বিএনপির অনুপস্থিতির প্রতিক্রিয়া ভোটার উপস্থিতি দিয়ে কাটাতে হবে: ওবায়দুল কাদের

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরফাইল ছবি

নির্বাচনে সম্মানের সঙ্গে জেতা আওয়ামী লীগের জন্য চ্যালেঞ্জের বলে উল্লেখ করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেছেন, ‘এ চ্যালেঞ্জ অতিক্রম করতে হবে। বিএনপির অনুপস্থিতি নিয়ে গোটা দুনিয়ায় যে প্রতিক্রিয়া, সেই বিষয়টা যেন ভোটারের অংশগ্রহণ দিয়ে আমরা কাভার করতে পারি এবং নির্বাচনটা শান্তিপূর্ণ করতে পারি, সেটা খুব জরুরি।’

আজ মঙ্গলবার তেজগাঁওয়ের ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন–সংশ্লিষ্ট দপ্তরবিষয়ক উপকমিটির মতবিনিময় সভায় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এসব কথা বলেন।

ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আমরা একটা চ্যালেঞ্জিং সময় অতিক্রম করছি। নির্বাচন আমাদের জন্য খুব চ্যালেঞ্জের। দেশের প্রধান বিরোধী দল (বিএনপি) নির্বাচনে নেই। শুধু বয়কট করেনি, নির্বাচনকে পণ্ড, ভন্ডুল করার জন্য সন্ত্রাস করছে। এর সঙ্গে বিদেশি কারও কারও হাত রয়েছে। তাদের সুদূরপ্রসারী লক্ষ্য আছে।’

ভূরাজনৈতিক স্বার্থও জড়িত থাকতে পারে মন্তব্য করে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘ব্যবসায়িক প্রাপ্তির ক্ষেত্রও তৈরি করতে পারে, সামরিক দিক থেকে এ অঞ্চলের আধিপত্য বিস্তারে বা নিজেদের শক্তিকে অক্ষুণ্ন রাখা। ভৌগোলিক দিক থেকে বাংলাদেশটা অনেক গুরুত্বপূর্ণ, যেটা বঙ্গোপসাগর ও ভারত মহাসাগরকে ঘিরে। প্রধানমন্ত্রী নিজেই বলেছেন, এখানে এয়ার বেজ করার কারও কারও স্বপ্ন আছে। এসব দিক থেকে নির্বাচন আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। মূল লক্ষ্য শেখ হাসিনাকে ক্ষমতা থেকে হটানো।’

গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়ার সুবর্ণ সুযোগ সামনে বলে মন্তব্য করেন ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, সংকটকে সম্ভাবনায় রূপ দেওয়ার অগ্নিপরীক্ষা, কঠিন লড়াইয়ের কান্ডারি শেখ হাসিনা। বর্তমান সংকট মোকাবিলায় তিনি যে দিকনির্দেশনা রেখেছেন, পুরোপুরি সেটা অনুসরণ করে এগিয়ে যেতে হবে। কোনো ব্যত্যয় গ্রহণযোগ্য হবে না।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আওয়ামী লীগের উপস্থিতি নগণ্য বলে মনে করেন ওবায়দুল কাদের। এর জন্য আওয়ামী লীগ ও বাইরের দু-একজন বিশেষজ্ঞ ব্যবহার করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দলের প্রচার বাড়ানোর তাগিদ দেন তিনি। দলের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘আমাদের প্রতিপক্ষের অবস্থা খুবই আক্রমণাত্মক। তাদের আক্রমণের মুখে আমরা ঢিমেতালে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যতটুকু জড়িত, এ দিয়ে কাজ হবে না। এ দুর্বলতা কাটিয়ে উঠতে হবে।’

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বর্তমান সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টি অংশগ্রহণ না–ও করতে পারে—এমন আশঙ্কার কথা জানিয়েছেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আশঙ্কা আছে, আমাদের দলের অনেকেরই আশঙ্কা আছে; দেশের জনগণের মাঝেও এটা নিয়ে একটা শঙ্কা আছে। কিন্তু এটা চূড়ান্ত কথা হিসেবে এই মুহূর্তে আমরা বিবেচনায় আনতে পারছি না।’

গণতন্ত্রে সব কিছু সম্ভব মন্তব্য করে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘গণতান্ত্রিক নির্বাচনে বয়কট করা, ওয়াকআউট করা—এসব বিষয় গণতান্ত্রিক নির্বাচনের সব জায়গাতেই আছে। কী হবে, এটা তো এই মুহূর্তে বলতে পারছি না, হলেও হতে পারে। কিন্তু এ ব্যাপারে এই মুহূর্তে আমি কী করে বলব, তারা সরে যাবে? এই মুহূর্তে বলতে পারছি না।’

প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে রওশন এরশাদের বৈঠক প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ওবায়দুল কাদের বলেন, রওশন এরশাদ এখনো বিরোধী দলের নেতা। কারণ, সংসদ সুপ্ত আছে, ঘুমন্ত আছে। এটা কিন্তু ভেঙে দেওয়া হয়নি। সে হিসেবে বিরোধী দলের নেতা সংসদীয় দলের নেতার সঙ্গে দেখা করতে পারেন।

ওবায়দুল কাদের আরও বলেন, ‘এখন তিনি (রওশন) তাঁর দলের অভ্যন্তরীণ বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন; জাতীয় পার্টির সঙ্গে আমাদের যে সম্পর্ক শুধু একটা কথাতেই টানাপোড়েন আসবে, এমনটি সিদ্ধান্তের এখনো সময় হয়নি।’

প্রধানমন্ত্রীকে বেগম রওশন এরশাদ তাঁর ক্ষোভের কথা জানাতে পারেন মন্তব্য করে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘রওশন এরশাদের সঙ্গে যারা নেই, তাদের বিরুদ্ধে তিনি বলতে পারেন। কিন্তু দল হিসেবে জাতীয় পার্টির সঙ্গে আমাদের কোনো জোট থাকবে না বা আমরা ইলেকশন করব না—এমন কোনো সিদ্ধান্ত আমাদের পার্টিতে বা আমাদের নেত্রীও আমাদের কিছু বলেননি। কাজেই এ ব্যাপারে আমরা এখন শেষ কথা বলতে পারছি না।’