রওশন ও সাদ এরশাদ এখনো দলীয় মনোনয়ন ফরম নেননি

রওশন এরশাদ (বাঁয়ে) ও সাদ এরশাদ
ফাইল ছবি

জাতীয় পার্টির মনোনয়ন ফরম আজ বুধবারও নেননি দলের প্রধান পৃষ্ঠপোষক রওশন এরশাদ ও তাঁর ছেলে সাদ এরশাদ। আগামীকাল বৃহস্পতিবার তাঁরা মনোনয়ন ফরম নেবেন কি না, তা–ও স্পষ্ট নয়।

জাতীয় পার্টির (জাপা) সূত্রে আজ সন্ধ্যায় এ খবর জানা গেছে। সূত্রটি বলছে, দলের চেয়ারম্যান জি এম কাদেরের সঙ্গে রওশনের বিরোধ মেটেনি।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ সময় আগামীকাল বৃহস্পতিবার (৩০ নভেম্বর)।

দলীয় প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করতে হলে আগে দলের মনোনয়ন ফরম নিতে হয়। এরপর রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছ থেকে মনোনয়নপত্র নিয়ে জমা দিতে হয়।

জাপা মনোনয়ন ফরম বিক্রি শেষ করে ২৮৯টি আসনে দলীয় মনোনয়ন ঘোষণা করে রোববার। তবে রওশন ও তাঁর ছেলের জন্য যেকোনো সময় মনোনয়ন ফরম কেনার সুযোগ রাখা হয়েছে।

রওশন এরশাদের ময়মনসিংহ-৪ সদর আসনসহ ১২টি আসনে প্রার্থী ঘোষণা করেনি জাপা।

জাপা সূত্র বলছে, রওশন তাঁর ছেলেসহ কয়েকজন অনুসারীর জন্য সুনির্দিষ্ট কিছু আসনে মনোনয়ন চান। তাতে সম্মত নন জি এম কাদের। এ নিয়ে দুই পক্ষই অনড় অবস্থান নিয়েছে।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, আপাতদৃষ্টে দুই নেতার এই বিরোধ মনোনয়নকেন্দ্রিক মনে হলেও কার্যত এটি জাপায় দুই পক্ষের ‘নিয়ন্ত্রণ’ ও ‘কর্তৃত্ব’ নিরঙ্কুশ করার শেষ চেষ্টা। কারণ, এত দিন দুই নেতার বিরোধ ছিল নির্বাচনে যাওয়া না যাওয়ার প্রশ্নে। রওশন শুরু থেকেই নির্বাচনের পক্ষে আর জি এম কাদের অনেকটা বিপক্ষেই ছিলেন। এখন দুজনই নির্বাচনের পক্ষে।

জাপার দায়িত্বশীল সূত্রগুলো জানিয়েছে, এবারের নির্বাচনে অংশগ্রহণের ব্যাপারে জি এম কাদেরের অমত ছিল। এ নিয়ে শেষ দিকে এসে সরকারের দিক থেকে নির্বাচনে অংশগ্রহণের চাপ আসে। শেষ পর্যন্ত মোটা দাগে দুটি শর্তে জি এম কাদের নির্বাচনে যেতে সম্মত হন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। একটি হলো নির্বাচনে জয়ী হলে দলীয় প্রধান হিসেবে তিনি সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা হবেন। এ ছাড়া তাঁর সিদ্ধান্তে দলীয় মনোনয়ন চূড়ান্ত হবে। এতে কারও হস্তক্ষেপ মেনে নেওয়া হবে না।

এ বিষয়ে জাপার মহাসচিব মো. মুজিবুল হক মঙ্গলবার রাতে প্রথম আলোকে বলেন, ‘গতবার আমরাই তো ম্যাডামকে (রওশন এরশাদ) বিরোধীদলীয় নেতা, জি এম কাদেরকে উপনেতা বানিয়েছিলাম। এখন ওনার এই দায়িত্ব পালন করার মতো শারীরিক অবস্থা নেই। আমরা মনে করি, আবার নির্বাচিত হয়ে এলে স্বাভাবিকভাবে চেয়ারম্যানেরই বিরোধীদলীয় নেতা হওয়ার কথা।’

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, মূলত এই শক্ত অবস্থানের লক্ষ্য দুটি। এর মধ্য দিয়ে দলে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার পাশাপাশি বয়োজ্যেষ্ঠ নেতা রওশন এরশাদের মাধ্যমে যাতে কেউ কোনো ধরনের সুবিধা নিতে না পারেন, সেটি বন্ধ করা। এসব বিষয়ে গত রোববার রাতে রওশন এরশাদের গুলশানের বাসায় জি এম কাদেরসহ একটি বৈঠক হয়। সেখানে সরকারের একজন পদস্থ কর্মকর্তাও মধ্যস্থতাকারী হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বলে জানা গেছে। যদিও গতকাল পর্যন্ত দুই নেতার বিরোধের সুরাহা হয়নি।

ওই সূত্র জানায়, রওশন তাঁর ছেলে রাহগির আল মাহি এরশাদ ওরফে সাদ ছাড়া আরও পাঁচজন অনুসারীকে পছন্দসই আসনে মনোনয়ন দিতে চান। তাঁরা হলেন জাপার মহাসচিব মসিউর রহমান (রাঙ্গা), দলের ময়মনসিংহ জেলার সাবেক সভাপতি কে আর ইসলাম, সাবেক প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী মামুনূর রশিদ ও হাবিবুল্লাহ বেলালী এবং যুগ্ম মহাসচিব ইকবাল হোসেন। কিন্তু সাদ এরশাদ ও কে আর ইসলাম ছাড়া অন্যদের মনোনয়ন দেওয়ার ব্যাপারে সম্মত নন জি এম কাদের।