নিজেদের ধর্ষণ-চাঁদাবাজি ঢাকতে ছাত্রদল ‘দায় চাপানোর রাজনীতি’ করছে: শিবির নেতা ফরহাদ

সংবাদ সম্মেলনে ডাকসু নির্বাচনে ইসলামী ছাত্রশিবির সমর্থিত প্যানেলের প্রার্থীরা। আজ মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যানটিনের সামনেছবি: তানভীর আহাম্মেদ

দেশব্যাপী ধর্ষণ, চাঁদাবাজি ও অন্তঃকোন্দলের ঘটনাগুলো ঢাকতে ছাত্রদল ‘দায় চাপানোর রাজনীতি’ করছে বলে অভিযোগ করেছেন ডাকসু নির্বাচনে ইসলামী ছাত্রশিবির–সমর্থিত ‘ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোট’ প্যানেলের জিএস প্রার্থী এস এম ফরহাদ। ছাত্রশিবিরের অবস্থান জানানোর পরও রিটকারী নারী শিক্ষার্থীকে নিয়ে কটূক্তিকারীকে ‘শিবির বানিয়ে’ প্রচার চালানো ‘রাজনৈতিক দেউলিয়াত্বের’ বহিঃপ্রকাশ বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি।

আজ মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যানটিনের সামনে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন ইসলামী ছাত্রশিবিরের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি ফরহাদ। এ সময় ডাকসুতে তাঁদের প্যানেলের ভিপি প্রার্থী আবু সাদিক, এজিএস প্রার্থী মহিউদ্দিন খানসহ অন্য প্রার্থীরা উপস্থিত ছিলেন।

এস এম ফরহাদ বলেন, ‘ছাত্রলীগের “একটা একটা শিবির ধর, ধইরা ধইরা জবাই কর” স্লোগান ছাত্রদলের মুখে উঠেছে। আওয়ামী লীগ যেসব নৃশংস প্রক্রিয়া ফলো (অনুসরণ) করত, সেটি ছাত্রদল আবার ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছে। ছাত্রলীগের যা যা বৈশিষ্ট্য ছিল…ধর্ষণের কেস, অন্তর্দ্বন্দ্বের কেস, কোন্দলের কেস, চাঁদাবাজির কেস—সবগুলো যখন এখন ঢাকতে পারছে না, এক বছরের মধ্যে শিবিরকে নিয়ে কোনো এজেন্ডা পাচ্ছে না, এখন শুরু হয়েছে দায় চাপানোর রাজনীতি।’

গত এক বছরে সারা দেশে ছাত্রদলের বিরুদ্ধে ৩০টি ধর্ষণের অভিযোগ রয়েছে উল্লেখ করে ফরহাদ বলেন, ‘গত বছরের ৫ আগস্টের পর থেকে এখন পর্যন্ত ছাত্রদলের বিরুদ্ধে সারা দেশে অন্তত ৩০টি ধর্ষণের ঘটনায় বিচার চলছে। যারা ধর্ষণের কেসের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ স্টেকহোল্ডার (অংশীদার), শিক্ষার্থীরা যাদেরকে ভয় পায়, এই সব ঘটনা যখন সামনে আসে, এগুলো কেমনে চাপা দেবে, আর কোনো ইস্যু না পেয়ে সে ইস্যু সামনে নিয়ে আসার মতো তারা রাজনীতি করছে এবং নিশ্চয়ই শিক্ষার্থীরা বোঝে যে আপনারা কীভাবে কী করছেন।’

এর আগে ডাকসু নির্বাচনে এস এম ফরহাদের প্রার্থিতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিটকারী এক ছাত্রীকে ‘গণধর্ষণের’ হুমকিদাতা শিক্ষার্থী আলী হুসেনকে ‘শিবির নেতা’ আখ্যা দিয়ে মঙ্গলবার সারা দেশে বিক্ষোভ মিছিল ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছে ছাত্রদল। আলী হুসেনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থার দাবি জানিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস বিক্ষোভ মিছিলের পর রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ের সামনে অবস্থান কর্মসূচিও পালন করেছেন ছাত্রদলের নেতা–কর্মীরা।

ঘটনার পর আলী হুসেনের ‘শিবির–সংশ্লিষ্টতার’ অভিযোগ অস্বীকার এবং প্রক্টর অফিসে অভিযোগ দেওয়ার কথা উল্লেখ করে ইসলামী ছাত্রশিবিরের নেতা এস এম ফরহাদ বলেন, ‘যাকে শিবিরের নেতা বানিয়ে প্রচার চালানো হচ্ছে, সেটি যে মিথ্যা প্রোপাগান্ডা (অপপ্রচার) সেটি জানানোর পরে আমরা নিজেরাই প্রক্টর অফিসে গিয়ে লিখিত অভিযোগ দায়ের করে এসেছি, যাতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তাঁর বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়। এটি করার পরে আমরা এটিও বলেছি, যদি তিনি ব্যক্তি এস এম ফরহাদ বা আমার ব্যাপারে রিট করার কারণে রিঅ্যাকশন দিতেন, তাহলে তার আগের দিনেই দিতেন। আমার দিক থেকে আমি তাঁকে (রিটকারীকে) ওয়েলকাম করেছি, শুভেচ্ছা জানিয়েছি এবং বলেছি যে কোর্টে যে রায় হবে, সেটি মেনে নেব। হাইকোর্ট ভোট স্থগিতের পর ওই শিক্ষার্থী ডাকসু নিয়ে যে “কনসার্ন” জানিয়েছে, সেটি তাঁর নিজের।’

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার জন্য স্থানীয় বিএনপি নেতৃত্ব এবং রাকসু ভবনে হামলায় ছাত্রদল জড়িত বলে অভিযোগ করেন এস এম ফরহাদ। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘রাকসুতে সুষ্ঠু পদ্ধতিতে আন্দোলন না করে, দাবি না জানিয়ে সরাসরি সেখানে ভাঙচুর হচ্ছে এবং তালা ঝুলিয়ে দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। চবি, রাবি এবং বাকৃবি—সবগুলো ঘটনা, সর্বশেষ ডাকসু বানচালের ঘটনা, সবকিছুতে ব্যর্থ হয়ে এক পর্যায়ে এগুলো কীভাবে ঢাকবে, এগুলো সামনে আসবে, সে আশঙ্কায় শিক্ষার্থীদের ভয় পেয়ে তারা এসব ঘটনা ঘটাচ্ছে।’

এ সময় ইসলামী ছাত্রশিবিরের প্যানেল থেকে ভিপি প্রার্থী আবু সাদিক বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জহুরুল হক হলের যে শিক্ষার্থী একজন নারীকে যে শব্দচয়ন করেছে, সবার আগে আমরা প্রতিবাদ জানিয়েছি। আমরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সাথে কথা বলেছি এবং আমরা লিখিত অভিযোগ দিয়েছি প্রক্টরের কাছে, যেন দ্রুত সময়ের মধ্যে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়। কিন্তু আমরা দেখতে পেয়েছি, তাকে দায়মুক্তি দেওয়ার জন্য সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে গেছে। শিবির নেতা বলে তাকে ফ্রেমিং করা হচ্ছে।’