তৃণমূল বিএনপিতে যোগ দিচ্ছেন তৈমুর আলম খন্দকার ও সমশের মবিন চৌধুরী

তৈমুর আলম খন্দকার (বাঁয়ে) ও সমশের মবিন চৌধুরী
ফাইল ছবি

প্রয়াত নাজমুল হুদার দল তৃণমূল বিএনপিতে যোগ দিচ্ছেন বিএনপির সাবেক দুই নেতা তৈমুর আলম খন্দকার ও সমশের মবিন চৌধুরী। তাঁরা তৃণমূল বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্বে আসছেন, এমন আলোচনাও রাজনৈতিক অঙ্গনে রয়েছে।

বিএনপির সাবেক দুই নেতার তৃণমূল বিএনপিতে যোগ দিতে যাওয়ার বিষয়টি প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেছেন দলটির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব শেখ হাবিবুর রহমান। বিষয়টি অস্বীকার করেননি তৈমুর আলম খন্দকারও।

তৃণমূল বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব শেখ হাবিবুর রহমান আজ রোববার রাতে মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, শুধু সমশের মবিন বা তৈমুর আলম খন্দকারই নন, বিএনপির সাবেক নেতাদের আরও অনেকে তাঁদের দলে যোগ দেবেন। ১৯ সেপ্টেম্বর (মঙ্গলবার) ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে দলের কাউন্সিল হবে।

ওই দুই নেতা তৃণমূল বিএনপির নেতৃত্বে আসছেন কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে শেখ হাবিবুর রহমান বলেন, আলোচনা চলছে। কাউন্সিলে সিদ্ধান্ত হবে। আর কারা কারা যোগ দিচ্ছেন—এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এখন সবার নাম তাঁরা প্রকাশ করতে চান না। তবে অনেকে যোগ দেবেন, আলোচনা চলছে।

তৃণমূল বিএনপি নির্বাচন কমিশনে (ইসি) নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর একটি। দলটির প্রতীক সোনালি আঁশ। ইসিতে নিবন্ধিত হওয়ায় আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নিজেদের প্রতীকে ভোট করতে পারবে দলটি। আগামী ডিসেম্বরের শেষে বা আগামী বছরের জানুয়ারিতে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।

তৃণমূল বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা নাজমুল হুদা। তিনি ১৯৯১ ও ২০০১ সালে দুই দফায় খালেদা জিয়ার সরকারে মন্ত্রী ছিলেন। তবে ২০১২ সালে বিএনপির সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে বিএনএফ নামে নতুন দল গঠন করেন। পরে সেই দল থেকে তাঁকে বহিষ্কার করেন দলটির প্রধান সমন্বয়ক আবুল কালাম আজাদ। এরপর বাংলাদেশ ন্যাশনাল অ্যালায়েন্স (বিএনএ) এবং বাংলাদেশ মানবাধিকার পার্টি (বিএমপি) নামে দুটি নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করেন নাজমুল হুদা। এরপর ‘তৃণমূল বিএনপি’ গঠন করেন তিনি।

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে তৃণমূল বিএনপি নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধনের জন্য আবেদন করে। কমিশন তখন তাদের নিবন্ধন দেয়নি। পরে দলটি আদালতের দ্বারস্থ হয়। উচ্চ আদালতের নির্দেশে গত ফেব্রুয়ারিতে তৃণমূল বিএনপিকে নিবন্ধন দেয় ইসি। নিবন্ধন পাওয়ার কয়েক দিনের মাথায় নাজমুল হুদা মারা যান। এখন দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন নাজমুল হুদার মেয়ে অন্তরা সেলিমা হুদা।

তৈমুর আলম খন্দকার প্রথম আলোকে বলেন, তিনি বিএনপির দুঃসময়ে ছিলেন। এখন বিএনপির সুসময়। বিএনপি মনে করে তাঁকে দলের আর দরকার নেই। তাই তিনি তৃণমূল বিএনপিতে যাচ্ছেন। তাঁর সঙ্গে সমশের মবিন চৌধুরীও যোগ দিচ্ছেন।

বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময় পররাষ্ট্রসচিব ছিলেন সমশের মবিন চৌধুরী। তিনি যুক্তরাষ্ট্রসহ কয়েকটি দেশে রাষ্ট্রদূতের দায়িত্বও পালন করেছেন। সরকারি চাকরি থেকে অবসরের পর ২০০৮ সালে তিনি বিএনপিতে যোগ দেন। দলটির ভাইস চেয়ারম্যান পদে আসেন ২০০৯ সালে। বিএনপির হয়ে বিদেশি কূটনীতিকদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষার দায়িত্ব পালন করতেন তিনি। ২০১৪ সালের একতরফা জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর ২০১৫ সালের ২৮ অক্টোবর বিএনপি থেকে পদত্যাগ করেন সমশের মবিন চৌধুরী। তখন তিনি রাজনীতি থেকে অবসরে যাওয়ার কথাও বলেছিলেন। তবে এর তিন বছর পর ২০১৮ সালে তিনি বিকল্পধারা বাংলাদেশে যোগ দিয়েছিলেন। আগামী জাতীয় নির্বাচনের মাত্র সাড়ে তিন মাস আগে তৃণমূল বিএনপিতে যোগ দিতে যাচ্ছেন তিনি।

তৃণমূল বিএনপিতে যোগ দেওয়ার বিষয়ে আজ রাতে প্রথম আলো মুঠোফোনে যোগাযোগ করে সমশের মবিন চৌধুরীর সঙ্গে। তবে তিনি তৃণমূল বিএনপিতে যোগ দেওয়া নিয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

অন্যদিকে আইনজীবী তৈমুর আলম খন্দকার ১৯৯৬ সালে বিএনপিতে যোগ দেন। তিনি নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ছাড়াও মহানগর বিএনপির নেতৃত্বে ছিলেন। বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টার পদও পেয়েছিলেন তিনি। ২০১১ সালে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে তিনি ছিলেন বিএনপির প্রার্থী। শেষ মুহূর্তে দলের সিদ্ধান্তে প্রার্থিতা প্রত্যাহারের ঘোষণা দিয়ে দেশব্যাপী তখন আলোচনায় এসেছিলেন।

শুধু সমশের মবিন বা তৈমুর আলম খন্দকারই নন, বিএনপির সাবেক নেতাদের আরও অনেকে তাঁদের দলে যোগ দেবেন।
শেখ হাবিবুর রহমান, তৃণমূল বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব

তবে বিএনপি নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিলেও ২০২২ সালে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী হন খন্দকার তৈমুর আলম। তাঁরা এই সিদ্ধান্তের কারণে গত বছরের জানুয়ারিতে তৈমুর আলমকে দল থেকে বহিষ্কার করে বিএনপি।

তৈমুর আলম খন্দকার আজ রাতে মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, তিনি বিএনপির দুঃসময়ে ছিলেন। এখন বিএনপির সুসময়। বিএনপি মনে করে তাঁকে দলের আর দরকার নেই। তাই তিনি তৃণমূল বিএনপিতে যাচ্ছেন। তাঁর সঙ্গে সমশের মবিন চৌধুরীও যোগ দিচ্ছেন। ভারতের কংগ্রেস ছেড়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তৃণমূল কংগ্রেস গঠনের কথা উল্লেখ করে তৈমুর আলম খন্দকার বলেন, তৃণমূল বিএনপি নামটি তাঁর পছন্দ হয়েছে, এটিও নতুন দলে যাওয়ার একটি কারণ।

সমশের মবিন ও তিনি তৃণমূল বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্বে যাচ্ছেন কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে তৈমুর আলম খন্দকার বলেন, এমন আলোচনা আছে। কাউন্সিলে সিদ্ধান্ত হবে।
২০১৪ সালের নির্বাচনের আগে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর অভিযোগ করেছিলেন, দল ভাঙার চেষ্টা করছে সরকার। এরপর বিভিন্ন সময় এই অভিযোগ এসেছে। সম্প্রতি ইসিতে নতুন দল নিবন্ধনের সময় বিএনপি ভাঙার বিষয়টি আবার আলোচনায় আসে। বিএনএম ও বিএসপি নামে দুটি অখ্যাত দলকে নিবন্ধন দেয় ইসি। বিএনএমের মূল নেতৃত্বে রয়েছেন বিএনপির সাবেক দুই নেতা। এই দল গঠনের পেছনে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে সরকারের কোনো ‘ষড়যন্ত্র’ থাকতে পারে, এমন অভিযোগ তখন করেছিলেন বিএনপির নীতিনির্ধারকেরা।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় আজ রাতে মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, যাঁদের কোনো রাজনৈতিক আদর্শ নেই, তাঁদের কিছুই নেই। বিএনপির জন্মলগ্ন থেকে বহুবার দল ভাঙার চেষ্টা হয়েছে; কিন্তু তাতে বিএনপির কিছু হয়নি। যাঁরা বিএনপিকে ভাঙতে চেয়েছিলেন, তাঁরা নিজেরাই ভেঙে পড়েছেন।