তারেক রহমান দেশে ফিরছেন ২৫ ডিসেম্বর

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানছবি: তারেক রহমানের ফেসবুক পেজ

২৫ ডিসেম্বর দেশে ফিরছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। আজ শুক্রবার রাত সাড়ে নয়টার দিকে বিএনপির চেয়ারপারসনের গুলশানের কার্যালয়ে এক ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানিয়েছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

মির্জা ফখরুল বলেন, দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ২৫ ডিসেম্বর ঢাকার মাটিতে এসে পৌঁছাবেন। দলের পক্ষ থেকে তাঁকে স্বাগত জানানো হচ্ছে।

তারেক রহমান ২০০৭ সালে এক-এগারোর পটপরিবর্তনের পর গ্রেপ্তার হন। ২০০৮ সালে কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে চিকিৎসার জন্য সপরিবার যুক্তরাজ্যে যান। এর পর থেকে তিনি সে দেশেই আছেন।

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতাচ্যুত হয়। এরপর বিভিন্ন মামলায় তারেক রহমানের সাজার রায় বাতিল এবং কোনো কোনো মামলায় আইনি প্রক্রিয়ায় অব্যাহতি পান। এর পর থেকে তাঁর দেশে ফেরার আলোচনা শুরু হয়। তারেক রহমান শিগগিরই ফিরবেন—এমন কথা বিএনপি নেতারা কয়েক মাস ধরেই বলে আসছেন। তবে কেউ সুনির্দিষ্ট দিন–তারিখ বলেননি।

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার জীবন সংকটাপন্ন হয়ে উঠলে ধারণা করা হচ্ছিল তারেক রহমান দ্রুতই দেশে ফিরছেন। এই প্রেক্ষাপটে লন্ডন থেকে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে একটি পোস্ট দেন তারেক রহমান। সেখানে তিনি লিখেছিলেন, ‘এমন সংকটকালে মায়ের স্নেহ-স্পর্শ পাওয়ার তীব্র আকাঙ্ক্ষা যেকোনো সন্তানের মতো আমারও রয়েছে। কিন্তু অন্য আর সবার মতো এটা বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে আমার একক সিদ্ধান্ত গ্রহণের সুযোগ অবারিত ও একক নিয়ন্ত্রণাধীন নয়।’

ওই পোস্টে তিনি আরও লিখেছিলেন, ‘স্পর্শকাতর বিষয়টির বিস্তারিত বর্ণনার অবকাশও সীমিত। রাজনৈতিক বাস্তবতার এ পরিস্থিতি প্রত্যাশিত পর্যায়ে উপনীত হওয়ামাত্রই স্বদেশ প্রত্যাবর্তনে আমার সুদীর্ঘ উদ্বিগ্ন প্রতীক্ষার অবসান ঘটবে বলেই আমাদের পরিবার আশাবাদী।’

এরপর সরকারের বিভিন্ন পর্যায় থেকে বারবার বলা হয়েছে, তারেক রহমানের দেশে ফিরতে কোনো বাধা নেই।

রাতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠক শেষে এই ব্রিফ করেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, গণতন্ত্রের উত্তরণের পথে যেসব বাধা সৃষ্টি হয়েছিল, তারেক রহমান দেশে এসে পৌঁছালে সেসব বাধা দূর হয়ে যাবে। তারেক রহমানের দেশে আগমন যাতে সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয়, সে জন্য দলের নেতা-কর্মীদের কাছে সহযোগিতা চান তিনি।

ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক ওসমান হাদির ওপর গুলিবর্ষণের ঘটনা নিয়ে দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠকে আলোচনা হয়েছে জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, বিএনপি এ ঘটনার নিন্দা জানাচ্ছে। যারা গুলি চালিয়েছে, তাদের অতি দ্রুত চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনার দাবি জানাচ্ছে। তিনি বলেন, এ ঘটনা থেকে প্রমাণিত হয়, যেসব অপশক্তি এই দেশে নির্বাচন বানচাল করার জন্য কাজ করছে, নির্বাচন যাতে না হয়, সেই চেষ্টা করছে, এটি তাদেরই একটি চক্রান্ত হতে পারে।

মির্জা ফখরুল বলেন, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস ঢাকা–৮ আসনের প্রার্থী। একজন রাজনৈতিক নেতা হিসেবে তিনি সহানুভূতি দেখানোর জন্য হাসপাতালে ছুটে গিয়েছিলেন। কিন্তু কিছু ব্যক্তি, সমর্থক এবং আরও কিছু চক্রান্তকারী সমবেত হয়ে উত্তেজনামূলক স্লোগান দেয় এবং মব সৃষ্টি করার চেষ্টা চালিয়েছে। বিএনপি এটার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছে এবং হুঁশিয়ার করে দিচ্ছে, এ ধরনের আচরণ করতে গেলে বিএনপি বসে থাকবে না। বিএনপি তার জবাব সঙ্গে সঙ্গে দেবে।

বিএনপি কোনো গোলযোগ ও সন্ত্রাস চায় না উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, তবে বিএনপির ওপর কোনো আঘাত এলে সেটি বিএনপি সহজভাবে নেবে না। এর জবাব কীভাবে দিতে হয়, সেটি বিএনপি জানে।

মব সৃষ্টি না করে, নির্বাচনের পরিবেশ নষ্ট না করে সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য কাজ করতে সবার প্রতি আহ্বান জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, নইলে গণতন্ত্রে উত্তরণের পথ ব্যাহত হবে। সব মহল যাতে এ বিষয়কে গুরুত্ব দেয়।

ব্রিফিংয়ে আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সালাহউদ্দিন আহমদ, সেলিমা রহমান, ইকবাল হাসান মাহমুদ ও মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন।