এক দিনে ৫ অনুষ্ঠানে বিএনপির ৫ নেতা যা বললেন

‘দেশে গণতন্ত্রের লেশমাত্র নেই’ বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ নেতা আবদুল মঈন খান। তিনি বলেন, ‘আজকে আমরা এমন একটি দেশে বাস করছি, যেখানে গণতন্ত্রের লেশমাত্র নেই। এটা শুধু আমরা বলছি না, সারা বিশ্ব বলছে বাংলাদেশে আজকে একদলীয় শাসনব্যবস্থা পাকাপোক্ত হয়েছে, বাংলাদেশ আজকে উত্তর কোরিয়ার পথে হাঁটছে।’

আজ বুধবার দুপুরে রাজধানীর উত্তরায় সদ্য কারামুক্ত যুবদলের ঢাকা মহানগর উত্তরের সাবেক সভাপতি এস এম জাহাঙ্গীরের বাসায় সাংবাদিকদের এ কথা বলেন। এ সময় জাহাঙ্গীর ও তাঁর স্ত্রী পাশে ছিলেন। প্রসঙ্গত, যুবদল নেতা জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে ৩২৭টি মামলা রয়েছে। ৩৬৩ দিন কারাভোগের পর গত ৪ মার্চ তিসি জামিনে মুক্তি পান।

জাহাঙ্গীরের অপরাধটা কী, এমন প্রশ্ন তুলে মঈন খান বলেন, তাঁর অপরাধ তিনি (জাহাঙ্গীর) বিএনপি করেন। সরকার একদলীয় শাসন কায়েম করেছে, তিনি এর বিপরীতে গণতন্ত্রের কথা বলেন।

এস এম জাহাঙ্গীরের বাসা থেকে বের হয়ে মঈন খান সদ্য কারামুক্ত ঢাকা মহানগর উত্তর যুবদলের সদস্যসচিব সাজেদুল মিরাজের বাসায় যান। তিনি কারা নির্যাতিত নেতা ও পরিবারকে সান্ত্বনা দেন। মঈন খান ছাড়াও বিএনপির জ্যেষ্ঠ নেতা মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, নজরুল ইসলাম খান ও আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী আজ রাজধানীতে একাধিক কর্মসূচিতে অংশ নেন।

‘ইমানি দায়িত্ব নিয়ে সরকারকে পতনে ঐক্যবদ্ধ হই’: মির্জা আব্বাস

রাজধানীর ইস্কাটনে লেডিস ক্লাবে জাতীয়তাবাদী যুবদলের ইফতার অনুষ্ঠানে ‘ইমানি দায়িত্ব’ নিয়ে এই সরকারের পতনে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস। তিনি বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার কারাবন্দী জীবন ও অসুস্থতার কথা উল্লেখ করে বলেন, ‘আমরা যে গণতন্ত্রের জন্য আজ লড়াই করছি, এ দেশে সেই বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করছিলেন শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান। পরবর্তীতে গণতন্ত্র লালিত হয়েছে বেগম খালেদা জিয়ার হাতে। এই গণতন্ত্রের জন্য তিনি আজীবন সংগ্রাম করেছেন। এখন পর্যন্ত তিনি তিলে তিলে ভুগছেন।’

ইফতার মাহফিলে প্রধান অতিথি হিসেবে ভার্চ্যুয়ালি বক্তব্য দেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। বিশেষ অতিথি ছিলেন স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়।

যুবদলের সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিনের সভাপতিত্বে ইফতার অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন সদ্য কারামুক্ত যুবদলের সাধারণ সম্পাদক আবদুল মোনায়েম। আরও বক্তব্য দেন বিএনপি নেতা জয়নুল আবেদীন ফারুক, বরকতউল্লা, যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন, কৃষক দলের সভাপতি শহিদুল ইসলাম, ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম প্রমুখ।

