আন্দোলন নিয়ে কী ভাবছে বিএনপি 

আন্দোলনের লক্ষ্যে আবার নিজেদের গুছিয়ে তোলার চেষ্টা করছে বিএনপি। একই সঙ্গে ‘গণতন্ত্র এবং ভোটাধিকার পুনরুদ্ধারের’ দাবিতে সোচ্চার বিরোধী দলগুলোকে সক্রিয় করতে চাইছেন দলটির নীতিনির্ধারকেরা। এ লক্ষ্যে তাঁরা যুগপৎ আন্দোলনের শরিকদের সঙ্গে আলোচনার পর নতুন করে রাজনৈতিক কর্মকৌশলের চিন্তা করছেন।

বিএনপির নেতারা বলছেন, ৭ জানুয়ারির জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর উপজেলা পরিষদের প্রথম ধাপের নির্বাচনে ভোটের হার সর্বনিম্ন হয়েছে। এটাকে তাঁরা বর্তমান সরকারের প্রতি সাধারণ মানুষের অনাস্থা এবং বৈরী মনোভাবের প্রতিফলন বলে মনে করছেন। তাঁদের মূল্যায়ন, ক্ষমতাসীনদের প্রতি মানুষের বিরক্তি প্রকাশ পাচ্ছে। কিন্তু বিরোধী দল সেটাকে কাজে লাগাতে পারছে না। দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা বিপর্যয়ের দ্বারপ্রান্তে। প্রতিটি নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যসহ পানি, বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম অস্বাভাবিকভাবে বাড়ছে। সামগ্রিক পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে সংসদ ও উপজেলা নির্বাচন বর্জনকারী বিরোধী দলগুলোকে খুব শিগগির ঐক্যবদ্ধ করে একটা যুগপৎ কর্মসূচি শুরুর চেষ্টা করছেন বিএনপির নেতৃত্ব। তবে সে পরিকল্পনা এখনো চূড়ান্ত হয়নি।

এ বিষয়গুলোতে জনগণকে সম্পৃক্ত করে কীভাবে অগ্রসর হতে পারি, সে ব্যাপারে আমরা একমত হয়েছি
নজরুল ইসলাম খান

সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল সূত্রগুলো জানিয়েছে, মূলত এ লক্ষ্যেই যুগপৎ আন্দোলনের শরিকদের সঙ্গে মতবিনিময় শুরু করেছে বিএনপি। তারই অংশ হিসেবে গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডির সভাপতি আ স ম আবদুর রবের উত্তরার বাসায় যান বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। রবের শারীরিক খোঁজখবর নেওয়ার পাশাপাশি তাঁরা সামনের রাজনৈতিক কর্মকৌশল নিয়েও কথা বলেন বলে জানা গেছে। এর আগে গতকাল বিকেলে গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট ও বাংলাদেশ লেবার পার্টির সঙ্গে পৃথক বৈঠক হয়। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খানের নেতৃত্বে বৈঠকে স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান ও ভাইস চেয়ারম্যান মো. শাহজাহান উপস্থিত ছিলেন।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দুই দিনের বৈঠকে দেশের বিদ্যমান রাজনৈতিক, সামাজিক এবং অর্থনৈতিক পরিস্থিতি, বিশেষ করে পানি, বিদ্যুৎ ও গ্যাসসহ দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে জনজীবনে বিপর্যয়, টাকার অবমূল্যায়ন, ব্যাংকসহ বিভিন্ন অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানে লুটপাট, রাষ্ট্রীয় ঋণের দ্রুত বৃদ্ধি, সীমান্তে মানুষ হত্যা—এসব বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। সর্বক্ষেত্রে বিরাজমান নেতিবাচক পরিস্থিতিকে কীভাবে কাজে লাগানো যায়, তার উপায় খুঁজে বের করার দিকে জোর দিয়েছেন নেতারা।

কোন কৌশলে, কীভাবে আবার সংগঠিত উপায়ে আন্দোলন জোরদার করা যায়, সে বিষয়ে সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব চাওয়া হয়েছে। অনেকে তাৎক্ষণিকভাবে মতামত দিয়েছেন।

