আ.লীগের প্রতিদ্বন্দ্বী জাপা না অন্য কেউ

জাতীয় পার্টি ও ধর্মভিত্তিক দল ইসলামী আন্দোলন ছাড়া অধিকাংশ দলই নিরুৎসাহী।

আওয়ামী লীগ লোগো

বিএনপি অংশ না নিলে পাঁচ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী কে হবে, তা এখনো নিশ্চিত নয়। জাতীয় নির্বাচনের প্রাক্কালে অনুষ্ঠেয় এই নির্বাচন নিয়ে এখন পর্যন্ত সংসদের প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টি (জাপা) ও ইসলামী আন্দোলন ছাড়া ধর্মভিত্তিক বেশিরভাগ দলই নিরুৎসাহী। এর মধ্যে চারটি ইসলামি দল নির্বাচনে অংশ নেওয়া না নেওয়ার প্রশ্নে এখনো সিদ্ধান্তই নেয়নি।

আগামী মে ও জুন মাসে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে দেশের পাঁচটি সিটি করপোরেশনের নির্বাচন। নির্বাচন কমিশনের ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, আগামী ২৫ মে গাজীপুর সিটি করপোরেশনে ভোট হবে। এরপর ১২ জুন খুলনা ও বরিশালে; ২১ জুন রাজশাহী ও সিলেট সিটি করপোরেশনে নির্বাচন হবে। ইতিমধ্যে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ মেয়র পদে দলীয় প্রার্থী বাছাইয়ে ফরম বিক্রি ও জমা নেওয়া শেষ করেছে। পাঁচ সিটিতে দলটির ৪১ জন মেয়র পদে প্রার্থী হতে দলীয় ফরম জমা দিয়েছেন।

জাতীয় পার্টির দায়িত্বশীল নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সিটি নির্বাচনে জাপার অংশগ্রহণ নিশ্চিত হলেও পাঁচ সিটিতেই অংশ নেবে কি না, সেটি এখনো চূড়ান্ত নয়। তা ছাড়া দলটি এখন পর্যন্ত প্রার্থী মনোনয়নের প্রক্রিয়াও সম্পন্ন করেনি। দলটির নেতারা বলেছেন, জাতীয় নির্বাচনের আগে অনুষ্ঠেয় এই নির্বাচন নিয়ে নানা কারণে জাপার শীর্ষ নেতৃত্বের আগ্রহ কম। তবু অংশগ্রহণ দেখানোর জন্যই তাঁরা নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। এর কারণ হিসেবে সংশ্লিষ্ট নেতারা জানিয়েছেন, প্রথমত, দলে জেতার মতো মেয়র প্রার্থী নেই। এ ছাড়া সুষ্ঠু নির্বাচনের ব্যাপারে আস্থার অভাব রয়েছে।

জাপা সূত্র জানিয়েছে, খুলনা ছাড়া অন্য চার সিটিতে তাদের প্রার্থিতা মোটামুটি নিশ্চিত। এর মধ্যে গাজীপুরে জাপার সম্ভাব্য প্রার্থী এম এম নিয়াজ উদ্দিন। তিনি দলের গাজীপুর মহানগর কমিটির সভাপতি। এ ছাড়া সিলেটে মহানগর জাপার আহ্বায়ক নজরুল ইসলাম, বরিশালে মহানগর জাপার সদস্যসচিব ইকবাল হোসেন ও রাজশাহীতে মহানগর জাপার আহ্বায়ক সাইফুল ইসলাম সম্ভাব্য প্রার্থী।

জাপার চেয়ারম্যান জি এম কাদের প্রথম আলোকে বলেন, তাঁরা নির্বাচনে অংশ নেবেন। শিগগিরই চার সিটিতে সম্ভাব্য প্রার্থীদের বাছাইপ্রক্রিয়া তাঁরা শুরু করবেন।

পাঁচ সিটিতেই ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী

জাপার বাইরে একমাত্র চরমোনাই পীরের নেতৃত্বাধীন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ পাঁচ সিটির নির্বাচনে প্রার্থী দেবে। ইতিমধ্যে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের নির্বাচনে গাজী আতাউর রহমানকে প্রার্থী ঘোষণা করে প্রচারণা শুরু করেছে। গাজী আতাউর দলের কেন্দ্রীয় জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব। এ ছাড়া খুলনায় কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির আবদুল আউয়াল ও বরিশালে দলের আমিরের ছোট ভাই সৈয়দ মুহাম্মদ আবুল খায়ের প্রার্থী হবেন। আবুল খায়ের ইসলামী আন্দোলনের কেন্দ্রীয় ছাত্র ও যুববিষয়ক সম্পাদক। তিনি চরমোনাই ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যানও ছিলেন।

