অভিমত
ভোটের পর আওয়ামী লীগের কার্যক্রমের ওপর নির্ভর করবে ভবিষ্যৎ রাজনীতি
রোববার দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের ভোট গ্রহণ। এতে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও তাদের জোটের শরিক মিত্ররা এখন ভোটে। অন্যদিকে ক্ষমতাসীন দলের প্রধান রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ বিএনপি ও আন্দোলনে থাকা অন্য দলগুলো ভোট বর্জন করেছে। নির্বাচন ও চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে অভিমত প্রকাশ করা হলো
এই নির্বাচন গণতান্ত্রিক নির্বাচনের সংজ্ঞায় পড়ে না। সংজ্ঞানুযায়ী গণতান্ত্রিক নির্বাচন হচ্ছে, বিকল্প থেকে বেছে নেওয়া। যেখানে ভিন্ন দল, ভিন্ন মত, ভিন্ন আদর্শ থেকে বেছে নেওয়ার সুযোগ থাকে। এখানে যেটা হচ্ছে, তা অনেকটাই একদলীয় বিষয়। এখানে আওয়ামী লীগ ও তার দলীয় প্রার্থী এবং তাদের অনুগত-বিশ্বস্তদের মধ্যে প্রতিযোগিতা হচ্ছে। তাই একে গণতান্ত্রিক নির্বাচন বলা যায় না। গণতন্ত্র মানে বহুদলীয় গণতন্ত্র। যেখানে কারা জিতবে তা ফলাফল ঘোষণার আগ পর্যন্ত জানা যায় না, যেখানে ভোটের ফলাফলে ক্ষমতার পরিবর্তনের সুযোগ থাকে। এখন যেটা হচ্ছে তা একধরনের অভিনব ভোটের অনুশীলন।
ভোটারদের অংশগ্রহণ মানেই অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন নয়। কতজন ভোট দিলেন তা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নয়। বিকল্পগুলো যথার্থ কি না, ভিন্ন দল, মতের প্রার্থী আছেন কি না, সেটিই গুরুত্বপূর্ণ।
আওয়ামী লীগের ভোটার টানার বিষয়টা কতটা কাজ করবে, সেটি দেখার বিষয়। যেখানে ঘোষণার আগ পর্যন্ত নির্বাচনের ফলাফলে অনিশ্চয়তা থাকে, যথার্থ বিকল্পদের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয় এবং ক্ষমতা রদবদলের সুযোগ থাকে, সেখানেই ভোটারদের আগ্রহ থাকে। কারণ, ভোটারেরা মনে করেন, তাঁদের ভোটের ওপর ফলাফল নির্ভর করবে এবং তাঁদের ভোটটা গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু এবার তো সেই অর্থে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হচ্ছে না। তবুও হয়তো উল্লেখযোগ্য ভোটার উপস্থিতি থাকবে। এ লক্ষ্যে অনেকগুলো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। ক্ষমতাসীনদের উল্লেখযোগ্য সমর্থক আছে, বিভিন্ন জায়গায় চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছে। সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির বিভিন্ন সেবা নেওয়া ব্যক্তিদের নানাভাবে হুমকি দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া কিছু ভোটার হয়তো যেতে পারেন এটা প্রমাণ করার জন্য যে তারা বিরোধী পক্ষের নয়। কারণ, ভবিষ্যতে যেন মাশুল না দিতে হয়।
অন্যদিকে ক্ষমতাসীনদের নেতা-কর্মীরা যদি একজন করেও ভোটার ভোটকেন্দ্রে আনেন, তাহলেও ভোটার উপস্থিতি বাড়তে পারে। তবে ভোটার উপস্থিতির ওপর গণতান্ত্রিক নির্বাচন নির্ভর করে না। আমাদের আইনে একজন ভোটার ভোট দিলেও নির্বাচন বৈধ।
সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা হচ্ছে সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করা। কিন্তু এটা কি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন? এক দল, এক মত, একই জোটভুক্ত ও অনুগতদের মধ্যে নির্বাচন হচ্ছে। নির্বাচন কমিশন যতই সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের কথা বলুক, এতে তাদের সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা পূরণ হবে না।
এই নির্বাচনের পর দেশের রাজনীতির কী হবে ভবিষ্যৎই বলে দেবে। এটা নির্ভর করবে আওয়ামী লীগের ওপর। কারণ, তারাই আবার সরকার গঠন করবে। সামনে অনেকগুলো চ্যালেঞ্জ—অকার্যকর গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা, প্রতিদ্বন্দ্বিতাহীন নির্বাচন, সুশাসনের অভাব, দুর্নীতি, দুর্বৃত্তায়ন, মানবাধিকার লঙ্ঘন, আইনের শাসনের ঘাটতি ও সংঘাতময় রাজনীতি। এসবের ব্যাপারে ক্ষমতাসীনরা কী করবেন, তাদের নীতি ও কার্যক্রম কেমন হবে, সেসবের ওপর নির্ভর করবে আগামী দিনের রাজনীতি।