কমিটি দিচ্ছে বিএনপি, নতুন করে প্রকাশ্যে আসছে বিরোধও

৫ আগস্টের গণ-অভ্যুত্থান–পরবর্তী রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে দলকে সংগঠিত করার লক্ষ্যে নতুন করে বিভিন্ন জেলা ও থানায় কমিটি দিচ্ছে বিএনপি। গত এক সপ্তাহে অন্তত ১৯টি জেলায় আহ্বায়ক ও পূর্ণাঙ্গ কমিটি দেওয়া হয়েছে। তবে কমিটি গঠন নিয়ে অন্তর্বিরোধও নতুন করে সামনে আসছে। ইতিমধ্যে কমিটি নিয়ে পিরোজপুর, সাতক্ষীরায় পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও সংঘর্ষ হয়েছে। সাতক্ষীরার কালীগঞ্জ, আশাশুনি ও দেবহাটায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে প্রশাসনকে ১৪৪ ধারা জারি করতে হয়েছে।

এ পরিস্থিতিতে গত রোববার রাতে সাতক্ষীরার সব পৌরসভা, উপজেলা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড কমিটি গঠনের কার্যক্রম স্থগিতের ঘোষণা দেয় বিএনপি। এর কয়েক ঘণ্টা আগে ছয় সদস্যের জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এবার কমিটিতে বিভিন্ন জেলার শীর্ষ পদে ছাত্রদল ও যুবদলের সাবেক নেতাদের আনা হচ্ছে। যাঁদের রাজনীতি ছাত্রদল দিয়ে শুরু, তাঁদের প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে। এ কারণে বিভিন্ন জেলায় সাবেক নেতাদের সঙ্গে বিরোধ প্রকাশ্যে আসছে বলে মনে করছেন কেউ কেউ।

কেন্দ্র থেকে কমিটি দেওয়া হয়েছে। সদস্যদের দিয়ে নেতা নির্বাচন হয়নি। এবার আমরা ওয়ার্ড থেকে জেলা পর্যন্ত নির্বাচনের মাধ্যমে কমিটি গঠনের চেষ্টা করছি।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু

অবশ্য বিষয়টি স্বাভাবিকভাবে দেখছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় দপ্তরের দায়িত্বে থাকা জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। গতকাল সোমবার তিনি প্রথম আলোকে বলেন, বিএনপি একটি বড় দল। বিগত ১৫ বছর নেতা-কর্মীরা নানাভাবে নির্যাতিত। এখন কমিটি দেওয়ার পর কে পদ পেল, কে পেল না, কে কীভাবে পদ পেল, এগুলো নিয়ে একটি বড় দলে নানা মত-আলোচনা থাকবে।

সর্বশেষ রোববার ১৩ জেলায় আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করে বিএনপি। এগুলো হলো মেহেরপুর, কুড়িগ্রাম, মাগুরা, নাটোর, বান্দরবান, চট্টগ্রাম দক্ষিণ, মানিকগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর, নোয়াখালী, সাতক্ষীরা ও কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা। এর মধ্যে আফরোজা খানকে আহ্বায়ক করে মানিকগঞ্জ জেলার সাত সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি; মিজানুর রহমান সিনহাকে আহ্বায়ক ও মহিউদ্দিন আহমেদকে সদস্যসচিব করে মুন্সিগঞ্জ জেলা কমিটি; মামুন মাহমুদকে আহ্বায়ক করে নারায়ণগঞ্জ জেলার পাঁচ সদস্যের কমিটি; ফজলুল হক মিলনকে আহ্বায়ক করে গাজীপুর জেলার তিন সদস্যের কমিটি; মাহবুব আলমগীরকে আহ্বায়ক ও হারুনুর রশিদকে সদস্যসচিব করে নোয়াখালী জেলার পাঁচ সদস্যের কমিটি এবং জাকারিয়া তাহের সুমনকে আহ্বায়ক ও আশিকুর রহমান মাহমুদ ওয়াসিমকে সদস্যসচিব করে কুমিল্লা দক্ষিণ জেলার পাঁচ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া আমিরুল ইসলাম খানকে আহ্বায়ক করে ১৮ সদস্যের সিরাজগঞ্জ জেলা বিএনপির সম্মেলন প্রস্তুত কমিটি করা হয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এবার কমিটিতে বিভিন্ন জেলার শীর্ষ পদে ছাত্রদল ও যুবদলের সাবেক নেতাদের আনা হচ্ছে। যাঁদের রাজনীতি ছাত্রদল দিয়ে শুরু, তাঁদের প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে। এ কারণে বিভিন্ন জেলায় সাবেক নেতাদের সঙ্গে বিরোধ প্রকাশ্যে আসছে বলে মনে করছেন কেউ কেউ।