এত মামলা, এত নির্যাতন পৃথিবীর কোথাও নেই: নজরুল ইসলাম খান

নয়াপল্টনে একটি হোটেলে জিয়া পরিষদের ইফতার অনুষ্ঠানে স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান সরকারের দমন-নির্যাতনের সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, বিএনপির নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে এক লাখ মামলা দেওয়া হয়েছে। এসব মামলায় ৫০ লাখ নেতা-কর্মীকে আসামি করা হয়েছে। পৃথিবীতে অন্য কোনো দেশে বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের নামে এত মামলা নেই, এত নির্যাতন- নিপীড়ন করা হয় না।

সরকার হামলা, মামলা, গুম-খুন করে ক্ষমতায় টিকে আছে বলে মন্তব্য করে নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নেতৃত্বে সরকারের সকল কূটকৌশল নস্যাৎ করে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করা হবে। ইনশা আল্লাহ জনগণকে সঙ্গে নিয়ে রাজপথ আন্দোলনের মাধ্যমে সরকারকে বিদায় করা হবে। জনগণের রায়ের ভিত্তিতে সরকার গঠন করা হবে।’

নির্বাচনে গিয়েও নির্বাচনকে প্রত্যাখ্যান করেছে, তাদের নিয়ে আগামী দিনে আন্দোলনে যাচ্ছি: আমীর খসরু

উত্তরার দিয়াবাড়িতে ওয়ার্ড বিএনপির এক আলোচনা সভায় স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, বিএনপির পক্ষ থেকে ডাক ছিল নির্বাচন বর্জনের। সেই ডাকে সাড়া দিয়ে ৯৫ ভাগ মানুষ ভোট না দিয়ে নির্বাচনকে প্রত্যাখ্যান করেছেন। সেই আন্দোলন এখনো চলছে। দেশের ৯৫ ভাগ মানুষ এই আন্দোলনের অংশ।

আমীর খসরু বলেন, ‘ভোটে ৫ ভাগের মধ্যে জাতীয় পার্টি বলেছে ভোট হয়নি। আওয়ামী লীগের মনোনীত যাঁরা প্রার্থী ছিলেন, যাঁরা হেরে গেছেন, তাঁরাও বলেছেন নির্বাচন হয়নি। ৯৫ ভাগ মানুষের সঙ্গে আরও যারা নির্বাচনে গিয়েও নির্বাচনকে প্রত্যাখ্যান করেছে, তাদের নিয়ে আগামী দিনে যে আন্দোলনে যাচ্ছি, সে আন্দোলন ৭ জানুয়ারির থেকে আরও বেশি শক্তিশালী হবে। এ আন্দোলনে বাংলাদেশের মানুষ সম্পৃক্ত হয়েছে, বাংলাদেশের সুশীল সমাজও সম্পৃক্ত হয়েছে।’

উত্তরা পশ্চিম থানার ১ ও ৫১ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির ইফতার ও দোয়া মাহফিল-পূর্ব আলোচনা সভায় ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক আনোয়ারুজ্জামান আনোয়ার, সদস্য আফাজ উদ্দীন, হাজী মো. ইউসুফ, এ বি এম এ রাজ্জাকসহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

হরিলুট দেখে ব্যাংক ডাকাতি শুরু হয়েছে: রিজভী

মোহাম্মদপুরে শ্রমিক দলের ইফতারে অংশ নিয়ে জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী মন্তব্য করেন, সরকারের ঘনিষ্ঠজনদের লুটপাট দেখে চোর-ডাকাতেরাও ব্যাংক ডাকাতি শুরু করেছে। তিনি বলেন, সরকারের ঘনিষ্ঠজনেরা যেহেতু বাংলাদেশের মানুষের টাকা হরিলুট করছে, বিদেশে পাচার করছে, তাদের লুটপাট দেখে প্রকৃত চোর-ডাকাত ও সন্ত্রাসীরাও ব্যাংক ডাকাতি শুরু করেছে।

রিজভী বলেন, গতকাল বান্দরবানে ব্যাংক ডাকাতি হয়েছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন কুকি চিন গোষ্ঠী এ ব্যাংক লুট করেছে। সিআইডি বলছে অন্য কথা। লুটপাট নিয়েও সরকার দ্বিচারিতা করছে।