস্তি রয়েছে বলে সূত্রগুলো জানিয়েছে।

বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমির মাওলানা মামুনুল হক প্রথম আলোকে বলেন, আলোচনার মাধ্যমে কিছুটা সমঝোতা হয়েছে, তবে ক্ষোভ নিরসন হয়নি। এ জন্য আরও কাজ করতে হবে। অবশিষ্ট আসনগুলো নিয়ে সমঝোতা না হওয়া পর্যন্ত এটিকে চূড়ান্ত বলা যাবে না। কয়েকটি আসনে শেষ পর্যন্ত সমঝোতা না হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে জানিয়ে মামুনুল হক বলেন, অনেক আসনে সমঝোতা না-ও হতে পারে।

গভীর রাত পর্যন্ত আলোচনা

রাজনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, আসন সমঝোতা চূড়ান্ত করতে শনিবার সকাল থেকে বিভিন্ন দলের কার্যালয়ে জামায়াতের সঙ্গে দলগুলোর বৈঠক হয়। শনিবার সন্ধ্যার পর রাজধানীর মগবাজারে জামায়াতের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সব দলকে নিয়ে বৈঠক শুরু হয়। বৈঠক চলে মধ্যরাত পর্যন্ত। এরপর রোববার সকালে আট দলের শীর্ষ নেতারা জামায়াতের কার্যালয়ে আবার আলোচনায় বসেন। তবে ৩০০ আসনে সমঝোতা চূড়ান্ত করা এখনো সম্ভব হয়নি।

জানতে চাইলে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের যুগ্ম মহাসচিব শেখ ফজলে বারী মাসউদ প্রথম আলোকে বলেন, শুরু থেকে আলোচনা ছিল, যে আসনে যে প্রার্থী বেশি জনপ্রিয়, তাঁকে প্রার্থী করা হবে। তবে সেটি হয়নি।

এখনো প্রার্থী চূড়ান্ত করা যায়নি, এমন আসনগুলোতে আবারও জরিপ চালানো হবে জানিয়ে ফজলে বারী মাসউদ বলেন, প্রার্থী চূড়ান্ত করতে দলগুলোর পক্ষ থেকে অভ্যন্তরীণ জরিপ চালানো হয়েছে। এরপরও যেসব আসনে বিতর্ক রয়ে গেছে, সেখানে নতুন করে জরিপ করা হবে। তারপর আসন সমঝোতার বিষয়টি চূড়ান্ত হবে।

ইসলামী আন্দোলন ৩০০ আসনে মনোনয়ন ফরম জমা দেবে জানিয়ে দলটির যুগ্ম মহাসচিব আরও বলেন, সমঝোতার পর বাকি আসনগুলোর মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করা হবে।

এদিকে আসন সমঝোতা নিয়ে চূড়ান্ত আলোচনা হয়েছে বলে জানিয়েছেন এলডিপি চেয়ারম্যান কর্নেল (অব.) অলি আহমদ। গতকাল রাতে প্রথম আলোকে তিনি বলেন, তাঁদের কয়টি আসনে ছাড় দেওয়া হবে, সেটি জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।

সূত্র আরও বলছে, ১০ দলের পাশাপাশি এবি পার্টিও সমঝোতার আলোচনায় আছে। গতকাল বিকেলে দলটির সঙ্গে জামায়াতের বৈঠক হয়েছে। তবে আসন সমঝোতার বিষয়ে আলোচনা কত দূর এগিয়েছে, তা জানা যায়নি।

জামায়াতের প্রচার ও মিডিয়া বিভাগের প্রধান এহসানুল মাহবুব জুবায়ের প্রথম আলোকে বলেন, আসন সমঝোতা চূড়ান্ত করতে আরও কিছু সময় লাগবে। কিছু কিছু আসনে সমঝোতা হতে মনোনয়ন প্রত্যাহারের শেষ সময় পর্যন্ত লেগে যেতে পারে।

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোট অনুষ্ঠিত হবে আগামী ১২ ফেব্রুয়ারি। আজ মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিন। আর প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ তারিখ ২০ জানুয়ারি।

