আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর যে সরকার গঠিত হবে, এর প্রধানমন্ত্রী হিসেবে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সম্ভাবনা বেশি দেখছেন মানুষ। আর প্রায় এক–চতুর্থাংশ মানুষ জামায়াতে ইসলামীর আমির শফিকুর রহমানের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার সম্ভাবনা দেখছেন।
প্রথম আলোর উদ্যোগে করা এক জরিপে মানুষের এই মতামত উঠে এসেছে। জরিপটি করেছে বেসরকারি গবেষণাপ্রতিষ্ঠান কিমেকারস কনসাল্টিং লিমিটেড। জরিপের শিরোনাম, ‘গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক-রাজনৈতিক বিষয়ে জাতীয় জনমত জরিপ ২০২৫’।
জরিপে একটি প্রশ্ন ছিল, বাংলাদেশের বিভিন্ন নেতার মধ্যে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর প্রধানমন্ত্রী হওয়ার সম্ভাবনা কার বেশি বলে মনে করেন? এ প্রশ্নের জবাবে সবচেয়ে বেশি সাড়ে ৪৭ শতাংশ মানুষ বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের পক্ষে মত দিয়েছেন।
তারেক রহমান কখনো কোনো সংসদ নির্বাচনে অংশ নেননি। ২০০৮ সাল থেকে যুক্তরাজ্যে নির্বাসিত জীবন কাটাচ্ছেন। যদিও খালেদা জিয়া কারাগারে থাকার সময় এবং তিনি অসুস্থ থাকায় তারেক রহমানই দল পরিচালনা করছেন। বিএনপি আগামী নির্বাচনে জয়ী হলে তারেক রহমানকেই পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী করা হবে, দলটির নেতারাও তা বলছেন।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার প্রধানমন্ত্রী হওয়ার সম্ভাবনা, এমন মত প্রায় ১৯ শতাংশ মানুষের। তবে তিনি দীর্ঘদিন অসুস্থ। বর্তমানে হাসপাতালে ভর্তি এই নেত্রীর অবস্থা সংকটাপন্ন। খালেদা জিয়া এর আগে তিনবার দেশের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছেন। দুবার ছিলেন সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা।
খালেদা জিয়া অথবা তারেক রহমান প্রধানমন্ত্রী হওয়ার সম্ভাবনা নিয়ে জরিপে যে মত এসেছে, দুটি যোগ করলে ৬৬ শতাংশের কিছু বেশি হয়।
অন্যদিকে জামায়াতের আমির শফিকুর রহমানের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার সম্ভাবনা মনে করেন ২৫ দশমিক ৪ শতাংশ মানুষ। তিনি অতীতে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিয়ে জয়ী হতে পারেননি।
জুলাই গণ–অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা টানা সাড়ে ১৫ বছর ক্ষমতায় ছিলেন। তিনি পাঁচবার প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন, কিন্তু গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হয়ে তিনি ভারতে চলে যান। রাজনৈতিক ভাষ্যকারদের অনেকে মনে করেন, বয়স, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের দেওয়া মৃত্যুদণ্ডের রায়সহ সার্বিক বিবেচনায় শেখ হাসিনার রাজনীতিতে ফেরা কঠিন। তবে জরিপে ৭ শতাংশের কিছু বেশি মানুষ বলেছেন, শেখ হাসিনার পরবর্তী নির্বাচনের পর প্রধানমন্ত্রী হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে (উল্লেখ্য, জুলাই গণ–অভ্যুত্থানে হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে শেখ হাসিনার সাজা হওয়ার আগে জরিপের তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে)।
এর বাইরে শূন্য দশমিক ৬ শতাংশ মানুষ জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম এবং শূন্য দশমিক ২ শতাংশ মানুষ জাতীয় পার্টির (জাপা) চেয়ারম্যান জি এম কাদের পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী হওয়ার সম্ভাবনা দেখেন।
জরিপে দেশের ৫টি নগর ও ৫টি গ্রাম বা আধা শহরাঞ্চলের প্রাপ্তবয়স্ক (১৮-৫৫ বছর) ১ হাজার ৩৪২ জনের মতামত নেওয়া হয়। এর মধ্যে পুরুষ ৬৭৪ জন, নারী ৬৬৮ জন। জরিপে অংশ নেওয়া মানুষেরা বিভিন্ন আয়, শ্রেণি ও পেশার। গত ২১ থেকে ২৮ অক্টোবর জরিপের তথ্য সংগ্রহ করা হয়।
জরিপকারী প্রতিষ্ঠান বলেছে, এটি একটি মতামত জরিপ। এটা দেশের প্রতিনিধিত্বমূলক জরিপ, তবে নির্দিষ্টভাবে কোনো নির্বাচনী এলাকার প্রতিনিধিত্ব করে না। জরিপের নমুনা এমন মানুষদেরই তুলে ধরেছে, যাঁরা অনলাইন অথবা ছাপা পত্রিকা পড়তে পারেন এবং আগামী নির্বাচনে ভোট দেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। জরিপের ফলাফলের নির্ভরযোগ্যতার (কনফিডেন্স লেভেল) মাত্রা ৯৯ শতাংশ।
কে প্রধানমন্ত্রী হলে দেশের ভালো
জরিপের আরেকটি প্রশ্ন ছিল, ‘বাংলাদেশের বিভিন্ন নেতার মধ্যে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর কে প্রধানমন্ত্রী হলে দেশের জন্য সবচেয়ে ভালো হবে?’ উত্তরে প্রায় ৩৭ শতাংশ মানুষের মত, তারেক রহমান প্রধানমন্ত্রী হলে দেশের জন্য ভালো হবে। জামায়াতের আমির শফিকুর রহমানের পক্ষে মত দিয়েছেন প্রায় ৩২ শতাংশ মানুষ।
জরিপে অংশ নেওয়া প্রায় ২১ শতাংশ মানুষ মনে করেন, খালেদা জিয়া পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী হলে দেশের জন্য ভালো হবে। শেখ হাসিনার বেলায় এই সমর্থন ৮ দশমিক ৬ শতাংশ। নাহিদ ইসলাম প্রধানমন্ত্রী হলে ভালো হবে বলে মনে করেন শূন্য দশমিক ৭ শতাংশ মানুষ।
জরিপে অংশ নেওয়া শূন্য দশমিক ৭ শতাংশ মানুষ মনে করেন, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী হলে দেশের ভালো হবে।