ইসলামী আন্দোলন সূত্র জানিয়েছে, সিলেট সিটিতে বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাহমুদুল হাসান এবং রাজশাহীতে গতবারের প্রার্থী ও দলের মহানগর সভাপতি শফিকুল ইসলামকে প্রার্থী করা হতে পারে। মনোনয়নের প্রক্রিয়া শেষ করে শিগগিরই তাঁদের নাম ঘোষণা করা হবে বলে সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল নেতারা জানিয়েছেন।

গাজীপুরে ইসলামী আন্দোলনের মেয়র পদপ্রার্থী গাজী আতাউর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘মানুষ ভোট দিতে পারবে কি না, এটাই কথা। ভোট দিতে পারলে আশা করি ভালো কিছু হবে।’

ইসলামী আন্দোলন ২০১৮ সালেও গাজীপুরসহ বড় সিটি করপোরেশনগুলোর নির্বাচনে অংশ নিয়েছিল। দলটি বর্তমান সরকারের সময়ে সিটি করপোরেশন থেকে ইউনিয়ন পরিষদ—স্থানীয় সরকারব্যবস্থার সব পর্যায়ের নির্বাচনে অংশ নিয়েছে।

গত বছরের ডিসেম্বরে রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী ৫০ হাজারের কাছাকাছি ভোট পেয়েছিলেন। মেয়র পদে জয়ী হওয়া জাতীয় পার্টির প্রার্থীর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বীর অবস্থানে এসেছিল দলটি।

ধর্মভিত্তিক অন্য দলের আগ্রহ কম

ইসলামী আন্দোলন ছাড়া ধর্মভিত্তিক বিভিন্ন দলের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নির্বাচন কমিশনে (ইসি) নিবন্ধিত ছয়টি ধর্মভিত্তিক দল পাঁচ সিটির নির্বাচনের ব্যাপারে নিরুৎসাহী। দলগুলো হলো ইসলামী ঐক্যজোট (হাসানাত আমিনী), খেলাফত মজলিস (আহমদ আবদুল কাদের), বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস (ইসমাঈল নূরপুরী), খেলাফত আন্দোলন (আতাউল্লাহ হাফেজ্জী), জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম (যিয়াউদ্দিন) ও বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট (আবদুল মতিন)।

ইসলামী ফ্রন্টের চেয়ারম্যান এম এ মতিন প্রথম আলোকে বলেছেন, পাঁচ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অংশ নেওয়ার পরিকল্পনা নেই তাঁদের।

অন্যদিকে খেলাফত মজলিসের মহাসচিব আহমদ আবদুল কাদের বলেছেন, তাঁরা এখনো নির্বাচনের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেননি। জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের মহাসচিব মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দি জানিয়েছেন, তাঁদের প্রস্তুতি নেই। আর বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব জালালুদ্দিন আহমদ বলেন, ‘সিটি নির্বাচন নিয়ে আমাদের মধ্যে আলোচনা হয়নি। এর থেকে কি বোঝা যায় না যে আমরা নির্বাচনের ব্যাপারে কতটা আগ্রহী।’

ধর্মভিত্তিক এই দলগুলোর মধ্যে ইসলামী ঐক্যজোট ২০১৮ সালে গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে প্রার্থী দিয়েছিল। এ ছাড়া তারা স্থানীয় সরকারব্যবস্থার বিভিন্ন পর্যায়ের নির্বাচনে অংশ নিয়েছিল।

এদিকে বিএনপি জানিয়ে দিয়েছে যে তারা জাতীয় নির্বাচনের আগমুহূর্তে পাঁচ সিটি নির্বাচনে অংশ নেবে না। নির্দলীয় সরকারের দাবিতে আন্দোলনের অংশ হিসেবে বিএনপি বর্তমান সরকারের অধীন কোনো নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার অবস্থানে রয়েছে।

ধর্মভিত্তিক দলগুলোর মধ্যে বড় দল জামায়াতে ইসলামীও বর্তমান সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার অবস্থানে থেকে আসন্ন পাঁচ সিটির নির্বাচনে অংশ নেবে না বলে জানিয়েছে।

তবে শেষ পর্যন্ত বিএনপি তাদের অবস্থানে যদি অটল থাকে এবং তাদের দলছুট কেউ প্রার্থী না হন, তাহলে ভোটের মাঠে আওয়ামী লীগের প্রতিদ্বন্দ্বী হতে পারেন জাতীয় পার্টি বা ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থীরা। তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা বলছেন, এই প্রতিদ্বন্দ্বিতা সরকারি দলের কতটা ধারেকাছে যেতে পারবে, সেটাই দেখার বিষয়।