সংবাদ সম্মেলন

গতকাল রোববার বিকেলে ঢাকার জাতীয় প্রেসক্লাবে আট দলের ব্যানারে জরুরি সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। এলডিপির চেয়ারম্যান অলি আহমদ সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত থাকলেও কোনো বক্তব্য দেননি। এ ছাড়া নিজেদের বৈঠক থাকায় সংবাদ সম্মেলনে যোগ দিতে পারেনি এনসিপি। অবশ্য গতকাল রাতে এনসিপি সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে জামায়াতের নেতৃত্বাধীন আট দলের সঙ্গে নির্বাচনী সমঝোতা হওয়ার কথা জানিয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে জামায়াতের আমির শফিকুর রহমান বলেন, বাংলাদেশ যখন জাতীয় জীবনের এক কঠিন বাঁকে এসে দাঁড়িয়েছে, সে সময় দেশকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য, দুর্নীতিমুক্ত ইনসাফের বাংলাদেশ গড়ার অঙ্গীকার নিয়ে এত দিন আট দল কাজ করে আসছে। তার সঙ্গে আরও দুটি দল সম্পৃক্ত হয়েছে—এলডিপি ও এনসিপি।

১০ দল মজবুত নির্বাচনী সমঝোতায় এক হয়েছে জানিয়ে শফিকুর রহমান বলেন, দলগুলো নিজেদের মধ্যে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সারা দেশের ৩০০ আসনে প্রার্থী নির্ধারণ করেছে। দুটি দল একেবারে শেষ পর্যায়ে এসেছে। আরও অনেক দল আসন সমঝোতায় আগ্রহী ছিল। তবে এ মুহূর্তে এই প্রক্রিয়ায় তাদের সম্পৃক্ত করা দুরূহ হয়ে গেছে। অনেকের আগ্রহ থাকা সত্ত্বেও সম্পৃক্ত করা যাচ্ছে না। এ জন্য তিনি দলগুলোর নেতাদের কাছে দুঃখ প্রকাশ করেন।

আসন সমঝোতা প্রায় চূড়ান্ত হয়ে গেছে জানিয়ে জামায়াতের আমির বলেন, সামান্য একটু বিষয় যেগুলো রয়েছে, মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার পরপরই সেগুলোও আলাপ-আলোচনার ভিত্তিতে সমাধান করা যাবে। এ ক্ষেত্রে কোনো সমস্যা হবে না। এ ব্যাপারে দলগুলো আস্থাশীল।

শফিকুর রহমান বলেন, ১০ দল নির্বাচন কমিশনের ঘোষণা অনুযায়ী আগামী বছরের ১২ ফেব্রুয়ারিই নির্বাচন চায়। তবে এখনো সব দলের জন্য সমতল মাঠ তৈরি হয়নি। আগামী নির্বাচনে কেউ ভোটের অধিকার হরণ করতে চাইলে তা বরদাশত করা হবে না।

সংবাদ সম্মেলন সঞ্চালনা করেন বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমির মামুনুল হক। আরও উপস্থিত ছিলেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রেসিডিয়াম সদস্য আশরাফ আলী আকন, খেলাফত মজলিসের মহাসচিব আহমদ আবদুল কাদের, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের নায়েবে আমির মুজিবুর রহমান হামিদী, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টির (জাগপা) মুখপাত্র রাশেদ প্রধান, জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল হামিদুর রহমান আযাদ প্রমুখ।

সংবাদ সম্মেলনের বিষয়ে জানতে চাইলে খেলাফত মজলিসের মহাসচিব আহমদ আবদুল কাদের গতকাল রাতে প্রথম আলোকে বলেন, দলগুলো একসঙ্গে নির্বাচন করবে, সংবাদ সম্মেলন ছিল তারই একটা বার্তা। তবে আসন সমঝোতা এখনো চূড়ান্ত হয়নি। এ জন্য আরও আলোচনা করতে হবে।