ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীদের বহিষ্কার যেন নামেই 

ক্লাস-পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছেন বহিষ্কৃত শিক্ষার্থীরা। থাকছেন আবাসিক হলেও।

ফাইল ছবি

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের কর্মীদের বহিষ্কারের আদেশ এখন শুধু ঘোষণাতেই সীমাবদ্ধ। সংঘর্ষ, মারামারির ঘটনায় বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত হয় বটে, তবে দিনের পর দিন গেলেও চিঠি তৈরি হয় না। তৈরি হলেও পৌঁছায় না বিভাগে, হলে। তাই সরকারদলীয় ছাত্রসংগঠনটির কর্মীরা বহিষ্কার হয়েও ক্লাস-পরীক্ষায় অংশ নেন। থাকেন আবাসিক হলে।

গত বছরের আগস্ট থেকে চলতি বছরের জানুয়ারি পর্যন্ত মারামারি, কক্ষ ভাঙচুর, সংঘর্ষসহ পাঁচটি ঘটনায় ছাত্রলীগের বিশ্ববিদ্যালয় কমিটির ৪ পদধারী নেতা ও ১৩ কর্মীকে বহিষ্কার করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। ৯ জানুয়ারি বোর্ড অব রেসিডেন্স, হেলথ অ্যান্ড ডিসিপ্লিনের সভার মাধ্যমে তাঁদের বহিষ্কার করা হয়। ওই দিন থেকেই আদেশ কার্যকর হয়েছে। কিন্তু এখনো কোনো চিঠি তৈরি হয়নি। এর আগে গত বছরের ২৩ জুলাই বহিষ্কার হওয়া চারজন এখনো থাকছেন হলে।

আরও পড়ুন

জানা গেছে, ছাত্রলীগের বহিষ্কৃত নেতা-কর্মীরা ১৩টি বিভাগে পড়াশোনা করছেন। এর মধ্যে ১১ জানুয়ারি ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছাত্রলীগ কর্মী মাহমুদুল হাসান ও একই বিভাগের আরেক শিক্ষার্থী নাহিদুল ইসলামও  প্রথম বর্ষের মৌখিক পরীক্ষায় অংশ নেন। এ ছাড়া সংস্কৃত বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী অনিক দাশ ১৬ ও ২২ জানুয়ারির দুটি পরীক্ষায় অংশ নেন। এমনকি বহিষ্কার হওয়ার পর বেশ কয়েকজন ছাত্রলীগ কর্মী শ্রেণি কার্যক্রমে অংশ নিয়েছেন। বহিষ্কার আদেশ কার্যকর করতে ছাত্রলীগের কোনো বাধা নেই দাবি করেন শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি রেজাউল হক।

অথচ নিয়ম অনুযায়ী, বহিষ্কারের পর কোনো শিক্ষার্থী বিভাগের শ্রেণি কার্যক্রম ও পরীক্ষায় অংশ নিতে পারবেন না। থাকতে পারবেন না হলে। কিন্তু বহিষ্কৃত নেতা–কর্মীদের মধ্যে ১৪ কর্মী থাকছেন হলে। এর আগে ২০২১ সালে ১৮ অক্টোবর বহিষ্কার হওয়া চারজনের মধ্যে দুজন পরীক্ষা দিয়ে উত্তীর্ণও হন। তাঁরাও হলে থাকছেন।

জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর রবিউল হাসান ভূঁইয়া বলেন, ব্যস্ত থাকার কারণে তিনি চিঠি তৈরি করতে পারেননি। শিগগিরই চিঠি পাঠাবেন। আগের বহিষ্কারের ঘটনায় তিনি মন্তব্য করেননি।

বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের গাফিলতির কারণে এ ধরনের ঘটনা ঘটছে বলে মনে করেন শিক্ষক সমিতির সাবেক সভাপতি ও আইন বিভাগের অধ্যাপক জাকির হোসেন। তিনি বলেন, বারবার সংঘর্ষের ঘটনায় উপাচার্যের ওপর একধরনের চাপ সৃষ্টি হয়েছিল। সে চাপ শিথিল করে মানুষের দৃষ্টি অন্যদিকে নেওয়ার জন্য সাময়িকভাবে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। এসব সিদ্ধান্ত ছিল লোকদেখানো।