অবশ্য গতকালের বৈঠকের পর নজরুল ইসলাম খান সাংবাদিকদের বলেন, ‘এ বিষয়গুলোতে জনগণকে সম্পৃক্ত করে কীভাবে অগ্রসর হতে পারি, সে ব্যাপারে আমরা একমত হয়েছি।’

আজ মঙ্গলবার বিকেলে নুরুল হকের নেতৃত্বাধীন গণ অধিকার পরিষদ ও গণতান্ত্রিক বাম ঐক্যের সঙ্গে পৃথক বৈঠক রয়েছে। এর পর গণতন্ত্র মঞ্চের সঙ্গে বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। গত রোববার অলি আহমদের লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি) এবং জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) মোস্তফা জামাল হায়দারের নেতৃত্বে ১২–দলীয় জোটের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক হয়।

গত দুদিনের বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন, এমন একাধিক নেতা বলেছেন, বৈঠকে মূলত তাঁদের কাছে সামনের রাজনৈতিক কর্মকৌশলের বিষয়ে মতামত চাওয়া হয়েছে। কোন কৌশলে, কীভাবে আবার সংগঠিত উপায়ে আন্দোলন জোরদার করা যায়, সে বিষয়ে সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব চাওয়া হয়েছে। অনেকে তাৎক্ষণিকভাবে মতামত দিয়েছেন।

আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, বিরোধী দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করার, কীভাবে এগোনো দরকার। এ ছাড়া দলের মধ্যেও অঙ্গসংগঠন ও পেশাজীবীদের সঙ্গে বসা শুরু করেছি। অর্থাৎ দল গুছিয়ে নেওয়া হচ্ছে। সামনে অর্থনৈতিক বিপর্যয় আসছে। সে বিষয়ে আমরা কাজ করছি, কথাবার্তা বলছি। এটাকে আমরা সামনে আনব।
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর

১২–দলীয় জোটের শরিক বাংলাদেশ লিবারেল পার্টির মহাসচিব শাহাদাত হোসেন সেলিম প্রথম আলোকে বলেন, ‘সব বিরোধী দলকে এক কর্মসূচিতে একসঙ্গে মাঠে নামানো নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এতে বিএনপির আগ্রহ আছে। আমরাও যুগপৎ আন্দোলনের বাইরে থাকা দলগুলোকে, বিশেষ করে জামায়াতে ইসলামীকে সম্পৃক্ত করার বিষয়ে বলেছি।’

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, যুগপৎ আন্দোলনের শরিক দল ও জোটের বাইরে আরও কিছু দলের সঙ্গেও কথা বলার চেষ্টা করছেন বিএনপির নীতিনির্ধারণী নেতারা। দু-তিন দিনের মধ্যে এসব বৈঠক শেষ হবে। এরপর নতুন করে আবার কর্মসূচি শুরু করতে চাইছে বিএনপি।

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গত রাতে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, বিরোধী দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করার, কীভাবে এগোনো দরকার। এ ছাড়া দলের মধ্যেও অঙ্গসংগঠন ও পেশাজীবীদের সঙ্গে বসা শুরু করেছি। অর্থাৎ দল গুছিয়ে নেওয়া হচ্ছে। সামনে অর্থনৈতিক বিপর্যয় আসছে। সে বিষয়ে আমরা কাজ করছি, কথাবার্তা বলছি। এটাকে আমরা সামনে আনব।’

এরই মধ্যে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম নয়াপল্টনে এক সমাবেশে মন্তব্য করেছেন, আন্দোলনে হয়তো ভাটা পড়েছে, কিন্তু আন্দোলন চলমান আছে। আর দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেছেন, বিএনপির নেতা-কর্মীরা ক্লান্ত, কিন্তু হতাশ নয়। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, ভাটা পড়া আন্দোলন চাঙা করতে ক্লান্ত নেতা-কর্মীদের আবার মাঠে ফেরানোই এখন বিএনপির জন্য চ্যালেঞ্জ।