কারাগারে ১৩ নেতার মৃত্যু, বিএনপির অভিযোগ, ‘পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড’

বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীফাইল ছবি

কারা হেফাজতে আরও এক নেতার মৃত্যুর পর বিএনপির নেতা রুহুল কবির রিজভী অভিযোগ করেছেন, ‘প্রতিটি মৃত্যু পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড।’ তিনি বলেন, ‘গত তিন মাসে কারাগারে নির্যাতনে বিএনপির ১৩ নেতার মৃত্যু হয়েছে। কারাগারে কারাবিধির সব সুযোগ-সুবিধা কেড়ে নিয়ে বন্দী নেতা-কর্মীদের ওপর বীভৎস নিপীড়ন চালানো হচ্ছে। তাঁদের খাওয়ার কষ্ট দেওয়া হচ্ছে, চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে না।’

গতকাল বৃহস্পতিবার রংপুর কারাগারে গঙ্গাচড়া উপজেলার লক্ষ্মীটারী ইউনিয়ন বিএনপির সহসাংগঠনিক সম্পাদক মনোয়ারুল ইসলামের মৃত্যু হয়। এর আগে দেশের বিভিন্ন কারাগারে দলটির পর পর কয়েকজন নেতা-কর্মীর মৃত্যুর ঘটনায় আজ শুক্রবার সকালে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে রুহুল কবির রিজভী এ অভিযোগ করেন।

রিজভী বলেন, ১৩ জানুয়ারি সুস্থসবল রংপুরের গঙ্গাচড়া এলাকায় মনোয়ারুলকে পুলিশ বাসা থেকে তুলে থানায় নিয়ে যায়। এরপর তাঁকে সে দিন আদালতে না পাঠিয়ে পরের দিন ও রাত পর্যন্ত থানায় আটক রেখে অমানুষিক নির্যাতন করা হয়। তাঁর পুরো পায়ে, পিঠে ও মাথায় আঘাতের গভীর চিহ্ন দেখা গেছে। মনোয়ারুলের বাবা ও ভাই বলেছেন, পুলিশ নির্যাতন চালিয়ে মনোয়ারুলকে বিনা চিকিৎসায় হত্যা করেছে।

মনোয়ারুলসহ কারা হেফাজতে মৃত্যুর প্রতিটি ঘটনার আন্তর্জাতিক তদন্তের দাবি জানান রিজভী।

বিএনপির এই নেতা বলেন, একজনের নির্দেশে বিএনপির নেতা-কর্মীদের ওপর নিপীড়নের সব মাত্রা প্রয়োগ করা হচ্ছে। সরকারের সঙ্গে আঁতাত করে নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় একই মামলায়, একই ধারায় জামিন মিলেছে শাহজাহান ওমরের, অথচ বিএনপির মহাসচিবসহ হাজার হাজার নেতা-কর্মীর জামিন মিলছে না। এটাতে প্রমাণিত হয়, শেখ হাসিনার নির্দেশেই পুলিশ ও আদালত একযোগে কাজ করে যাচ্ছে।

প্রসঙ্গত, শাহজাহান ওমর ২৮ অক্টোবরের সহিংসতার ঘটনায় বিএনপির নেতা হিসেবে কারাবন্দী হন। কিছুদিন পর মুক্তি পেয়ে তিনি আওয়ামী লীগের মনোনয়নে নির্বাচন করে সংসদ সদস্য হন।

বিএনপির নেতা রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘অবৈধ ক্ষমতা দীর্ঘায়িত করতে গত ৭ জানুয়ারির ‘ডামি নির্বাচন’ কণ্টকমুক্ত করার জন্য গুম-খুন-গায়েবি মামলা, গ্রেপ্তার, নির্যাতন, অগ্নিসংযোগ, বাড়িঘর ভাঙচুরের যে ভয়াবহতা চালিয়েছিল, সেটি এখনো অব্যাহত রেখেছে এ সরকার। নৈরাজ্য আর বিশৃঙ্খলার বৃত্তে মানুষকে বন্দী করা হয়েছে।’

এ প্রসঙ্গে রিজভী গত ১৭ ডিসেম্বর একটি বেসরকারি টেলিভিশনকে দেওয়া আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সাবেক কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাকের সাক্ষাৎকারের কথা উল্লেখ করেন। রাজ্জাক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, ‘নির্বাচনে বাধাবিঘ্ন দূর করতে বিএনপির নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করে জেলে রাখা হয়। আমরা চিন্তাভাবনা করেই এই কাজ করেছি। তাঁদের জেলে না ভরলে দেশ অচল হয়ে যেত।’

রিজভী বলেন, অতঃপর জনগণকে প্রতারিত করে, রাষ্ট্রশক্তির জোরে ৭ জানুয়ারি ভোটারহীন পাতানো নির্বাচনে ষোলোকলা পূর্ণ করে। এরপরও ক্ষমতা হারানোর ভয়ে বিরোধী দলমতের ওপর জুলুম, অমানবিক নিষ্ঠুরতা থেমে নেই। সারা দেশে গ্রেপ্তার অব্যাহত রয়েছে। কারাগারগুলো ধারণক্ষমতার চেয়ে কয়েক গুণ বেশি বিএনপি নেতা-কর্মীতে ঠাসা।