‘আমি কি দল ভেঙেছি’, বিএনএম ও সাকিব আল হাসানকে নিয়ে যা বললেন মেজর হাফিজ

মেজর অবসরপ্রাপ্ত হাফিজ উদ্দিন আহমদফাইল ছবি

নির্বাচনের আগে নতুন দল গঠনের প্রস্তাব পেয়ে তা ফিরিয়ে দেওয়ার কথা জানিয়ে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমদ বলেছেন, ক্রিকেটার সাকিব আল হাসানকে তাঁর কাছে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। তবে তিনি সাকিবকে নতুন দলে যোগদানের বিষয়ে উৎসাহ দেননি।

আজ মঙ্গলবার রাজধানীর বনানীতে নিজের বাসায় এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন এই বিএনপি নেতা। ‘কিংস পার্টি’ হিসেবে পরিচিতি পাওয়া বিএনএমে যোগদান ও সাকিব আল হাসানের সঙ্গে ছবি নিয়ে নিজের অবস্থান ব্যাখ্যা করতে এই সংবাদ সম্মেলন করা হয়।

আরও পড়ুন

হাফিজ উদ্দিন আহমদ প্রশ্ন করেন, ‘কি করেছি আমি? বিএনএমে যোগ দিয়েছি? দল ভেঙেছি?’ তিনি বলেন, এটা তো পরিষ্কার যে তাঁকে নতুন দলে যোগ দেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। তিনি সেটা গ্রহণ করেননি। এখন অপপ্রচার  চালিয়ে বিভ্রান্তি তৈরির চেষ্টা চলছে।

সম্প্রতি কয়েকটি সংবাদমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয় যে বিএনএম গঠন করতে পেছন থেকে কাজ করেছেন হাফিজ উদ্দিন আহমদ। সাকিব আল হাসান সেই দলে যোগ দিয়েছিলেন। হাফিজ উদ্দিন আহমদ ও সাকিবের একটি ছবিও প্রকাশিত হয়।

বিষয়টি নিয়ে হাফিজ উদ্দিন আহমদ বলেন, দেশে গণতন্ত্র নেই। রাজনীতি অত্যন্ত নোংরা। নির্বাচনের সময় নানা কলাকৌশল হয়। যে দলই ক্ষমতায় থাকে, তারা চেষ্টা করে প্রতিপক্ষকে ক্ষতিগ্রস্ত করার জন্য কিছু লোক ভাগিয়ে এনে নিজেদের দলে বা অন্য কোনো দলে সন্নিবেশ করে নির্বাচনী বৈতরণি পার হতে।

সামরিক বাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত কয়েকজন পরিচিত কর্মকর্তা নতুন দল গঠনের পরামর্শ দিয়েছিলেন উল্লেখ করে হাফিজ উদ্দিন আহমদ বলেন, ‘তাদের বলেছি, রাজনীতিতে কোনো শর্টকাট নেই।’

দেশে গত ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাস ছয়েক আগে থেকেই সরকারি দল করা গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা যোগাযোগ করা শুরু করে জানিয়ে হাফিজ উদ্দিন আহমদ বলেন, ‘তাঁরা দেখেছে বিএনপির নীতিনির্ধারণী বিষয়ে আমার মাঝেমধ্যে দ্বিমত থাকে। তাঁরা ধরে রেখেছিল যে বিএনপি ত্যাগ করার জন্য আমি উন্মুখ।’ তিনি বলেন, ‘আমি তাঁদের বলেছিলাম, আমার পক্ষে ৩২ বছর পর দল ত্যাগ করা সম্ভব নয়। আমি শারীরিকভাবে অসুস্থ। শিগগিরই রাজনীতি থেকে অবসর নেব।’

‘সরকারি দলের চাপ বাড়তে থাকার মধ্যে’ একজন মন্ত্রী ঘোষণা দেন যে হাফিজ উদ্দিন আহমদ বিএনএমে যোগ দেবেন। বিষয়টি উল্লেখ করে হাফিজ উদ্দিন আহমদ বলেন, ‘পরদিনই আমি সংবাদ সম্মেলন করে বলেছি, বিএনপিতেই থাকব।’
সামরিক বাহিনীর তিন চারজন অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তার উদ্যোগে বিএনএম গঠিত হয় উল্লেখ করে হাফিজ উদ্দিন আহমদ বলেন, অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তারাই সাকিব আল হাসানকে তাঁর কাছে নিয়ে যান। সাকিব রাজনীতিতে যোগদানের ইচ্ছা ব্যক্ত করেন।

