কেউ কোলে করে ক্ষমতায় বসাবে না, বিএনপির এই উপলব্ধি ভালো: তথ্যমন্ত্রী
তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেছেন, বিএনপি মহাসচিবের বক্তব্যে প্রমাণিত হয়, এত দিন পরে তাঁদের উপলব্ধি হয়েছে যে কোলে করে কেউ ক্ষমতায় বসাবে না। যারাই নির্বাচনে বাধা দেবে, তাদের সবার ক্ষেত্রে ভিসা নীতি প্রযোজ্য হবে। সেটিও মির্জা ফখরুল বা বিএনপি বুঝতে পেরে কর্মীদের বলেছে, আন্দোলন করতে হবে। তাঁদের এই উপলব্ধি ভালো।
আজ রোববার দুপুরে সচিবালয়ে ১৯৭১ সালের ৫ আগস্ট তৎকালীন পাকিস্তান সরকার প্রকাশিত শ্বেতপত্র ‘হোয়াইট পেপার অন ক্রাইসিস অব ইস্ট পাকিস্তান’ পুনর্মুদ্রণের মোড়ক উন্মোচন শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে হাছান মাহমুদ এসব কথা বলেন। তথ্য মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানানো হয়।
হাছান মাহমুদ বলেন, মির্জা ফখরুলদের আগের উৎফুল্ল ভাব এখন আস্তে আস্তে ফ্যাকাশে হয়ে যাচ্ছে। কারণ, তাঁরা বুঝতে পারছেন যথাসময়ে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়ে যাবে। কেউ তাঁদের কোলে করে ক্ষমতায় বসাবে না। অনেক রাজনৈতিক দল নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে। বিএনপিরও অনেকেই অংশগ্রহণ করবেন, তৃণমূল বিএনপিতে ইতিমধ্যেই কয়েকজন বিএনপি নেতা যোগদান করেছেন।
‘সুতরাং তাঁদের অনুরোধ জানাব নির্বাচনকে বাধাগ্রস্ত করার পথ পরিহার করে নির্বাচনে আসার জন্য। বাস্তবতাবিবর্জিত না হয়ে বাস্তবতা মেনে নিয়ে নির্বাচনের পথে হাঁটার জন্যই তাঁদের প্রতি অনুরোধ জানাব,’ বলেন হাছান মাহমুদ।
এ সময় তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘নির্বাচনে কোন দল অংশগ্রহণ করল, সেটির চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে জনগণ অংশগ্রহণ করল কি না। সিটি করপোরেশন নির্বাচনগুলোয় বিএনপি অংশ নেয়নি কিন্তু ৫০ শতাংশের বেশি মানুষ সেখানে ভোট দিয়েছেন এবং নির্বাচন জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য হয়েছে। আগামী নির্বাচনে যদি বিএনপি আসে, তাদের আমরা স্বাগত জানাই। আমরা চাই, তারা অংশগ্রহণ করুক। কিন্তু না এলেও জনগণের ব্যাপক অংশগ্রহণ থাকবে। নির্বাচন অবশ্যই গ্রহণযোগ্য হবে।’
নির্বাচনকালীন সরকারের আকার ছোট করা হবে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে হাছান মাহমুদ বলেন, ‘দেখুন, এটি প্রধানমন্ত্রীর এখতিয়ার। সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচনকালীন সরকার ছোট করার কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। প্রধানমন্ত্রী যেকোনো সিদ্ধান্তই গ্রহণ করতে পারেন। ২০১৮ সালের নির্বাচনের আগে কোনো নির্বাচনকালীন সরকার ছোট করা হয়নি। যে সরকার ছিল, সেই সরকারই দায়িত্ব পালন করেছে।’
যুক্তরাষ্ট্রের একটি প্রাক্-নির্বাচন পর্যবেক্ষক দল গতকাল শনিবার দেশে এসেছে, এ নিয়ে করা প্রশ্নে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘এটি তো ভালো। কারণ, বিদেশিদের আগ্রহ আছে। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আমাদের বহুমাত্রিক সম্পর্ক উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে। জঙ্গি ও সন্ত্রাসবাদ দমনে, আমাদের উন্নয়নে—সব জায়গায় যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আমাদের সহযোগিতার সম্পর্ক আছে। তাদের যে প্রতিনিধিদল এসেছে, আমি মনে করি, সেটি ভালো।’
এর আগে পুনর্মুদ্রিত শ্বেতপত্রের মোড়ক উন্মোচনকালে হাছান মাহমুদ বলেন, ‘১৯৭১ সালে পাকিস্তান সরকার আমাদের মুক্তিযুদ্ধকে “ইস্ট পাকিস্তান ক্রাইসিস” শিরোনামে যে শ্বেতপত্র প্রকাশ করেছিল, সেটি পড়লেই বোঝা যাবে যে আসলে মুক্তিযুদ্ধে কে নেতৃত্ব দিয়েছে, মুক্তিযুদ্ধ কাকে ঘিরে হয়েছে। এই শ্বেতপত্রের কোনো জায়গায় জিয়াউর রহমানের নাম নেই। অথচ এ দেশে খলনায়কদের নায়ক বানানোর চেষ্টা করা হয়েছে।’
তথ্যমন্ত্রী বলেন, এই শ্বেতপত্রে পাকিস্তান সরকার আগাগোড়াই বঙ্গবন্ধুকে অভিযুক্ত করেছে এবং আরও কিছু কিছু নেতার নাম এসেছে, যাঁরা আওয়ামী লীগ নেতা এবং জাতীয় নেতা হিসেবে সমাদৃত। সঠিক ইতিহাস জানার ক্ষেত্রে এটি অত্যন্ত সহায়ক একটি প্রকাশনা।
এ সময় শ্বেতপত্রের পুনর্মুদ্রণ সংস্থা চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক স ম গোলাম কিবরিয়া, পরিচালক (প্রশাসন) মোহাম্মদ আলী সরকার, তথ্য অধিদপ্তরের উপপ্রধান তথ্য কর্মকর্তা নাসরিন জাহান মোড়ক উন্মোচনে অংশ নেন।