দলীয় প্রতীকে উপজেলা ভোটে মাত্র ৪টি দল

নির্বাচন কমিশনে (ইসি) নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল আছে ৪৪টি। এর মধ্যে এবারের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে এখন পর্যন্ত চেয়ারম্যান পদে দলীয় প্রতীকে প্রার্থী দিয়েছে মাত্র চারটি দল। প্রথম ও দ্বিতীয় ধাপ মিলিয়ে জাতীয় পার্টি, জেপি, জাসদ ও ওয়ার্কার্স পার্টি—এই চারটি দলের মোট ৯ জন দলীয় প্রতীকে প্রার্থী আছেন।

তবে প্রধান দুই দল এবার রাজনৈতিক বা দলগতভাবে ভোটের মাঠে নেই। বিরোধী দল বিএনপি সংসদ নির্বাচনের মতো উপজেলা নির্বাচনও বর্জন করেছে। ফলে এই নির্বাচনে ‘ধানের শীষ’ প্রতীক নেই। অবশ্য দলটির অনেক নেতা স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন। দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করে প্রার্থী হওয়ায় এ পর্যন্ত ৭৬ জনকে দল থেকে বহিষ্কার করেছে বিএনপি। দলটির সঙ্গে আন্দোলনে থাকা অন্য দলগুলোও উপজেলা ভোটে অংশ নিচ্ছে না।

অন্যদিকে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ এবার দলীয় প্রতীকে নির্বাচন করছে না। তাদের রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির অনুপস্থিতিতে নির্বাচনকে প্রতিযোগিতামূলক করতে ও দলের তৃণমূলের বিভেদ নিরসনে তারা এই কৌশল নিয়েছে। প্রায় সব উপজেলাতেই আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন। মন্ত্রী–সংসদ সদস্যদের সন্তান–স্বজনেরাও অনেক জায়গায় প্রার্থী হয়েছেন। আওয়ামী লীগও মন্ত্রী-সংসদ সদস্যদের হস্তক্ষেপ ঠেকাতে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়ার হুমকি দিয়ে আসছে।

এবারের উপজেলা নির্বাচনে যেহেতু ‘নৌকা’ এবং ‘ধানের শীষ’ প্রতীক নেই, ফলে দলগতভাবে ভোটের সেই রাজনৈতিক আমেজ নেই। যদিও দলীয় প্রতীক না দেওয়ায় প্রতিটি উপজেলায় দলের একাধিক প্রার্থী থাকায় আওয়ামী লীগের প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগই বলা হচ্ছে।

এমন পটভূমিতেও চারটি দল এই ভোটে অংশ নিচ্ছে। নির্বাচন কমিশন সূত্র জানায়, প্রথম ধাপে দলীয় প্রতীকে মাত্র একটি মনোনয়নপত্র জমা পড়েছে। সেটি দিয়েছে সংসদে প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টির। এর বাইরে দ্বিতীয় ধাপে দলটির চারজন দলীয় প্রতীক ‘লাঙ্গল’ নিয়ে প্রার্থী রয়েছেন। এ ছাড়া আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলের শরিক জাতীয় পার্টির (জেপি) দুজন, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) একজন এবং ওয়ার্কার্স পার্টির একজন দলীয় প্রতীকে প্রার্থী হয়েছেন দ্বিতীয় ধাপের নির্বাচনে।

জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তিন মাসের মাথায় সারা দেশে স্থানীয় সরকারের এই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। ২০১৫ সালে আইন সংশোধন করে চেয়ারম্যান পদে দলীয় প্রতীকে প্রার্থী দেওয়ার বিধান যুক্ত করা হয়। ২০১৭ সালে প্রথমবারের মতো দলীয় প্রতীকে স্থানীয় সরকারের এই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এখনো আইনে দলীয় প্রতীকে নির্বাচনের বিধান আছে। কিন্তু এবার আওয়ামী লীগ দলীয় প্রতীক দেয়নি। আর বিএনপি বর্জন করছে এই ভোট।

এবার চার ধাপে কমবেশি ৪৮০টি উপজেলা পরিষদ নির্বাচন হচ্ছে। ইতিমধ্যে প্রথম ও দ্বিতীয় ধাপের নির্বাচনের মনোনয়নপত্র দাখিলের সময় শেষ হয়েছে। প্রথম ধাপের প্রচার চলছে। এই ধাপে ১৪৭টি উপজেলায় ভোট হবে আগামী ৮ মে। দ্বিতীয় ধাপে ১৬১টি উপজেলায় হবে ২১ মে। তৃতীয় ধাপে ১২৯টি উপজেলায় ২৯ মে এবং চতুর্থ ধাপে ৫৫টি উপজেলায় ভোট হবে আগামী ৫ জুন। তৃতীয় ও চতুর্থ ধাপের নির্বাচনে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার এখনো সময় আছে।

গত ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচন বিএনপি বর্জন করায় ওই নির্বাচনে দলীয় নেতাদের স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে উৎসাহ দিয়েছিল আওয়ামী লীগ। নির্বাচনে অংশ নিয়েছিল মোট ২৮টি দল। এর মধ্যে আওয়ামী লীগ থেকে ২২৪ জন জয় পান। স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য জয় পান ৬২ জন, তাঁদের মধ্যে ৬০ জনই আওয়ামী লীগের নেতা। এর বাইরে জাতীয় পার্টি থেকে জয় পেয়েছিলেন ১১ জন। এই আসনগুলোয় আওয়ামী লীগের সঙ্গে জাতীয় পার্টির সমঝোতা হয়েছিল। নৌকা নিয়ে নির্বাচন করে একটি করে আসন পেয়েছিল জাসদ ও ওয়ার্কার্স পার্টি। আরেকটি আসন পেয়েছিল কল্যাণ পার্টি।