দ্বাদশের প্রার্থীদের ত্রয়োদশ নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণার দাবি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সভাপতি রিফাত রশীদ ও মুখ্য সমন্বয়ক হাসিব আল ইমরান। আজ বুধবার নির্বাচন ভবনেছবি: প্রথম আলো

আওয়ামী লীগের শাসনকালে অনুষ্ঠিত একতরফা দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যাঁরা প্রার্থী হয়েছিলেন, তাঁদের আগামী ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণার দাবি জানিয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।

জুলাই অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া প্ল্যাটফর্মটির নেতারা আজ বুধবার বিকেলে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দীনের সঙ্গে দেখা করে এ দাবি জানান।

সিইসির সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সভাপতি রিফাত রশীদ সাংবাদিকদের বলেন, ২০২৪ সালের নির্বাচন ছিল ‘আমি–ডামির’ নির্বাচন। ওই নির্বাচনে যাঁরা নির্বাচিত হয়েছিলেন এবং প্রার্থী হয়ে ওই নির্বাচনকে বৈধতা দিয়েছেন, তাঁদের অবশ্যই আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার ক্ষেত্রে বাধাগ্রস্ত করতে হবে। তাদের সেই সুযোগ দেওয়া যাবে না, তাদের অযোগ্য ঘোষণা করতে হবে। কারণ, এই নির্বাচনের মাধ্যমে গণতন্ত্রকে চিরতরে হত্যা করা হয়েছে।

আওয়ামী লীগ ২০০৯ সালে ক্ষমতায় যাওয়ার পর তত্ত্বাবধায়ক সরকারপদ্ধতি বিলুপ্ত করে যে তিনটি নির্বাচন হয়েছিল, তার সব কটি ছিল বিতর্কিত। এর মধ্যে ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিত দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলো বর্জন করে। ওই নির্বাচনে মোট প্রার্থী ছিল ১ হাজার ৯৬৩। জাতীয় পার্টি নির্বাচনে অংশ নিলেও অন্য দলগুলোর বর্জনের কারণে নির্বাচনটি আওয়ামী লীগ এবং স্বতন্ত্র প্রার্থীদের লড়াইয়ে পরিণত হয়েছিল।

ওই নির্বাচনের ছয় মাস পর সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন শুরু হয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে। ব্যাপক দমন–পীড়নে কয়েক শ মানুষের প্রাণহানিতে সেই আন্দোলন গণ–অভ্যুত্থানে রূপ নেয়—৫ আগস্ট পতন ঘটে শেখ হাসিনার সরকারের।

এরপর অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নিয়ে আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করে, নির্বাচন কমিশন দলটির নিবন্ধনও স্থগিত করে। ফলে আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগের দলীয় পরিচয়ে অংশ নেওয়ার সুযোগ নেই। আওয়ামী লীগের জোট শরিক দলগুলোর তৎপরতা এখন না থাকলেও তাদের নির্বাচনে অংশ নিতে বাধা নেই। আদালত ঘোষিত দণ্ডিত কিংবা পলাতক না হলে ব্যক্তি হিসেবে আওয়ামী লীগের কারও আসন্ন নির্বাচনে অংশ নিতে আইনি কোনো বাধা নেই।

এদিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা রিফাত রশীদ বলেন, তাঁরা সিইসিকে এ বিষয়ে একটি লিগ্যাল নোটিশ দিয়েছেন। প্রয়োজনে তাঁরা উচ্চ আদালতে যাবেন। পাশাপাশি রাজপথে তাঁদের কার্যক্রম চলমান থাকবে।

সংগঠনের মুখ্য সমন্বয়ক হাসিব আল ইমরান বলেন, ২০২৪ সালের নির্বাচনের মধ্য দিয়ে ফ্যাসিবাদ চূড়ান্ত রূপ নিয়েছিল। ছাত্র–জনতার ওপর গণহত্যা চালানোর নির্দেশ তৎকালীন সংসদ সদস্যরা দিয়েছিলেন। ওই নির্বাচনে যাঁরা অংশ নিয়েছিলেন, তাঁরা যাতে আগামী নির্বাচনে প্রার্থী হতে না পারেন, সে জন্য তাঁরা লিগ্যাল নোটিশ দিয়েছেন।

ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে আগামী ১২ ফেব্রুয়ারি। একই দিন জুলাই সনদ বাস্তবায়নে সংস্কার প্রশ্নে গণভোটও হবে।