শুরু থেকে বিভক্তি

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, নতুন কমিটি গঠনের প্রক্রিয়া শুরু হতেই বিভিন্ন জেলা ও উপজেলায় স্থানীয় নেতাদের মধ্যে বিভক্তি প্রকাশ্যে আসছে। কুষ্টিয়ায় এক পক্ষ আরেক পক্ষের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগ তুলেছে। কুষ্টিয়া জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি বাতিলের দাবিতে অনুষ্ঠিত বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে নেতাদের চাঁদাবাজির কারণে কুষ্টিয়ার খাজানগর মোকামে চালের দাম বাড়ছে বলেও অভিযোগ করেছেন দলের একাংশের নেতারা। আর মেহেরপুর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটিতে আওয়ামী লীগের দোসরদের রাখার অভিযোগ তুলে কমিটি পুনর্বিবেচনার দাবিতে গণমিছিল করেছে সদর উপজেলা বিএনপি। কুমিল্লার নাঙ্গলকোটে বিএনপির একটি পক্ষের হামলায় সেলিম ভূঁইয়া (৪৫) নামের স্বেচ্ছাসেবক দলের এক নেতাকে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ উঠেছে।

এ ছাড়া ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার চার ইউনিয়নের সম্মেলন স্থগিতের প্রতিবাদে হরতাল ডাকে স্থানীয় বিএনপি। নাটোরে জেলা বিএনপির নতুন আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণার পর বিক্ষোভ মিছিল–সমাবেশ করে গণপদত্যাগের হুমকি দিয়েছেন পদবঞ্চিত নেতারা। ঝালকাঠি জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে সাবেক ও বর্তমান নেতাদের দ্বন্দ্বও দেখা দিয়েছে। একইভাবে বরগুনার পাথরঘাটা, বগুড়ার ধুনট, বরগুনার পাথরঘাটা, কিশোরগঞ্জের হোসেনপুর উপজেলার গোবিন্দপুর ইউনিয়ন বিএনপির সম্মেলন বাতিল চেয়ে একাংশ বিক্ষোভ মিছিল করেছে।

বরিশাল বিভাগীয় সাংগঠনিক দায়িত্বে থাকা বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু গতকাল রাতে প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিএনপি বড় দল। দলে অনেক নেতা আছেন, আবার সবাই দলের নেতৃত্ব দিতে চান। কিন্তু সবাই তো আহ্বায়ক-সদস্যসচিব হবেন না। কেউ বাদ পড়ে গেলেই তাঁদের অনুসারীরা বিক্ষোভ করছেন।বিগত ১৫ বছরে আমরা কোথাও সম্মেলন করতে পারিনি। কেন্দ্র থেকে কমিটি দেওয়া হয়েছে। সদস্যদের দিয়ে নেতা নির্বাচন হয়নি। এবার আমরা ওয়ার্ড থেকে জেলা পর্যন্ত নির্বাচনের মাধ্যমে কমিটি গঠনের চেষ্টা করছি।’

[প্রতিবেদনে তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করেছেন সংশ্লিষ্ট এলাকার প্রথম আলোর প্রতিনিধিরা]