রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে সরকার ‘শোচনীয়ভাবে ব্যর্থ’ হয়েছে

রাজধানীর একটি হোটেলে ‘রোহিঙ্গা সংকট ও প্রত্যাবাসন কৌশল’ শীর্ষক সেমিনারে বক্তব্য দেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ঢাকা, ০৩ সেপ্টেম্বর।
ছবি: প্রথম আলো

রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে সরকার শোচনীয়ভাবে ব্যর্থ হয়েছে বলে অভিযোগ করেছে বিএনপি। দলটির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, সরকার রোহিঙ্গা ইস্যুতে আন্তর্জাতিক মহলকে বাংলাদেশের পক্ষে আনতে পারেনি। বরং জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক মহলকে পাশ কাটিয়ে বাংলাদেশ রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের বিষয়ে মিয়ানমারের সঙ্গে চুক্তি করেছে। অবাস্তব এই চুক্তির ফলে মিয়ানমারের ওপর তৈরি হওয়া আন্তর্জাতিক চাপ কমে যাবে।

আজ রোববার বিকেলে রাজধানীর একটি হোটেলে ‘রোহিঙ্গা সংকট ও প্রত্যাবাসন কৌশল’ শীর্ষক সেমিনারের আয়োজন করে বিএনপি। সেমিনারে দলটির পক্ষ থেকে এসব বক্তব্য তুলে ধরা হয়। মিয়ানমার থেকে লাখ লাখ রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছিল ছয় বছর আগে।

রোহিঙ্গা সমস্যা নিয়ে বিএনপির সেমিনারে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘এই সরকার রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে ব্যর্থ হয়েছে। মিয়ানমারের ওপর চাপ বাড়ানোর জন্য সরকার আন্তর্জাতিক জনমত তৈরি করতে পারেনি। বর্তমানে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশের জাতীয় নিরাপত্তার জন্য সমস্যা তৈরি করছে। রোহিঙ্গা শিবিরে উগ্রবাদ দানা বাঁধছে, বন্দুকযুদ্ধ হচ্ছে। সরকার রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের জন্য দ্বিপক্ষীয় চুক্তি করেছে, যা বাস্তবায়ন প্রায় অসম্ভব।’

সেমিনারে ‘রোহিঙ্গা সংকট ও প্রত্যাবাসন কৌশল’ শীর্ষক মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। তাতে বলা হয়, বর্তমানে দেশে ১২ লাখ রোহিঙ্গা আশ্রয় নিয়েছে। নতুন শিশু জন্ম নেওয়ায় প্রতিবছর এই সংখ্যা ৩০ হাজার করে বাড়ছে। রোহিঙ্গারা দেশের অর্থনীতির জন্য সমস্যা তৈরি করছে। জাতীয় নিরাপত্তার জন্যও বিষয়টি হুমকির। রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারের নাগরিকত্ব দিয়ে নিরাপদ, স্বেচ্ছায়, মর্যাদাপূর্ণ এবং টেকসই প্রত্যাবাসন নিশ্চিত করার মাধ্যমে দ্রুত এই সংকটের সমাধান করতে হবে। এই সংকট সমাধানে প্রতিবেশীসহ আন্তর্জাতিক বন্ধুরাষ্ট্রগুলোকে সঙ্গে নিয়ে মিয়ানমারের ওপর কার্যকর চাপ সৃষ্টি করতে হবে।

প্রবন্ধে বলা হয়, প্রত্যাবাসনের আগের দুটি প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে। এখন নতুন চুক্তির আওতায় বাংলাদেশ পাইলট প্রকল্পের আওতায় রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে প্রত্যাবাসনের উদ্যোগ নিয়েছে। এই নতুন প্রত্যাবাসন প্রচেষ্টাকে ‘ফাঁদ’ বলে মনে করছে বিএনপি। জাতিসংঘের মানবাধিকার পরিষদের মতে, রোহিঙ্গা শরণার্থীদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে বাংলাদেশ সরকার ‘বিভ্রান্তিমূলক’ এবং ‘বলপ্রয়োগের’ মতো পদক্ষেপের মাধ্যমে তাদের মিয়ানমারে ফিরে যেতে বাধ্য করছে।

বাংলাদেশ সরকার রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধানে দ্বিপক্ষীয় ও বৈশ্বিকভাবে চরমভাবে ব্যর্থ হয়েছে বলে মনে করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান। তিনি বলেন, সরকার ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের পুনর্বাসন করে মিয়ানমারসহ পুরো আন্তর্জাতিক বিশ্বকে ভুল বার্তা দিয়েছে। সরকারের ভুল ব্যবস্থাপনা রোহিঙ্গা ইস্যুতে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি তৈরি করেছে। এখন রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান বাংলাদেশের হাতে নেই, আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।

গণ অধিকার পরিষদের (নুরুল-রাশেদ) সভাপতি নুরুল হক বলেন, রোহিঙ্গা সংকট বিষয়ে বড় প্রতিবেশী দেশ, আসিয়ানভুক্ত দেশগুলো কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না।

লেখক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক জাহেদ উর রহমান বলেন, বাংলাদেশ রোহিঙ্গা সমস্যা দ্বিপক্ষীয়ভাবে সমাধান করতে চাচ্ছে। ফলে মিয়ানমার সরকারের ওপর চাপ কমে গেছে। এখন আলোচনা ও সমাধান মিয়ানমার ঠিক যেভাবে চাচ্ছে, সেভাবেই হচ্ছে। মিয়ানমার রোহিঙ্গা সমস্যার ব্যাপকতাই স্বীকার করে না। ভারত, চীন, রাশিয়ার মতো দেশ রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশের পক্ষে নেই।

মূল প্রবন্ধে রোহিঙ্গা সমস্যা কার্যকরভাবে সমাধানে বেশ কিছু দিকনির্দেশনা তুলে ধরা হয়। এর মধ্যে রয়েছে সংকট মোকাবিলায় জাতিসংঘ এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে সম্পৃক্ততা বাড়ানো, জাতিসংঘের স্বাধীন আন্তর্জাতিক ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশনের (এফএফএম) প্রতিবেদন অনুসারে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে মিয়ানমারের অপরাধকে গণহত্যা ও মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ বলে সংজ্ঞায়িত করা।

বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদের সঞ্চালনায় সেমিনারে আরও বক্তব্য দেন বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম, বিএনপির ঢাকা দক্ষিণের আহ্বায়ক আবদুস সালাম, সাবেক কূটনীতিক ইফতেখারুল করিম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক এম শাহিদুজ্জামান প্রমুখ। সেমিনারে যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, জাপান, জার্মানি, নেদারল্যান্ডসসহ ১৫টি দেশের প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন বলে বিএনপি জানায়।