হাফিজ উদ্দিন আহমদ বলেন, ‘আমি সাকিবকে বলেছি, রাজনীতি করা তোমার বিষয়। তুমি এখনো খেলাধুলা করছ, রাজনীতি করবে কি না বিবেচনা করে দেখ। আমার কাছ থেকে উৎসাহ না পেয়ে সে চলে যায়।’

বিএনএমের নিবন্ধন নিয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের হাফিজ উদ্দিন আহমদ বলেন, তাঁর কথায় কোনো দলকে নিবন্ধন দেওয়া হবে, এটা বাস্তবসম্মত নয়। আর তিনি সেটা বলেনওনি। তিনি বলেন, ‘আপনারা জানেন, কারা এসব করে।’

সাংবাদিকদের আরেক প্রশ্নের জবাবে হাফিজ উদ্দিন আহমদ বলেন, বিএনপিতে কাউন্সিল হয় না, তা নিয়ে বিভিন্ন সময় পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। কিন্তু খালেদা জিয়াকে নিয়ে কখনো কোনো অসৌজন্যমূলক কথা বলেননি।

জাতিসংঘের মধ্যস্থতায় একটি নির্বাচনের ব্যবস্থা করা গেলে এবং তাতে অংশ নিলে বিএনপির জন্য ভালো হতো বলে আবারও উল্লেখ করেন হাফিজ উদ্দিন আহমদ। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অধীন নির্বাচনে গেলে বিএনপির জন্য ফলাফল একই হতো।

সংবাদ সম্মেলনে মুক্তিযুদ্ধে নিজের ভূমিকা, রাজনীতি, মন্ত্রিত্ব, কারাদণ্ড ইত্যাদি নিয়ে কথা বলেন দুইবারের মন্ত্রী ও ছয়বারের সংসদ সদস্য হাফিজ উদ্দিন আহমদ। তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধকালে যশোর ক্যান্টনমেন্টে তিনিই বিদ্রোহ করেছেন। আট ঘণ্টা যুদ্ধ করে বেরিয়ে এসেছেন। ওই অঞ্চলে মুক্তিযুদ্ধ সংগঠিত করেছেন।

হাফিজ উদ্দিন আহমদ বলেন, ৮০ বছর বয়স্ক বীর মুক্তিযোদ্ধাকে কারাগারে পাঠানো হলো মার্চ মাসে। সেটা মিথ্যা মামলায়। এটা তাঁকে ব্যথিত করেছে। তিনি বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ আমি জনতা ব্যাংকের গাড়ি পুড়িয়েছি। মামলাটি পুলিশের। সাক্ষীও পুলিশ।’

৩২ বছর আগে জনতা ব্যাংকের চেয়ারম্যান থাকার সময় অনেক লুটেরাকে প্রতিরোধ করার কথাও বলেন এই বিএনপি নেতা।

প্রায় এক যুগ আগে রাজধানীর গুলশান থানায় করা গাড়ি ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের মামলায় গত ২৮ ডিসেম্বর হাফিজ উদ্দিন আহমদকে ২১ মাসের কারাদণ্ড দেন আদালত। রায় ঘোষণার সময় তিনি আদালতে হাজির ছিলেন না। আদালত তাঁর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন।

চিকিৎসা শেষে ভারত থেকে ফিরে ৫ মার্চ আদালতে যান হাফিজ উদ্দিন। তাঁকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন আদালত। ছয় দিন পর তিনি জামিনে মুক্তি পান।

ভোটের আগে গত ডিসেম্বরে হাফিজ উদ্দিন আহমদ হাঁটুর চিকিৎসার জন্য ভারত যাওয়ার চেষ্টা করেন। বিমানবন্দর থেকে তাঁকে ফিরিয়ে দেওয়া হয়। পরে আদালতে আবেদন করে ১৪ ডিসেম্বরে ভারত যান তিনি।

সংবাদ সম্মেলনে হাফিজ উদ্দিন আহমদ বলেন, ৩২ বছর দল করার পর দল ছাড়া এত সহজ নাকি। কেন ছাড়ব।